আমার দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে
একটা সময় ছিল যখন আমাদের নতুন যে কোন অনুষ্ঠান শুরুর জন্য আমি আমার দ্বিতীয় ক্যাম্পাসকেই বেঁছে নিতাম। জাতীয় পর্যায়ের গণিত অলিম্পিয়াডের শুরু ঐখান থেকে। বিডিওএসএনের ঢাকার বাইরে যাতায়াত, বুট ক্যাম্প, কোড স্প্রিন্ট সবই ঐ শাহজালাল ভার্সিটি থেকেই শুরু। আমার নিজের মাথায় কোন অদ্ভুত আইডিয়া আসলে সেটা ঐ জাফর স্যারকে বলা। এই যে দেশে এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মোবাইল ফোনে ভর্তির রেজিস্ট্রেশনের কাজটা করে, সেটাও ঐ শাবিপ্রবি থেকে শুরু।
অনেকেই আমার কাছে জানতে চায় – আমি শাবিপ্রবির কোন ব্যাচ!!!
তো, বেশ কিছুদিন আগে একবার আমার ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম, টিআইবির সঙ্গে মিলে বিডিওএসএনের একটা আয়োজনে। ইন্টারনেটে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কী করা যায় তার একটা বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ হল ‘টেইক ব্যাক দ্যা টেক’। মানে সোজা। প্রযুক্তি দিয়ে বদমাশরা যদি নারীর বিরুদ্ধে হয়রানী করে, তাহলে সেই প্রযুক্তিকেই ব্যবহার করতে হবে এই লড়াই-এ। প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকলে বরং ক্ষতি। বিশ্বের ৩৬টি দেশের মত আমাদের দেশেও এখন এই নিয়ে খুবই সীমিত আকারে কাজ করছি আমরা। আমাদের দেশ-সমন্বয়কের পরীক্ষা থাকায় কিছুদিন ধরে কাজকর্ম বন্ধ। তো, সেই কাজের একটা সেমিনার করেছিলাম সেবার।
অবশ্য সিলেট গিয়েছিলাম অন্য একটা কাজে। সিলেটের ওম্যান বিজনেজ ফোরামের একটা কর্মশালা পরিচালনা করতে। আমাদের দেশের মহিলাদের অনেকেই এখন ঘর থেকে বের হয়ে কিংবা ঘরে থেকে নানান উদ্যোগ নিচ্ছেন। তবে, বেশিরভাগই হয় বুটিং না হয় খাওয়া দাওয়ার। এর বাইরে গিয়ে নানান আয়োজনে ঋদ্ধ হওয়ার জন্য তাদের বলা। সেই সঙ্গে এটিও জানানো যে, তথ্য প্রযুক্তি তার উদ্যোক্তা জীবনকে সহজ করে দিতে পারে, ফেসবুকে মার্কেটিংটা সহজ, মোবাইলে ইচ্ছে করলে সাপ্লাই চেইনের ভালই দেখভাল করা যায়।
যাহোক, সেই মে মাসের পর আজ আবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবো। দেশের তরুনদের মধ্যে এপস বানানোর একটা সংস্কৃতি গেড়ে তোলার নানামুখী চেষ্টা হচছে। প্রতিযোগিতা, বুট ক্যাম্প ইত্যাদি নানান আয়োজন। অনেকগুলো প্রতিযোগিতা, মেন্টরিং হচ্ছে যার মধ্যে ইএটিএল প্রথম আলো এপস প্রতিযোগিতা অন্যতম। সেটির তৃতীয় আসর এবার।
এটি একটা লম্বা আয়োজন। প্রায় ৯ মাস ধরে চলে। প্রথমে সচেতনতা বাড়ানো, তারপর কনসেপ্ট জমা। তারপর ধাপে ধাপে বাছাই। সঙ্গ থাকে মেন্টরিং এবং গ্রুমিং সেশন। সবশেষে বড় অংকের নগদ পুরস্কার।
এবারের আয়োজনের এখন একটিভেশন চলছে। দেশে ছিলামনা বলে কোনটাতে যেতে পারিনি। আজ দুপুর দুইটায় শাবিপ্রবি’র মিনি অডিটরিয়ামে একটিভেশন। জাফর স্যার, ভিসি স্যার থাকার কথা। ঢাকা থেকে ইএটিলের লোকজন আর সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিবেরও যাওয়ার কথা। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আমারও যাওয়ার কথা রয়েছে। ঠিকঠাক থাকলে, ইনশাআল্লাহ সকালের ফ্লাইটে সেখানে যাবো। তারপর লাক্কাতুরা হয়ে ক্যাম্পাসে।
আইসিটি নিয়ে বিশ্ব্ব্যাপী যে মাতামাতি হয় সেটার অনেকগুলো কারণ আছে। আছে বলে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ দুই দুইবার শীর্ষ সামিট করেছে এই প্রযুক্তি নিয়ে। আর কোন প্রযুক্তি নিয়ে এমনটা হয়েছে বলে আমার জানা নাই। কেন?
একটা উদাহরণ দেই- স্বাধীনতার পর ৪২ বছরে আমাদের ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ হয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলার। আর কয়েকটা পোলা-পাইন মিলে হোয়াটস এপ নামের একটা ম্যাসেজিং এপ্লিকেশন বানিয়েছে। ফেসবুক সেটা কিনে নিয়েছে মাত্র ১৯ বিলিয়ন ডলারে!!!
আর একটা উদাহরণ দেই। আমাদের দেশে একটি বড় কর্পোরেট পরিবার, ৫০ বছরে এই পর্যন্ত ৪৫ হাজার চাকরির সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে মাত্র ৫ বছরের চেষ্টায় আমাদের দেশে মুক্তপেশাজীবীর সংখ্যা অর্ধলক্ষ ছাড়িয়েছে। (ও ভাল কথা। ২০০৭ সালে আমরা যখন দেশে ফ্রিল্যান্সিংকে জনপ্রিয় করার জন্য দেশব্যাপী দৌড়ঝাপ শুরু করি তখনও সেটা শাবি থেকে শুরু হয়েছিল। শাবি স্নাতক জাকারিয়া আমাদের একটা বুকলেট তৈরি করে দিয়েছিল যা নিয়ে আমরা সারাদেশে চষে বেড়াতাম)।
আমার ভ্যালু এডিশনের বেলায়ও আইসিটির দুর্দান্ত ক্ষমতা।
তবে, বিশ্ব বাজার দখল করতে গিয়ে আমরা আমাদের বাজারের অনেকখানি খুইয়েছি। কেন জানি না, দেশে একাউন্টিং সফটওয়্যারের বাজার ভারতীয় সফটওয়্যারের দখলে। ব্যাংক-বীমার বেলায়ও তাই। কাজে নতুন করে ঘর গোছানোর কাজটাও আমাদের করতে হবে।
ইএটিএল প্রথম আলো এপসের এই প্রোগ্রামে এইসব কথাই বলবো হয়তো যদি সময় পাই।
সবার জীবন পাই-এর মত সুন্দর হোক।
শুভ সকাল।