সায়েন্স ফেলো
কয়েকবছর আগে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে একটা শোক প্রস্তাব নেওয়া হয়। এমন একজন যিনি কেমব্রিজে প্রফেসর ছিলেন এবং ইউকের আইএমও টিমের জন্য কাজ করতেন। সেটাই আমরা জানতাম। তবে, শোক প্রস্তাবের সময় জানতে পারি তিনি শেষ এক দশক একটি প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করেছেন!!! ভাবা যায়?
আমাদের দেশে যাদের শিক্ষক হওয়ার কথা তারা সহজে শিক্ষক হতে চায় না। বেতন, সামাজিক প্রতিপত্তি এবং অন্যান্য কারণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারটা অবশ্য ভিন্ন। কিন্তু স্কুল? নৈব নৈব চ!
হবেই বা না কেন। বছর খানেক আগে হিসাব করে দেখা গেল আমাদের সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের বেতন স্কেলে মোট বেতন সরকারি গাড়ি চালকদের থেকেও কম। এখন বাড়ছে কী না কে জানে। শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন স্কেলের কথা বলা হলেও সেটা যে হবে তার কোন লক্ষণ দেখা যায় না। কাজে যারা সত্যিকার অর্থ শিক্ষক হলে শিক্ষার্থীদের লাভ হতো তাঁরা বরং ব্যাংকের কর্মকর্তা হতে ভালবাসেন অথবা সেটাই বেছে নেন।
এটা যে কেবল আমাদের সমস্যা তা নয়। অনেক দেশে এই সমস্যাটি সমাধান করছে কয়েকভাবে। ১ নম্বর হল সরকারি ব্যবস্থায় একজন চাকুরে বেতন পায় তার যোগ্যতা হিসাবে, কোথায় চাকরি করছে সে হিসাবে নয়। ফলে, একজন পিএইচডি করার পর প্রাইমারী স্কুলে চাকরি করতে দ্বিধা করে না। সমাজে স্বীকৃতিরও রকমফের হয় না।
যারা সেটি পারে নাই। তারা ভলান্টিয়ারদের কাজে লাগায়। যেমন খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী, কনসেপ্ট ক্লিয়ার এমন লোকজনকে ওরা ২ বছরের জন্য গ্রামে পাঠিয়ে দেয়, ফেলোশীপ দিয়ে। এই দুইবছর সে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করে। এতে সবার লাভ- ছাত্রদের লাভ তারা এমন শিক্ষককে কাছে পায় যে কীনা আর কখনো শিক্ষকতা করবে না, রিসার্চ করবে। কিন্তু দুই বছর সে তার সেরাটি শেয়ার করে। সরকারের লাভ শিক্ষার্থীটি বিদেশে যাবার আগে তার দেশকে কাছে থেকে দেখে যেতে পারে। তার মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় জন এফ কেনেডির সেই আপ্ত বাক্য – দেশ তোমাকে কী দিচ্ছে সেটা নিয়ে ভেবোনা, দেশকে তুমি কী দিতে পারো তা নিয়ে ভাবো।
আবার কোন কোন দেশে প্রাইমারী শিক্ষকদের বেতন হলো সবচেয়ে বেশি!!!
আমেরিকায় এমন একটি প্রোগ্রাম আছে যারা নাম টিচ ফর আমেরিকা। এটির কথা আমাকে প্রথম বলেছিল নাজিয়া চৌধুরী। ওটা সম্পর্কে না জেনেই আমরা কিছুটা পাইলট জাতীয় প্রোগ্রাম করেছি। আমাদের গণিত ক্যাম্প, সায়েন্স ক্যাম্প, নাম্বার ট্যুর এগুরো সেরকম প্রোগ্রামেরই খন্ড খন্ড ভাবনা। এমনকী কয়েক বছর আগে বুয়েটের চারজন শিক্ষার্থী কুষ্টিয়ার একটি স্কুলে তিনদিন পড়িয়ে এসেছে। এটি আমরা বিশ্লেষন করে দেখেছি এই কাজটাকে এগিয়ে নেওয়ার মত পরিস্থিতি এখনো হয়নি।
মানে একজনকে একটা স্কুলে পাঠানোর মত পরিস্থিতি এখনো শুরু হয়নি। বাস্তবতা নেই। তারচেয়ে বরং সচেতনতা বাড়ানো, মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে কাজ করা এগুলো নিয়ে আরো কিছুদিন করা যেতে পারে।
সেই ধারণা থেকে আমি অনেকদিন ধরে একটা ফেলোশীপ জাতীয় ব্যাপার ভাবছিলাম। একজনু মেধাবী, সৃস্টিশীল তরুন-তরুনীকে আমরা একটা ফেলোশীপ দিলাশ এটির সম্মানী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রভাষকের সমান হতে পারে।
২০১২ সালের এপ্রিল মাস থেকে এইটি নিয়ে কাজ করছি। দুটো ফেলোশীপের ফান্ডিং-এর চেষ্টা করছিলাম। একটা ম্যাথের আর অন্যটা সায়েন্সের।
আমাদের সায়েন্স ফেলোর কাজ কী হবে? আমি নিজেই যে কুব পরিস্কার তা না। খুব পরিস্কার হলে তো কাজটা মুরুই করে দিতাম এই লেখা না লিখে।
মোটামুটি আইডিয়াটা এরকম। বছর খানেক আমার সঙ্গে কাজ করবে। একটা একশন রিসার্চে নেতৃত্ব দিতে পারে, কয়েকটা প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে থেকে আসতে পারে, কয়েকটা ভিডিও লেকচার জাতীয় কিছু একটা বানাতে পারে- এরকম নানান কিছু।
আমি এখন ফেলোর কাজের তালিকা লিখছি। কারণ একবছরের একটা ফান্ড যোগাড় হযেছে। কাজে সবাই যদি আমাকে একটু একটু সাহায্য করে তাহলে ফেলো একবছর কী করবে সেটার তালিকা আমরা করে ফেলতে পারবো? আর কাকে ফেলো হিসাবে নেবো? সেটা সহজ যে ঐ কাজগুলো করতে পারবে তাঁকেই।
আশাকরি সবাই তাদের ভাবনাগুলো শেয়ার করবে যাতে আমি ফেলোর কাজের তালিকা বানাতে পারি।
সবার জীবন পাই-এর মত সুন্দর হোক।