
২৭-২৮ ডিসেম্বর জাতীয় বিজ্ঞান জয়োৎসব
আমেরিকার একজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন রোনাল্ড রিগ্যান। তিনি আমেরিকার জন্য এমন একটা কাজ করে গেচেন যা কিনা পুরো আমেরিকাকে একটি উদ্ভাবনের দেশ বানিয়ে দিয়ে গেছে। তার জমানার আগে আমেরিকায় ছিল কোন ইউনিভার্সিটি প্রফেসর যদি কোন কিচু উদ্ভাবন করে তাহলে সেটার মালিকানা ঐ ইউনিভার্সিটি পাবে। মানে পেটেন্ট হবে ভার্সিটির। রিগ্যানের আমলে সেটা হযে গেল – উদ্ভাবন যার, মালিকানা তার। আর তারপর থেকেই কিন্তু আমেরিকাতে ব্যপকভাবেবাবে উদ্ভাবনের একটা সূচনা হল। তার ্গে পর্যন্ত যতো বইক্তিগত উদ্ভাবন তার বড় অংশজুড়ে থাকতো কোম্পানিগুলো। এখন ভার্সিটিগুলো এসে পড়লো এই রেসে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে উদ্ভাবনে অন্যদের কোনভাবেই পারা সম্ভব নয়।
কারণ? কারণ সহজ – ওনারা সবচেয়ে ক্রিয়েটিব মাউন্ডগুরোর সঙ্গে থাকে। পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে দেখা গেছে তত্তীয় পদার্থবিজ্ঞানের সব আবিস্কারই বিজ্ঞানীরা নিজেদের ৩০ পেরোনোর আগে করে ফেলেছেন। আর সে সময় তারা কই থাকেন!
তো, সেই দেশেও বিজ্ঞান পড়তে চায় না পোলাপান। সেজন্য ওনারা কী করেন?
সব বড় বড় সায়েন্স প্রতিষ্ঠানে যত বিজ্ঞানী আছেন তারা নিয়মিত বিভিন্ন স্কুলে যান। খোদ প্রেসিডেন্ট (আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কিন্তু সরকারে সিইও) কিন্তু ওনার বাৎসরিক রুটিনে কমপক্সে ২০ দিন রাখেন বিজ।ঞানের জন্য। এর মধ্যে আবার কযেকটা হল খুদে বিজ্ঞানীদের জন্য। একটা দিন হল ইন্টেলের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল মেলার সেরা ৫০ জনের সঙ্গে সন্ধ্যায় গল্প করে খাওয়া দাওযা। আর একদিন হলো স্কুল বিজ্ঞান মেলার বিজয়ীদের সঙ্গে দিনভর হোয়াইট হাউসে কাটানো। ২ বছর ধরে যুক্ত হয়েছে আওয়ার অব কোড।
এছাড়া ওখানে এসটিইএম (সায়েন্স, টোকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাথ) শিক্ষার জন্য নানান উদ্যোগ আছে। আমেরিকা ছাড়া অন্যান্য দেশগুলোও এখন এসবখাতে নানান উদ্যোগ নিচ্ছে। এই যেমন সৌদি আরব। ওখানে একটা প্রতিষ্ঠান আছে- জাতীয় অলিম্পিয়াড একাডেমি। সরাদেশ থেকে ট্যালেন্টেড পোলাপানকে খুঁজে বের করে আর তাদেরকে নিয়ে যায় আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে। এ ছেলেমেয়েদের কোন প্রচলিত স্কুলে পড়তে হয় না, এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষা দিতে হয় না। অলিম্পিয়াড শেস করার পর ওরা হয় সৌদিতে (ওখানে এখন বেশ কয়েকটা বিশ্বমানের ভার্সিটি আছে) বা অন্যান্য দেমের ভার্সিটিতে সরকারি খরচে পড়ালেখা করতে পারে। পাশের দেশ ভারতে আছে ইনসপায়ার নামের প্রোগ্রাম।
