কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চাবিকাঠি
ক’দিন আগে কিশোর আলোর নির্বাহী সম্পাদক সীমু নাসের ফেসবুকে একটা স্ট্যটাস দেয়। এর সারমর্ম হলো তার স্ত্রীর জন্য একটি নতুন ফোন কেনার ব্যাপারে আলাপ আলোচনার ফাঁকে সে একবার গুগল সার্চ করেছে। তারপরের ঘটনা হলো “কয়েকটা ইমেজ দেখে একটা ধারণাও পেলাম। কালকে আরও ডিটেইল দেখবো নে ভেবে বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে মেইল চেক করতে গিয়ে দেখি নানান মেইলের মাঝে গুগলের একটা মেইল। সাবজেক্ট লাইনে পিক্সেল ফোন। আমি চমকে উঠলাম। তাদের দাবী লিমিটেড কোয়ালিটির কিছু পিক্সেল ফোন এখনও গুগল স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে। এখনই যেন কিনে ফেলি। পরে আর পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ! মেইলজুড়ে তিনটা ‘বাই ইট নাও’ বাটন। উপরে নীচে ‘ফ্রি শিপমেন্ট’ অফার।”
এই ঘটনার কয়েকদিন পরে সিঙ্গাপুর থেকে তামিম শাহরিয়ার সুবিন লিখেছে, “আজকে দুপুরে বাজার করতে গিয়ে আমার পুত্রর জন্য টুথব্রাশ কেনার সময় একটা ওরাল-বি ইলেকট্রিক টুথব্রাশ নেড়েচেড়ে দেখছিলাম কিছুক্ষণ। একটু আগে দেখি ফেসবুকের ফিডে ওরাল-বি ইলেকট্রিক টুথব্রাশের বড়-সর বিজ্ঞাপণ”!
আর সর্বশেষ দুইদিন আগে সীম আবার লিখেছে – ক্লাসিকাল ফেস্টে গত পাঁচদিনে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। এর মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন যাদের সঙ্গে ১০ বছর-১৫ বছর পর দেখা। হাই হ্যালো ছাড়াও অনেকের সঙ্গে সামনা সামনি দাড়িয়ে আট-দশ মিনিট গল্প করেছি। ফেসবুক এখন ‘পিপল ইউ মে নো’ তে তাদের সাজেস্ট করা শুরু করেছে। ফেন্ডলিস্টের অতল গহবর থেকে তাদের পোস্ট আমার হোমে দেখানো শুরু করেছে। আমার পকেটে থাকা মোবাইলের ফেসবুক অ্যাপ কি আমার সামনে দাড়ানো মানুষটার মোবাইলের ফেসবুক অ্যাপের উপস্থিতি বুঝতে পারে?”
সীমুর প্রথম ঘটনাটা পুরোপুরি সত্য হলেও সুবিন আর সীমুর পরের ঘটনা দুইটিও অনেকখানি সত্য। আজ সকালে একটা নিউজ পড়লাম যাতে বলা হয়েছে গাড়ি থেকে নামার পরও উবার তার কাস্টোমারকে “ফলো” করে। কেন করে কে জানে? সেটা আমি খুটিয়ে পড়তে যাইনি।
কিন্তু এসব ঘটনা থেকে যে বিষয়টা বের হয়ে আসে তা হলো – ডেটা, ডেটা, ডেটা আর ডীপ, ডীপ, ডীপ লার্নিং।
এবং মনে হচ্ছে পৃথিবী সেই দিকে আগাচ্ছে – কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার নানান দিকে। যেহেতু মানুষ এখন ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি থাকে ফেসবুকে কাজে সেখানেও নানান কাজ কর্ম হচ্ছে এই সব নিয়ে।
তো ফেসবুকের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাবের চালক ইয়ান লে কুন আর এপ্লাইড মেশিন লার্নিং গ্রুপের চালক জোয়াকুইন কেনডেলা এই নিয়ে দুইটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। পয়লা কথা হলো সুবিন আর সীমুকে চমকে দেওয়ার জন্য কী শেখা প্রয়োজন।
উত্তর হলো – গণিত, গণিত। সম্ভবত আর একটু গণিত!!!
প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো সবসময় স্টেমের কথা বললেও ওনারা দুইজন খুব পরিস্কার করে গণিতের বিষয়েই বলেছেন। জোড়া সাজেশন হলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্যালকুলাস, সম্ভাব্যতা, লিনিয়ার বীজগণিত ও পরিসংখ্যানে হাত পাকানো শুরু করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
আমাদের দেশে এই ব্যাপারগুলো অবশ্য কারও মাথাতে নেই। সম্ভাব্যতা আমরা এইচএসসিতে পড়েছিলাম বটে তবে সেটার আসল মজা টের পেয়েছি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসে। অথচ প্রোবাবিলিটি আর পরিসংখ্যান আরও আগে থেকে সুন্দর করে পড়তে পারতাম। এখন অবশ্য জনমিতির জন্য পরিসংখ্যান স্কুল থেকে পড়ানো হয় তবে তা মনে হয় না আনন্দের সঙ্গে পড়ানো হয়।
আমি বেশি কথা ব্যাখ্যা করতে চাই না। কারণ তাদের কথাগুলো সরাসরি শোনাই ভাল।
আমার এক বন্ধুর কথা বলি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি বিজ্ঞান পড়ে সে গিয়েছে আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। একদিন রাতে আমাকে ফোন করেছে-
“দোস্ত, তোর কথাটা পাত্তা দেওয়া দরকার ছিল।”
কোন কথা।
-অঙ্কের কথা।আসছি পলিটিক্স পড়তে, আমাকে দুইটা গণিতের কোর্স ধরাই দিছে। বলছে আগে এগুরো করো তারপর পলিটিক্স!!!
বুয়েটে পড়ার সময় একবার গাণিতিকভাবে ইতিহাস পড়ার একটা পদ্ধি আমরা বের করেছিলাম। সেটার কথাও মনে পড়ছে।
কাজে বাচ্চা-কাচ্চারা বোকা হতে না চাইলে কিংবা বোকা বানানোর প্রযুক্তির দখল চাইলে একটাই কাজ।
গণিত! গণিত!! গণিত!!!