বেড়ে ওঠার যন্ত্রণা
এ যন্ত্রণা সবার। তবে, আমি তো আর সর্ববিদ্যাবিশারদ নই তাই ধনন্বরীও জানি না। বেশ কিছুদিন ধরে কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে আলাপ পরিচয়, কথাবার্তা থেকে একটা সামারি করার চেষ্টা করছি। সব উদ্যোক্তাই এক সময় বুঝতে পারে তার বড় হতে হবে, তার বড় হওয়ার উপাদান আছে এবং “কেবল টাকা” হলেই তার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সমস্যাটা বাঁধে অন্য জায়গায়। যখন “কেবল টাকা”র জন্য সে ব্যাংকে বা বিনিয়োগকারীদের কাছে যায় তখণ তারা তার এক হাতে হারিকেন আর এক হাতে একটা ফর্দ ধরিয়ে দেন। তখন শুরু হয় ঐ ফর্দ ধরে তার কাজ। এই সময়টাতেই অনেকেই ঠিকমতো ব্যাপারটা সামলাতে পারেন না।
যারা ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা ভাবছেন তাদের জন্য আমার কিছু পরামর্শ।
১. আর্থিক স্বাস্থ্য – প্রথম কাজ হবে একটা ফিনান্সিয়াল অডিট করা, মন খুলে। চাটার্ড একাউন্ট্যান্টকে মন খুলে বলতে হবে যেন তিনি সবকিছু খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখেন। আচ্ছা, আমার কাজ পাবার প্রসেসটা কেমন? ঠিক আছে তো? বেতন যে দেই, বিল যে পাই সেটা কি ঠিকমতো জার্নালে এন্ট্রি দেই? আচ্ছা অনcক সরকরি বিলে ভ্যাট/ট্যাক্স কেটে রেখে বিল দেয় আমি কি সেই কাগজগুলো যোগাড় করে রাখি? আমার খরচের ভাউচার কী সংরক্ষিত হয়? খরচের কী অনুমোদন লাগে? লাগলে সেটার কী কোন ধাপ আছে? অনুমোদন ছাড়া কী সব খরচ হয়ে যায়? – সব জানতে হবে। এটা খুবই জরুরী কারণ বড় হতে হলে ফিনান্সিয়াল হেলথটা ঠিক হতে হবে। আর এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভাল বলতে পারবেন ফিনান্সিয়াল ডাক্তার।
২. শক্তি-দূর্বলতা – আচ্ছা, আমার কোম্পানিতে কী কোন একিলিস হিল আছে? কোন দূর্বল জায়গা? আচ্ছা আমি কি কারো ওপর বেশি নির্ভরশীল, জিম্মি? যদি উত্তর হ্যা হয় তাহলে আমার করণীয় কী? কেমন করে আমার দূর্বলতাগুলো আমি কাটিয়ে উঠবো?
৩. কর্মী-ব্যবস্থাপনা – আমার কর্মী ব্যবস্থাপনা কেমন? এটার একটা লিটমাস টেস্ট আছে। এর আগে যতজন কর্মী আপনাকে ছেড়ে গেছে তাদের তালিকা করেন। পাশে লেখেন সে যাবার সময় কী বলে গেছে বা কী কারণ দেখিয়েছে। তারপর পারলে খোঁজ নিন। যদি দেখেন আপনাকে পড়াশোনার কথা বলে চাকরি ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছে তাহলে বুঝবেন আপনার আচরণে সমস্যা আছে। আপনার সঙ্গে হিটলারের মিল আছে। এদের মধ্যে কতোজন স্যালারির জন্য গেছে সেটাও বের করেন। এর আগে একটা বিশ্লেষন করেন এইচআর কস্টের সঙ্গে আপনার রেভিনিউর। মাসে মাসে সেটা কেমন তা থেকেও একটা ধারণা পাবেন। এটা নিয়ে একজন এইচআর কনসালটেন্ট, না পারলে একজন কাউন্সিলরের সঙ্গে বসেন। উনি আপনাকে রাস্তা বাতলাতে পারবেন।
৪. বিপণন : মার্কেটিং কেমন করেন আপনি? মার্কেটিং টিমের কাজে আর ফলাফলে আপনি কি খুশি? যদি খুশি হোন তাহলে সেটাকে বাড়াতে হবে। তা বাড়ানোর মানে এই না যে, আপনি ধুম করে প্রথম আলোতে একটা বিজ্ঞাপন দিয়ে দেবেন? যে কোন নতুন মার্কেটিং ব্যয়ের আগে ভাবেন সেলস ফলোআপের সামর্থ আপনার আছে কিনা। যাদের আফটার সেলস সাপোর্ট আছে তাদের জন্য এটা খুবই দরকারি। কারণ যে কোন মার্কেটিং-এর একটা প্রত্যক্ষ ফলাফল হলো লিড বাড়া। সেটাকে কাস্টোমার বানানোর কুদরত আছে তো? কাস্টোমার বেড়ে গেলে তাদের সাপোর্ট দিতে পারবেন তো? যদি নিজে কনফিডেন্ট পান তাহলে একজন মার্কেটিং-এর লোকের সঙ্গে বসেন। ওনার কিছু টিপস নেন। পারলে নিজের মার্কেটটা সম্পর্কে আরো জানার জন্য একটা মার্কেট সার্ভে করেন। নিজের টিম দিয়ে করাতে পারেন কিংবা কাউকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারেন।
৫. কোম্পানির ভ্যালুয়েশন – এবার আপনার কোম্পানির মূল্য বের করুন। এক্সেল ভাল মতো শিখে ফিনান্সের বই পড়ে কাজটা আপনি নিজেও করতে পারেন তবে তার চেয়ে ভাল হবে যদি থার্ড পার্টি দিয়ে কাজটা করায় নেন। এ লাইনে বন্ধু-বান্ধব থাকলে তাদেরও কাজে লাগাতে পারেন। এমন কোন ফার্ম যদি থাকে তাদের একটা তালিকা যোগাড় করতে পারেন।
গতকালের এক লেখায় লিখেছি দশক জুড়ে নিরন্তর চেষ্টার ফলে কেবল রাতারাতি সাফল্য পাওয়া যায়। বড় হওয়ার জন্য তাই একটু প্রস্তুতি নিতেই হয়। কারণ সময়ের এক ফোড়ম অসময়ের নয়টার সমান।
শুভ কামনা