এসব আমরা পড়ি, জানি আর স্বপ্ন দেখি। তো স্বপ্ন তো আর পূরণ হয় না সরাসরি আর তাই “যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে” আমরা নেমে পড়েছি নানান আয়োজনে। বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ ভাই-এর নানান চেষ্টায় আমরা বিজ্ঞানের অনেকগুলো কর্মকাণ্ড এখন নামিয়ে দিয়েচি রাস্তায়। টাকা নাই, স্পন্সর নাই। তারপরও যতদূর পারা যায়। এলিফেন্ট রোডে এসপিএসবির একটা অফিস আছে। সেটার ডিসেম্বর মাসের ভাড়া কিন্তু যোগাড় হয়নি। অফিস এক্সিকিউটিভকে দুইমাস আগে জোরপূর্বক বিনাবেতনে তিনমাসের ছুটি দেওয়া হয়েছে। তারপরও আমাদের একদল বিজ্ঞানকর্মী কাজ করে যাচ্ছে।
দেখতে দেখতে শিশু কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেসের তিন বছর হয়ে গেল। ২০১৫ সালে এর কোন স্পন্সরই ছিল না। স্পন্সর ছাড়াই আমরা করেছি প্রথম বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড। ৬ জনের টিম দ্বাদশ আইজেএসওতে গেছে নিজেদের টাকায় এবং জিতে এনেছে একটা ব্রোঞ্জ পদকও। ১৭ তারিখ থেকে একটা জ্যোতির্বিজ্ঞান কর্মশালা শুরু হচ্ছে। আজ কক্সবাজারে হবে একটা ভিন্ন রকমের একটা আকাশ পর্যবেক্ষণ। এজন্য লামমিম আর রেজা এখন সেখানে রয়েছে।
এরপর একটা উইন্টার সায়েন্স ক্যাম্প হবে ২১-২৩ তারিখে। অংশগ্রহণকারীরা নিজেরা সেটার খরচাপাতি দিয়ে দেবে। আর ২৫ ডিসেম্বর নিউটনের জন্মদিনে এসপিএসবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
তারপর ২৭-২৮ ডিসেম্বর হবে আমাদের ২০১৫ এর শেষ বিজ্ঞান আয়োজন সিটি ব্যাংক-প্রথম আলো বিজ্ঞান জয়োৎসব ২০১৫ এর জাতীয় আযোজন। ১৫টি আঞ্ঝলিক উৎসবের বিজয়ী হাজারখানেক খুদে বিজ্ঞানী সেখানে যোগ দেবে।
২৭ তারিখে উদ্বোধনের পর থেকে বিজ্ঞান প্রকল্প প্রদর্শন ও বিচার হবে দুপুর পর্যন্ত। ২৮ তারিখে সকালে হবে বিজ্ঞান কুইজ প্রতিযোগিতা। তার দেশের বরেন্য বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন করার সুযোগ পাবে ওরা। সকাল ১১.৩০-এ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এসে পুরস্কার দেবেন বিজয়ীদের। আমাদের এই আয়োজনের স্পন্সর আছে। দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড। ওদের আমি প্রাণখুলে ধন্যবাদ দেই ও কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রচলিত জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের বাইরে গিয়ে তারা আমাদের সঙ্গে এই আযোজনে যুক্ত হয়েছেন।
আমাদের এই আযোজনে একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ।ঞানীও যুক্ত আছেন। তার আসার কথা ছিল। কিন্তু তিনি শেষ মুহুর্তে একটা জটিল কাজে আটকে যাওয়ায় এখন আসতে পারছেন না। তবে, একজন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীকে আমরা নিয়ে আসবো ২০১৬ সালই। ২৮ তারিখের ৮ জন বিজয়ী তার সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ পাবে ইনশাআল্লাহ্।
বিজ্ঞান কার্নিভালের ১৫টি আয়োজনেই আমি গিয়েছি এবং দেখেছি আমাদের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আগ্রহ। যদিও কিছু ভুল কাজের জন্য আমাদের বিজ্ঞান প্রকল্পগুলো মডেল ভিত্তিক হয়ে পড়েছে, তারপরও আমার বিশ্বাস কযেকবছর কাজ করলে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের মূল লক্ষ্যের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারবো।
সবার জীবন পাই-এর মতো সুন্দর হোক।