চাকরি চাই : নতুনদের জন্য রেফারেল সিস্টেম-১
যখন আমি পাস করে বের হই, তখন এন সংখ্যক জীবন বৃত্তান্ত ব্যাগে করে ঘুরতাম। তখন ই-মেইল ছিল না, ফেসবুকে বা স্কাইপে ইন্টারভিউ দেওয়া যেত না। চাকরি ডট কমও ছিল না। যখন যেখানে সুযোগ হতো সেখানে সিভি দিয়ে আসতাম। তারপর অপেক্ষা করতাম ডাক পাবো। তা একটি আইটি কোম্পানি থেকে ডাক পেলাম। মহা খুশী। প্রথম ইন্টারভিউতে অনেক কারিগরি প্রশ্ন জিজ্ঞাষা করা হলো। অনেককে দেখলাম দিল। যাহোক দ্বিতীয় ইন্টারভিউ-এর জন্য ডাক পেলাম। এবার মালিক পুত্র, সম্প্রতি আমেরিকা থেকে ডিগ্রী নিয়ে এসেছেন। যাহোক গেলাম। টেকনিক্যাল তেমন কিছু বললেন না। খালি বললেন, আসলে আমরা একজন অভিজ্ঞ লোককে খুঁজছি। অন্তত কয়েকবছরের অভিজ্ঞতা আছে সেরকম। আমি বললাম – আমার তো চাকরির অভিজ্ঞতা নেই। তখন তিনি বললেন- আপনার অন্যান্য একটিভিটিগুলো বেশ ভাল। সেজন্য আমি আপনার সঙ্গে আলাপ করতে চেয়েছি। যাহোক, আমি বলে আসলাম যে, আমার যেহেতু অভিজ্ঞতা নেই কাজে এব্যাপারে আমার কিছু করার নাই। যাহোক ভুলে গেছিলাম। কিন্তু কয়েকদিন পরে আবার ডাক পেলাম। এবং অবাক হলাম। কারণ আমাকে কেন ডাকবে? যেদিন ইন্টারভিউ সেদিন বিকেল আমার একটা ক্লাশঅ কাজে যাবো না ঠিক করলাম। তবে, কী মনে করে, ফোন দিলাম। বললাম – ক্লাস আছে। আসতে পারবো না। আমাকে অবাক করে দিয়ে ও পাশ থেকে জানতে চাওয়া হলো আমি কখন যেতে পারবো? বললাম – সন্ধ্যায়। বললো- আসেন। আমাদের চেয়ারম্যান স্যার আপনাকে দেখতে চেয়েছেন।
গেলাম। দেখলাম এবার মালিক স্বয়ং, তার ছেলেরা এবং আরো কয়েকজনের একটা বোর্ড। বাইরে দেখলাম ৫/৬ জন। একজনের পিইচডি আছে, বাকীদের কমপক্ষে ৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা আর আমি খালি ফ্রেশ।
মাফলার পড়া, হাফ শার্ট আর স্যান্ডেল পরা। প্রথমে বড় সাহেব সরাসরি এটাক। মাফলার পরে এসেছেন কেন? বললাম- ঠান্ডা লাগছে। এই শীতে মাফলার ছাড়া আমার চলে না। ভদ্রোলোক আমাকে অবাক করে দিয়ে বেল বাজালেন। তারপর বেয়ারাকে ডেকে এসি বন্ধ করে আমাকে চা খাওয়ালেন। তারপর আলাপ করলেন। প্রথমে কবে পাস-টাস করেছি। এসব তারপর বাড়ি কোথায় ইত্যাদি।
তারপর বললেন আসলে আমরা একজন অভিজ্ঞলোককে খুজছি।
এবার আমি ফেটে পড়লাম- এসবের মানে কী? আগেরবারতো আমি আপনার ছেলেকে বলে গেলাম যে আমি সদ্য পাস করেছি। আমার কোন অভিজ্ঞতা নেই। তাহলে ডাকেন কেন? প্রথম আমাকে সিভি দেখে বাদ দিলেন না কেন। তারপর দ্বিতীয়বার ডাকলেন কেন? আর সর্বশেষ আমি যখন আজকে সকালে ফোন করে বললাম আমি ৩টায় আসতে পারবো না, ৬টায় আসবো, তখন বললেন না কেন?
