
এমআইটিতে সানজিদ আনোয়ার

ভোরবেলায় খবরটা পেয়ে বেজায় খুশী হয়েছি। এমআইটি পাই দিবসে তাদের ভর্তির রেজাল্ট দেয়।
সানজিদ প্রায় ছোটবেলা থেকে গণিত অলিম্পিয়াডের সঙ্গে যুক্ত। এখনো মায়ের সঙ্গেই সে ঢাকার উৎসবে যোগ দিতে আসে। এবার যেতে হবে দূরদেশে।
আল্লাহর অশেষ আমাদের গণিত অলিম্পিয়াডের অর্জন অনেক। তার মধ্যে একটা বড় অর্জন হলো বিশ্বসেরা ভার্সিটিতে আমাদের শিক্ষার্থীদের যোগ দেওয়া, স্নাতক শ্রেণীতে। আমি যখন বুয়েটে পড়তাম তখন অনেককে দেখতাম পাশ করার পর আমেরিকায় মাস্টারস করতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে এবং সফল হয়। আমার ধারণা ছিল ঐটাই মনে হয় একমাত্র রাস্তা!
ড. মাহবুব মজুমদারকে আমরা পাই ২০০৫ সালে খুব স্বল্প সময়ের জন্য। সে বছরে তিনি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলেও মেক্সিকোগামী দলের দলনেতা ছিলেন মুনিবুর রহমান স্যার। কাজে সেবার আর তাঁর সঙ্গে আমার তেমন আলাপ হয়নি। ২০০৬ সালে গণিত ক্যাম্পের দায়িত্ব নেন মাহবুব। তারপর শ্লোভেনিয়ার রাজধানীতে আইএমও চলাকালীন সময়ে প্রথম আমাদের একত্রে থাকা, দলনেতা আর উপ-দলনেতা হিসাবে। তখন থেকে ঐ ১০-১২ দিন হয় আমাদের পরবর্তী বছরের প্ল্যানিং-এর সময়। সেবারই প্রথম মাহবুব আমার কাছে জানতে চায় কেন আমাদের ছেলে মেয়েরা এমআইটি, হার্বার্ডে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে না। আমি বলেছি দেখবে না কেন, দেখে, মাস্টার্সে যাবে।
তখন মাহবুব বলে যে, না, আন্ডারগ্র্যাডেও যাওয়া সম্ভব। এবং তিনি ঐ চেষ্টা করতে চান।
আমেরিকার ইউনিভার্সিটিগুলোর আমাদেরগুলোর মতো জ্যাত্যাভিমান নেই। তারা আলাদা আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয় না। ওখানে ভর্তির একটি যোগ্যতা হল এসএটি পরীক্ষা দেওয়া। এটা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সেন্টারে হয়। আর ভর্তির ফরমে নানান কৃতবিদ্যা জাহিরের উপায় থাকে। শুরু হয় মাহবুবের চেষ্টা।
২০০৭ সালের অলিম্পিয়াডে সৌমেন আর তানভীর অনারেবল মেশনশন পায় এবং পরের বছরেই একজন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যালটেকে জায়গা পেয়ে যায়। তারপর সামিন যায় কেমব্রিজে আর নাজিয়া এমআইটিতে। সে থেকে প্রতিবছর কেও না কেও এমআইটিতে যাচ্ছে। নাজিয়া, উর্মি, সৌরভ, মাহি হয়ে এবার সানজিদ তার সর্বশেষ সংযোজন। এর মধ্যে মুন হার্বার্ড, ইশফাক স্ট্যানফোর্ডে আন্ডারগ্র্যাড করতে গেছে, করেও ফেলেছে।
মাস্টারসে আমাদের গণিত ক্যাম্পারদের তালিকা করলে সেটা বিশাল তালিকা হবে।
সানজিদের এই সাফল্যের সঙ্গে কিন্তু আমাদের গণিত ডাক্তার সৌমিত্রেরও অবদান আছে। গণিত অলিম্পিয়াড শুরুর সময়ে সৌমিত্র ছিল ময়মনসিংহ মেডিকেলের শিক্ষার্থী। তার চেষ্টায় সেখানে শুরু হয় প্যারালাল ম্যাথ স্কুল। সানজিদ সেই স্কুলেরই ছাত্র!
মাহবুবের জন্য কৃতজ্ঞতা ও সানজিদকে অভিনন্দন।