শিক্ষক ডট কমে প্রাথমিক গণিতের কোর্স
গণিত অলিম্পিয়াড নিয়ে কাজ করার সময় থেকে সহজভাবে গণিতের কোর্স করানো যায় কীনা সেটা নিয়ে আমি কিছুটা ভাবাভাবি করেছি। তারপর আমি আমার বাড়ির আশেপাশের কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছে গিয়ে বলেছি আমাকে তাঁর স্কুলে একটা গণিতের কোর্স করাতে দিলে আমি খুশি হব। আমাকে কোনো টাকা পয়সা দিতে হবে না। ক্লাস সিক্স বা সেভেনেরটা দিতে পারেন কারণ তাতে পিএসসি বা জেএসসি ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। তা, কোন স্কুল রাজি হয়নি! ওনারা হয়তো ভেবেছেন ব্যাটা ইঞ্জিনিয়ার গণিতের কী জানে? ব্যাটার তো কোন টিটিও নাই। ব্যাটা আমাদের রেজাল্টের বারোটা বাজাবে।
তো, ঘটনার কথা লিখে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম আমার ফেসবুক পাতায়। সেটা দেখে শিক্ষক ডট কমের উদ্যোক্তা আমাদের রাগিব হাসান আমাকে “লিখে দিল বিশ্ব নিখিল দুই বিঘার পরিবর্তে”। বললো স্কুলের দ্বারে দ্বারে ঘোরার দরকার কি। আপনি একটা ভিডিও কোর্স করে ফেলেন। আমি অবশ্য একটু ইতস্থত করেছি কারণ ক্লাসে অনেক ফীডব্যাক পাওয়া যায় তাৎক্ষনাৎ, সেটা ভিডিও কোর্সে পাওয়া যায় না। তারপর বিশ্ব নিখিলের জন্য রাজি হলাম।
আমার টার্গেট গ্রুপ হল মাধ্যমিকের শুরুর শিক্ষার্থীরা। কিন্তু, একটা ছোট সার্ভে আর গণিত অলিম্পিয়াডের অভিজ্ঞতা থেকে জানি ওদের অনেকের প্রাথমিক ভিত্তিটা দুর্বল। তাই, শ্রেণী ভিত্তিক ক্লাসের আগে ভাবলাম একটি প্রাথমিকের কোর্স করানো যাক। মোটামুটি ১০-১২টা লেকচার হলেই হয়ে যাবে। সে ভাবে শুরু করলাম। শিক্ষক ডট কমে প্রাথমিক গণিত (৫ম শ্রেণী) শিরোনামে। এখান থেকে সব লেকচারের লিংক পাওয়া যাবে।
কোর্সটি একেবারে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য। বাংলাদেশের জাতীয় কারিকুলামের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য কোর্সটি ডিজাইন করেছি। তবে, কোর্সের শুরুতে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত যে সকল মৌলিক বিষয় শিক্ষার্থীদের ইতোমধ্যে আয়ত্ত্ব হয়েছে তাও অন্তর্ভুক্ত রেখেছি। অর্থাৎ এটি শুরু হয়েছে সংখ্যার ধারণা, সংখ্যা লেখার পদ্ধতি, রোমান সংখ্যা পদ্ধতি হয়ে এখনকার দশমিক পদ্ধতি দিয়ে। এরপর সাধবরণ চার নিয়মের কিছু বিষয়। মৌলিক সংখ্যার ধারণা এবং মৌলিক সংখ্যা চেনার উপায়। ফিরে দেখা হবে ঐকিক নিয়ম এবং যদিও সিলেবাসে নেই তারপর চলিত নিয়মের ধারণা। এরপর পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ্যক্রমের গুণ, ভাগ, চার প্রক্রিয়া, গড়, লসাগু/গসাগু, গাণিতিক প্রতীক ও বাক্য, সাধারণ ও দশমিক ভগ্রাংশ, শতকরা, পরিমাপ, সময় ইত্যাদি। পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা হলেও এটি পাঠ্যবই-এর ধারাবাহিকতা অনুসরণ করব না বলেই ঠিক করেছি।
কিন্তু ক্লাস শুরু করার পর দেখলাম মাধ্যমিকে শক্তপোক্ত হতে হলে আরো কিছু ফাউন্ডেশন ভাল হওয়া দরকার। সেভাবে যত দিন যাচ্ছে ততই কোর্সটা লম্বা হযে যাচ্ছে। আজকে কিছুক্ষণ আগে এর ১৬তম লেকচার প্রকাশ করেছি। এবং আবার কোর্সের আউটলাইন চেঞ্জ করেছি। তাতে দেখা যাচ্ছে ২৪-২৫টি ক্লাস লেগে যাবে।
মাঝখানে বেশ লম্বা সময় এই কোর্সের ক্লাস নেওয়া হয়নি। এখন সপ্তাহে ২-৩টা করে করার চেষ্টা করছি যাতে মার্চের মধ্যে যেন এই কোর্সটা শেষ করা যায়।
তবে, এই কোর্সের আউটরিচ খুব বেশি না। যা আসলে মনে করায় দেয় যে, আমাদের দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার আসলে ফেসবুক আর বিশেষ বিশেষ ওয়েবসাইটকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। আর একটি কারণ সম্ভবত আমার টার্গেটগ্রুপের বেশিরভাগই ইন্টারনেট ব্যবহার করে না। এটার জন্য একটা কিছুর বুদ্ধি বের করার চেষ্টা করতে হবে। সব ক্লাস শেষ হলে এই ভিডিওগুলো একটা ডিভিডিতে দিয়ে দেওয়া যায় কীনা সেটাও চেষ্টা করবো।
প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আমার অবশ্য কয়েকটা মোটিভেশনাল বই আছে। এর মধ্যে গড়ের মাঠে গড়াগড়িতে এই কোর্সের সহায়ক কিছু লেখা পাওয়া যাবে। গড়ের মাঠে গড়াগড়ি তাম্রলিপি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে বছর দুযেক আগে।
এই কোর্সের পাশাপাশি ৬ষ্ঠশ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ধরে একটি এবং জ্যামিতির প্রথম পাঠ নামে আর একটি কোর্স শুরু করে দিব মার্চ-এপ্রিল থেকে। এর মধ্যে আমি আর সুব্রত দেবনাথ গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য জ্যামিতির একটা কোর্স করিয়েছিলাম ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের, ফার্মগেটে। সেটার ক্লাসনোটগুলো পেলেই এই কোর্সটা মনে হয় তাড়াতাড়ি গুছিয়ে ফেলা যাবে। নতুবা আবার নতুন করে করতে হবে।
বিদুষীর স্কুল বন্ধ থাকায় ইদানিং ওকে অঙ্ক করাচ্ছি। সেটা করতে গিয়ে মনে হচ্ছে একেবারে এলিমেন্টারি পর্যায়ের জন্যও কোর্স করানো উচিৎ। বিদুষীকে পড়ানোর অভিজ্ঞতা আমার ব্লগে ধরে রাখবো। পরে হয়তো কোন বুদ্ধি বের করা যাবে।
আমার মত অলস লোকরা অবশ্য বেশি পরিকল্পনা করে। শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছু হয় না। কী আর করা। সবাইরে দিয়ে তো সব কিছু হয়না।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ভাল রাখুন, পেট্রোল বোমা থেকে রক্ষা করুন।