তা ওনারা কিছু বললেন না। যে মালিকপুত্র আমার ইন্টারভিউ নিলেন তিনি বললেন, “আমরা এই পোস্টে আপনাকে নিতে পারবো না। কিন্তু আমাদের যদি কোন সযোগ হয়, তাহলে আপনাকে আমরা আবার ডাকবো। সেবার আপনাকে ইন্টারভিউ দিতে হবে না।”
ম্যালা। ধন্যবাদ দিয়ে বের হয়ে আসলাম।
ঐটি আমার প্রথম চাকরি ইন্টারভিউ, যা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। ইদানীং যখন ঐ মালিক পুত্রের সঙ্গে দেখা হয় তখন মনে মনে হাসি। আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য অন্য কিছু প্ল্যান করে রেখেছিলেন বলে সেই কোম্পানিতে আমার চাকরিটা হয়নি।
আরো অনেক পরে আমি অনেক ভেবেছি এই অভিজ্ঞতার ব্যাপারটা কীভাবে সমাধান করা যাবে?
অভিজ্ঞতা না থাকা স্বত্ত্বেও আমাকে কেন ওরা ৩৫০ জন থেকে শেষ ৬ জন পর্যন্ত রেখেছে? (পরে জেনেছিলাম আমার সিভি দেখে ওনারা আমার ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছেন। কিন্তু পরে বুঝেছেন আমার বয়স বেশি কম। মানে আমাকে অভিজ্ঞতার জন্য বাদ দেননি, দিয়েছেন বয়স কম বলে!!!)
এখন আমি এর সমাধান জানি।
দুটো পথ আছে। প্রথমটা হলো শিক্ষা জীবনে নানান বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা। যেমন ধরা যাক যে প্রতিষ্ঠান কোন পণ্য বিক্রি করে, তার সেলসের জন্য এমন লোক দরকার যে কীনা যুক্তি বোঝে এবং সেটা উপস্থাপন করতে পারে। শিক্ষাজীবনে এ অভিজ্ঞতা কীভাবে হতে পারে?
বিতর্ক। যে কখনো জীবনে বিতর্ক করে নাই সে কীভাবে আমার পণ্য বিক্রি করবে? সে তো কখনো যুক্তির পিঠে যুক্তি সাজাতে শেখে নাই। কেবল আমার পন্যের গুন দিয়েতো পণ্য বিক্রি করা যাবে না।যে কখনো রচনা প্রতিযোগিতায় নাম দেয়নি, সে কীভাবে বুঝবে কীভাবে লিখলে লোককে কনভিন্স করা যায়? যখন কেউ মিড লেবেলের লোক খোঁজে তখন সে এমন কাউকে খোঁজে যার টিম স্পিরিট ভাল। তা যে কী না কখনো দলবেধে কিছু করে নাই, এমনকী একটি পিকনিকও সংগঠিত করে নাই, সে কোন ঘোড়ার ডিমটা করতে পারবে?
আবার যে কীনা রাজনৈতিক বা কোন সংগঠন করে নাই সে কেমন করে লিডারশিপের পরীক্ষায় পাস করবে?
এরকম হাজারটা উদাহরণ দেওয়া যায়। এটি হলো প্রথম বুদ্ধি। পাস করার সময় নিজের টুপিতে নানান রকমের পালক নিয়ে বের হওয়া। সেটা উপরেরগুলো যেমন তেমনি পড়াশোনা রিলেটেডও হতে পারে। যেমন আইটির শিক্ষার্থীরা যখন বের হবে তখন একটি বিসএসসি ডিগ্রী ছাড়াও তার থাকতে পারে সিসকোর সার্টিফিকেট, তার থাকতে পারে দুটি গবেষণা প্রবন্ধ, থাকতে পারে একটি কোন প্রোগ্রামের প্রোটোটাইপ। এগুলো অর্জন করা কঠিন নয়!
