প্লে নাইস বাট উইন-৩: মেলা যখন ডিজনীল্যান্ডের সমতূল্য
আগের পর্ব – প্লে নাইস বাট উইন-২: প্ল্যান করে খেলতে হবে
জুন ১৯৮২ সালে হিউস্টন হয়ে গেল ন্যাশনাল কম্পিউটার কনফারেন্সের ভ্যেনু। মাইকেল ডেলের আনন্দ দেখে কে? এবার অনেক কিছু সামনা সামনি দেখা যাবে। ৬৫০টি কোম্পানি ৩ হাজার ২০০ বুথ। যে দুইটি লাগোয়া সেন্টারে কনফারেন্স হবে সেটার এয়ারকন্ডিশনারগুলো মোটেই কাজের নয়। আর হবে জুনের তপ্ত গরমে। তারপরও ডেলের জন্য এটা একটা আনন্দের ঘটনা। “আমার জন্য এটা ছিল ডিজনীল্যান্ডের সমতূল্য” লিখেছেন ডেল। (বই পড়ার সময় আমিও তার আনন্দের ব্যাপারটা ধরতে পেরেছি। কারণ বুয়েটে পড়ার সময় দেশে প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্র উৎসব হয়। ৩০০ টাকা দিয়ে সিজন টিকেট কেনা যায়। যথারীতি বিকালের নাস্তা স্কিপ করে আমি টিকেট কেটেছিলাম। পড়ো পড়ো পড়ো-তে এই বিষয়ে লিখেছি)।
ডেল ঘুরে ঘুরে দেখলো বুথগুলোতে রয়েছে সিস্টেম, সফটওয়্যার, পেরিফেরাল, টার্মিনাল। সবচেয়ে খুশি হলো সুগার্টের ১০ মেগার হার্ডডিস্ক (ST412) পেয়ে। দামও রিজনেবল। সবচেয়ে বড় কথা এটার সাইজ সোয়া পাঁচইঞ্চি ফ্লপির সাইজেই। ফলে, অনায়াসে বসে যাবে পিসির ভিতরে। শুধু একটা ফ্লপির স্লটে বসাই দিলেই হবে। ১০ মেগা শুনে যারা হাসছে তাদের জানা ভাল যে তখনকার পিসিগুলোতে কোন হার্ডড্রাইভই থাকতো না। ১০ মেগা এখনকার গিগা গিগার সমতূল্য!
মেলা শেষে ডেলের কম্পিউটারের অনেক উন্নতি হয়ে গেল। এক্সট্রা মেমোরী (RAM), ১০ মেগা হার্ডডিস্ক। ব্যাপক উন্নতি। অনেক টুকটাক সফটওয়্যার হার্ডডিস্কে রাখা যাচ্ছে।
সে সময় কয়েকটা পোলাপানকে কম্পিউটার শেথাতো ডেল। সেরকম এক ছাত্রের বাবা ছেলের কাছে ডেলের ‘উন্নত’ কম্পিউটারের কথা শুনলো। তিনি ডেলকে বললেন তার কম্পিউটারের উন্নয়ন ডেল করে দিতে পারবে কিনা।
সানন্দে রাজি হলো ডেল। দেখা গেল ঐ ছাত্রের উকিল বাবা বেশ খুশি। উনি তো পার্টসের দাম দিলেনই সঙ্গে ডেলকে তার পরিশ্রমের জন্য একটা ফীও দিলেন। বেশ ভাল অঙ্কের। ডেলও খুশি।
ঐ উকিল কিন্তু সেখানে থামলেন না। তিনি তার উন্নত কম্পিউটারের গল্প করলেন অন্যান্য উকিল আর ডাক্তারদের সঙ্গে। অচিরেই মাইকেল ডেল অনেক কল পেয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে কিছু ইনকামও। গড়ে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট লাগতো তার এই কাজে।
এর মধ্যে একটা মজার ঘটনা ঘটলো। একদিন এক ডাক্তার ডেলকে ফোন করে জানালো তারও একটা উন্নত কম্পিউটার দরকার। কোন মডেলের পিসি কিনলে ডেলের জন্য কাজটা সহজ হবে?
বিংগো! ডেল সঙ্গে সঙ্গে বললো, “আপনি যদি না কিনে থাকেন, তাহলে পিসি কেনার কাজটাও আমাকে ছেড়ে দিতে পারেন। আমি আপনার চাহিদা মতো পিসি কিনে সেটিকে আপগ্রেড করে আপনাকে দেবো?”
তথাস্তু বললেন ডাক্তার।
ডেল একটা নতুন পিসি কিনলো, বাইট ম্যাগাজিনের শেষ পাতাগুলো দেখে আলাদা পার্টসগুলো অর্ডার করলো। তারপর সেগুলো স্লটে বসিয়ে নিজের ট্যাংকে করে ডাক্তারের কাছে পৌঁছে দিল।
ডাক্তার খুশী। ডেলও খুশি।
ডাক্তারের কাছে শুনে শুনে অনেকেই অর্ডার করতে শুরু করলো।
আর মাইকেল ডেলও ১৭ বছর বয়সে একটা ব্যবসাতে ঢুকে গেল।