প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ : গণিতের প্রস্তুতি -৩ : কাঠের টুকরার সমস্যা
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ : গণিতের প্রস্তুতি -২
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ : গণিতের প্রস্তুতি -১
নিয়োগ পরীক্ষার গণিতের অংশে যে সমস্যাগুলো দেওয়া থাকে সেগুলোর নানা রকম সমাধান হতে পারে। আমাদের খুজতে হবে সমাধানের দ্রুততর পদ্ধতি কোনটি। এই লেখাতে যে সমস্যাটির বিশ্লেষন করেছি সেটি একটি ইউরোপীয় ক্লাসিকাল সমস্যা। হুবহু এমন সমস্যা আপনি পাবেন না। কিন্তু এরকম সমস্যা আপনাকে আউট অব দ্যা বক্স ভাবনায় তৈরি হতে সাহায্য করবে।
একটা ১০০ মিটার দীর্ঘ একটি কাঠের টুকরাকে ১ মিটারের ১০০টি টুকরায় ভাগ করতে হবে। কিন্তু দেখা গেল কে জানি সেটিকে ৩০ টুকরা করে রেখেছে। ৩০ টুকরার কোনোটি ৩ মিটার, আবার কোনোটি ৪ মিটার। এখন সব টুকরাকে ১ মিটার দৈর্ঘ্যের ১০০টি টুকরায় পরিণত করতে মোট কতবার কাটতে হবে?
এই সমস্যার সমাধান নানা ভাবে করা যায়। এরকম অজানা কিছু থাকলে আমরা বীজগণিতের সাহায্য নেই। যেমন, ধরা যাক, ওখানে ক সংখ্যক ৩ মিটার ও খ সংখ্যক ৪ মিটার দীর্ঘ কাঠের টুকরা ছিল।
তাহলে আমরা লিখতে পারি ক+খ = ৩০
আবার, ৩০টি টুকরাকে জোড়া দিলে হবে ১০০ মিটার,
মানে ৩ক+৪খ =১০০
ওপরের দুটি সমীকরণ সমাধান করা সহজ। প্রথম সমীকরণকে ৩ দিয়ে গুণ করে দ্বিতীয় সমীকরণ থেকে বিয়োগ দিলে আমরা পাব খ = ১০। অর্থাৎ ক = ২০
এখন ৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে কাঠের টুকরাকে ১ মিটারের টুকরায় পরিণত করতে হলে দুইবার কাটতে হবে। যেমন ৩ বার কাটতে হবে ৪ মিটারকে।
ফলে মোট কাটতে হবে
২০×২+১০×৩ = ৭০ বার!
আবার পাটিগণিতের পদ্ধতিতেও আমরা এটা করতে পারি। যদি ৩০টি কাঠের টুকরাই ৩ মিটারের হতো তাহলে সেগুলো জোড়া দিয়ে আমরা পেতাম ৩০×৩ = ৯০ মিটার। অর্থাৎ কম পড়ত ১০০-৯০ = ১০ মিটার।
কাজেই এই ১০ মিটার এসেছে ৪ মিটারের টুকরা থেকে। প্রতিটি ৪ মিটারের টুকরা ৩ মিটারের টুকরা থেকে (৪-৩) = ১ মিটার বড়। অর্থাৎ যদি ১ মিটার কম হতো তাহলে একটি ৪ মিটারের টুকরা থাকত। অর্থাৎ ১০ মিটারের জন্য ১০টি ৪ মিটারের টুকরা দরকার।
তাহলে, বাকি (৩০-১০) = ২০টি ৩ মিটারের টুকরা।
পরেরটুকু আমরা জানি।
আমাদের লক্ষ্য কিন্তু দ্রুত এই সমস্যার সঠিক সমাধান করা। এটি করার জন্য ওপরের কোন পদ্ধতি ছাড়াও সেটা করা যাবে। এমনকি কতটি ৪ মিটার আর কতটি ৩ মিটারের টুকরা তার হিসাবও করার দরকার নাই।
কারণ ১০০ মিটারের কাঠটি ১ মিটারের ১০০টি টুকরা করতে মোট ৯৯ বার কাটতে হবে। এই কাঠটিকে ইতিমধ্যে ২৯ বার কেটে ৩০ টুকরা করা হয়েছে। কাজেই, আরও (৯৯-২৯) = ৭০ বার কাটলেই সেটি মোট ১০০ টুকরায় পরিণত হবে।
অর্থাৎ আর ৭০ বার কাটতে হবে।
এই যে একটা জটিল গাণিতিক সমস্যা ভিন্নভাবে সমাধান করা এই দক্ষতা অর্জনের কাজটাই হলো কনসেপ্ট থেকে সমাধানে পৌছানোর মেদ বর্জিত পদ্ধতি। যারা এই তিন সমাধান লক্ষ করেছেন, তারা আশাকরি মূল ব্যাপারটা ধরতে পারছেন।
নিয়োগ পরীক্ষাতে আমাদেরকে এক রকম বোকা বানানোর একটা প্রচেষ্টা প্রশ্ন কর্তার থাকে। কারণ তার উদ্দেশ্য হলো বাদ দেওয়া। ৩০ লক্ষ থেকে ২৯ লক্ষ ৭০ হাজারকে বাদ দেওয়ার জন্য এর বাইরে ওনার আর কোন বুদ্ধি নাই।
আপনি যদি সতর্ক থাকেন তাহলেই কেবল এই ফা্ঁদ এড়াতে পারবেন।
এই আলোচনা করছি সম্প্রতি আমরা একটা পাইলট কোর্স করিয়েছি। সেটার অভিজ্ঞতার আলোকে এবং কোর্সের পরিমার্জনের লক্ষ্য নিয়ে।
দেখা যাক নিয়োগপ্রার্থীদের কতটুকু সাহায্য করতে পারি।