দ্বিতীয়টি হলো রেফারেল সিস্টেম।
অভিজ্ঞতা মানে কী? কারো সার্টিফিকেট যে সে এই কাজ জানে বা করেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে এটি কী সদ্য পাস করা কাউকে কেউ কি দিতে পারে?
পারে। এক হলো তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পারেন। ওনারা দেনও। মুশ্কিল হলো চাকরিদাতকরা স্যারদের কাছে জানতে চান না বা সে সংস্কৃতিটা আমাদের দেশে তৈরিও হয়নি। আর একটা হলো এমন কেউ যে তাকে চেনে। যেমন কেউ একজন ভাল পিএচপি পারে। এটি হয়তো আমি জানি। কারণ তাকে আমি কিছু কাছ করতে দেখেছি। আমার কাছে কেউ যখন পিএইচপির কোন লোক খুঁজে তখন তাকে আমি রেফার করতে পারি। এটি হলো রেফারেল সিস্টেম। এখানে চাকরীদাতার আমার ওপর আস্থা থাকতে হবে। কারণ আমি তখনই সার্টফাই করবো, যখন তিনি আমাকে বিশ্বাস করবেন। এখন এটা আমি হরহামেশা করি। কিন্তু রেফার করি শুধু তাদের যাদের আমি চিনি।
এই সিস্টেমটাকে কী সিস্টেমেটিক করা যায়? আমার মনে হয় যায়।
আমরা PILOT নামে একটা কর্মসূচী শুরু করেছি। ট্রায়ালও দিয়েছি। যদিও সেটা কোন অনলাইন সিস্টেম না।
এখন ভাবছি এটাকে একটা সিস্টেমে নেবো। আইডিয়া হলো আমাদের কিছু রেফারী থাকবে। যারা রেফারেল সিস্টেমে যুক্ত হতে চায়, তারা আমাদের সিস্টেম যুক্ত হবে। এটি মুক্ত মানে যে কেহ অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে করতে পারে। অথবা অন্য কোনভাবেও হতে পারে। ভাবনাটা শেষ হয়নি।
তার ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে আমরা তাকে অনলাইনে ইন্টারভিউ করতে পারি, কোন কাজ দিতে পারি বা তার কোন কাজ দেখে মূল্যায়ন করতে পারি। আমাদের রেফারীরা তাঁকে রেটিং করে রাখবে।
যখন কোন প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে লোক চাইবে, তখন আমরা তার চাহিদা অনুসারে ১:৩ (এটা একটি আর্বিটারি সংখ্যা) হিসাবে রেফার করতে পারবো। সেক্ষেত্রে যারা চাকরি দেবেন তাদের সাশ্রয় হচ্ছে একটা লম্বা লিস্ট থেকে সর্ট লিস্টিং এর কাজটা তাদের আর করতে হচ্ছে না।
তার চাকরী প্রার্থীরাও তাদের কম্পিটেন্সি সম্পর্কে চাকরি দাতাকে জানাতে পারছেন।
তবে, ঝামেলা হচ্ছে, আমাদের দেশে কী এমন সিস্টেম দাড় করানো যাবে?
এ নিয়ে ক’দিন আগে একটা স্ট্যটাসও দিয়েছি। কয়েকজন সিস্টেমটা বানিয়ে দেবেন বলছেন। আগামি সপ্তাহে এ নিয়ে একটা আরোচনা করে ফেলবো। মার্চের মধ্যে একটা কিছু দাড় করাতে চাই। তবে কেবল চাকরি বা প্লেসমেন্ট না, ইন্টার্নশীপ, ভিজিট এসবও রাখতে চাই এর মধ্যে।
দেখা যাক। শেষ পর্যন্ত এটা করা যায কী না।
আল্লাহ ভরসা।
One Reply to “চাকরি চাই : নতুনদের জন্য রেফারেল সিস্টেম-১”
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.
Sir, I want to know about the updated news about pilot project.