ইশ, বাসটা একদম নতুন আছিল!
২০১৩ সালের কোন এক রাতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার পথে এক বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে বাসটি রাস্তা থেকে খাদে পড়ে। বাসের প্রায় সব যাত্রীই আহত হোন। এর মধ্যে গুরুতর আহত ৬ জনকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মাত্র একজন বেঁচে যান। বাকী ৫ জনই মারা যান। বেঁচে যাওয়া সংবাদর্মীটি নানা চড়াই উৎরাই পার হয়ে এখনও সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন নি।
ঘটনার কয়েক বছর পর সংবাদকর্মীর সঙ্গে ঐ বাসের হেলপারের দেখা হয়। সংবাদকর্মী ২০১৩ সালের ঘটনাটি তাকে মনে করিয়ে দিয়ে জানতে চান ঐ ঘটনা তার মনে আছে কী না। তখন ঐ হেলপারটি প্রথমেই বলল- ইশ, বাসটা একদম নতুন আছিল!
না, ৫টি তাজা প্রাণের চলে যাওয়া কিংবা অনেকের আহত হওয়া নিয়ে তার কোন বিকার হয়নি, সে কেবল ভেবেছে ওতো দামী বাসটার কথা। মানুষের জীবনের চেয়ে বাসই এ বদ্বীপে দামি।
গত ২১ অক্টোবর, নিরাপদ সড়ক দিবসের আগের দিন ঢাকার কাকরাইলে একটি মুক্ত আলোচনা হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা রোধের কার্যকর উপায় বের করা নিয়ে। সিআরপি, ব্র্যাক, নিরাপদ সড়ক চাই ও প্রথম আলো যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে। সেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা অনেকেই তাদের কাহিনী বর্ণণা করেন। বেশিরভাগ গল্পই একই। বেপরোয়া গাড়ি চালনা, অসতর্কতার সঙ্গে রাস্তা পাড় হওয়া, ত্রুটিযুক্ত যানবাহন , বিপদজনক রাস্তা – প্রায় সব কারণই আমাদের জানা। কী করতে হবে সেও আমরা জানি। কিন্তু কি এক আশ্চর্য কারণে এখনো প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ টি পরিবার পথে বসে যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য। ঝড়ে যাচ্ছে অনেক তাজা প্রাণ।
আর সেই সংখ্যা নিয়ে আমরা করছি বিতর্ক। সেদিনের সভাতে জানাগেল বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা এক সংস্থার সঙ্গে অন্য সংস্থার মিল নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব নাকচ করে দিলেন নিরাপদ সড়ক চাই-এর সহ-সভাপতি। যদিও তিনি জানালেন প্রতিদিন ৬টি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে তারা সংখ্যাটি সংগ্রহ করে। তাদেরকে কে বোঝাবে, গ্রামে গঞ্জে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার খবর ঐ ৬টি জাতীয় পত্রিকায় খবর হয় না।
ভ্যালেরি টেইলরের প্রতিষ্ঠিত পক্ষঘবতগ্রস্থদের চিকিৎসাস্কেন্দ্র সিআরপি বলছে তাদের কাছে আগের তুলনায় গুরুতর আহত রোগী আসার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে! সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু এখন একটি সংখ্যাতে পরিণত হয়েছে। আর সেই সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।
কিন্তু কেউ ভাবছে না। একটি মৃত্যু একটি পরিবারকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
কেউ ভাবছে না, কেউ না।