৬ বিলিয়ন ডলার প্রত্যাখ্যান ও অত:পর
মিউজিকে ডিগ্রী করার পরে মনে হলো এ দিয়ে হবে না। তাই কোডিং করতে শেখা। একটা ডিজাইন ফার্মে ইন্টার্নশীপের সুযোগ। সেখানে কথা প্রসঙ্গে নিজের একটা আইডিয়ার কথা বলা। এর মধ্যে বৃত্তি পেয়ে পলিটিক্স নিয়ে পড়তে আবার ভার্সিটিতে ফেরা। একদিন সকালে আগের মালিকের ফোন। তার আইডিয়ার পিছনে এক মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করতে রাজি হয়েছেন তিনি।
কিন্তু ঐ সাইটটা কোন কাজে লাগলো না। টেকা-টুকা বের হয়ে গেছে। কিন্তু ওখান থেকেই একটা নতুন আইডিয়া পাওয়া গেল। নতুন আইডিয়াটা তরতর করে আগালো। প্রথমে ইয়বহু আসলো ২ বিলিয়ন ডলার দিয়ে। ইয়াহু সিইওকে পছন্দ নয় তাই বাদ। এরপর আসলো গুগল এবার ৬ বিলিয়ন। তাও মন ভরলো না। একমাত্র রাস্তা আইপিও। কিন্তু সেখানে করতে গেলেন দুই নম্বরী। জানাজানি হয়ে গেল। এর মধ্যে ক্ষুব্দ কাস্টোমারও যোগ গেল। আম, ছালা ও ছালা বাধার রশি – সবই গেল। একদিন সকালে নিজের তৈরি করা কোম্পানি থেকে বহিস্কৃত হয়ে গেলেন, এন্ড্রু মেসন, গ্রুপনের সিইও ও সহ-প্রতিস্ঠাতা!!!
উইকিপিডিয়া থেকে জানা যাচ্ছে, পেনসিলভানিয়ার মাউন্ট লেবাননে তার বেড়ে ওঠা। ১৫ বছর বয়সে সেখানে সে একটি ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানও তৈরি করে। তারপর পড়তে চলে যায় নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে। সেখান থেকেই মিউজিকে ডিগ্রী্, ২০০৩ সালে। পাশ করে কোডিং শেখা এবং এরিক লেফকোস্কির ফার্মে ইন্টার্নশীপ।
ওখানেই তার মনে প্রথম একটা ওয়োসাইটের কথা মাথাতে আসে। আর সেই আইডিয়ার জন্য বিনিয়োগ করতে রাজি হয় এরিক। এক মিলিয়ন ডলার।
আইডিয়াটা খুব সহজ। আপনি কোন একটা আবেদন করতে চান। তাহলে দ্য পয়েন্ট ওয়েবসাইটে এসে দল পাকাতে পারবেন একটা এপ্লিকেশন করার জন্য। সাইটের কাজটা সহজ। তবে আস্সেতে ধীরে ৯ মাসে সেটা করলো সে। মেসন ডিজিটাল মার্কেটিং-এ টাকা ঢালেন। ফলাফল হলো – মাসে ১০০০ ভিউ এাং তাও ট্রল করে এমন পোলাপান।
টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এরিক অস্থির হয়ে যাচ্ছে।
এমন সময় বোঝা গেল ঐ যে দল পাকানো পোলাপানরে দিয়েই একটা কিছু হতে পারে। ওরা দল বেঁধে যদি কোন কেনাকাটা করে তাহলে কি কোন ডিসকাউন্ট পেতে পারে?
যেমন সিনেমা হলকে যদি বলা হয় আমরা ১৫ জনের জন্য টিকেট কাটবো বা পিজ্জা ওয়ালাকে যদি বলা হয় ১০টা কিনবে? তাহলে কী ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে? আর যে এই কাজটা করে দিবে তাকে কি কমিশন দেবে? (এখানে এসে সবাই ধরে ফেলবে এটা একটা ডিল সাইট। কিন্তু তখনও কোন এক্সম্পল ছিল না।)
এই চিন্তা থেকেই মেসন একটা ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগ খুলে ফেললো। যেহেতু তার হারানোর কিছু নাই, এন্ড্রু ভাবলো এখানেই তার সব কিছু নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে। “Groupon” এভাবেই আলোর মুখ দেখলো। জিনিষটা সহজ – গ্রুপ হয়ে যদি লোকবল কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কিনতে চান তাহলে গ্রুপনে আসলে ডিসকাউন্ট পাবেন।
তবে শুরুটা সহজ ছিল না। কারণ এন্ড্রুর মতো পোলাপানকে বিশ্বাস করবে কে! তবে, শেষ পর্যন্ত একই বিল্ডিং-এর মোটেল বার রাজী হলো। নিজেরা পোস্ট-কুপন ছাপিয়ে সেটা নিয়ে মোটেল থেকে ডিসকাউন্ট জোগাড় করা হলো। এক সপ্তাহ পরে একটি শুশি দোকানের ৫০০ ডিসকাউন্ট কুপন বিক্রি।
তারপরের গল্প অনেকেই জানেন। তাই আর লিখছি না। এটা ২০০৮ সাল।
২০১০ সালে ইয়াহু গ্রুপন কিনতে চাইল ২ বিলিয়ন ডলারে। তারপর গগুল ৬ বিলিয়ন ডলারে। ততোদিনে বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে এন্ড্রু। কাজে ভাবলো নিজেই আইপিওতে যাবে। কিন্তু সেখানে হিসাবের গড়মিল করাতে সব ভেস্তে গেল। শেষ পর্যন্ত গ্রুপন থেকে বহিস্কারই হয়ে গেল তার প্রতিষ্ঠাতা।
দ্যা পয়েন্ট থেকে গ্রুপন – এ গল্পে শেখার এলিমেন্ট আছে সকল উদ্যোক্তা বা মার্কেটার হতে চাওয়া নতুনদের জন্য। যারা পয়েন্টটা নিতে পারলো তারা নিলো, যারা নিতে পারলো না তারা জানলো এবারের শারদীয় আয়োজনে কেউ আমাকে নাড়ু দিলো না।