প্লে নাইস বাট উইন-২: প্ল্যান করে খেলতে হবে
মাইকেল ডেলের হাইস্কুল টেক্সাসের হিউস্টনের মেমোরিয়াল হাই। সেখানে ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষার পর সামারটা ছিল ডেলের জন্য খুবই ঘটনাবহুল। তার আগের বছর, আগস্টের ১২ তারিখ, ১৯৮১ বাজারে এসেছে আইবিএমের পার্সোনাল কম্পিউটার 5150। দাম ১ হাজার ৫৬৫ ডলার (এখনকার হিসেবে ৩ হাজার ৯০০ ডলার)। যথারীতি ডেল একটা কিনে খুলে টুলে দেখে ফেলেছে।
এর মধ্যে সামারের ছুটি এসে পড়লো। পরীক্ষা দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্সও হলো। ডেলের বাবা তাকে বাসার স্টেশন ওয়াগনটা ব্যবহার করতে দিল – “এটা একটা ট্যাংক। এক্সিডেন্ট হলেও তুমি বেঁচে যাবা”।যাহোক এই গাড়ি তার মোবিলিটি বাড়িয়ে দিল অনেক। আগে সারা শহরে ডেল তার সাইকেলে ঘুরে বেড়াতো। এখন গাড়ি হওয়াতে লাভ হলো।
গ্রীষ্মের বন্ধে ডেল একটা নতুন কাজ পেলো – এখন বন্ধ হয়ে যাওয়া হিউস্টন পোস্টের জন্য গ্রাহক যোগাড় করা। আরও অনেক টিনএজারও এই কাজ পেলো। আন্দাজে বিভিন্ন লোককে ফোন করে তাকে গ্রাহক হওয়ার জন্য অনুরোধ করা। স্বভাবতই ডেলের লক্ষ্য হলো যতো বেশি সম্ভব গ্রাহক বানাতে পারা।
কুইকলি তিনটি বিষয় আবিস্কার করলো সে।
১. ফোনের ঐ পারের লোক যদি বুঝতে পারে যে ফোনের এপারের লোকটা তার মতো, তাহলে সে কথা বলে এবং তার গ্রাহক হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কাজে ডেল টেক্সান টোনে কথা বলতো যাতে এই সুযোগটা নিতে পারে।
২. যারা নতুন বাসায় ওঠে তারা পত্রিকার গ্রাহক হতে চায়। নতুন জায়গাতে গিয়ে পত্রিকা যোগাড় করার একটা সমস্যা হয়তো ছিল।
৩. যারা নতুন বিয়ে করেছে তারাও পত্রিকার গ্রাহক হতে আগ্রহী হয়। ডেলের ধারণা নতুন দম্পতিরা নানা তথ্য ও এক্সাইটমেন্ট খুঁজে।
এটুকু আবিস্কার করে ডেল তার পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলে। কাজি অফিসে গেলে নতুন দম্পতিদের খবর পাওয়া যাবে। কিন্তু কেন তারা তাকে তথ্য দেবে?
তারপরই মনে হলো “আরে, তথ্য অধিকার আইন তো আছে”।
কাজে কাজি অফিসে গিয়ে গত একবছরের সব বিয়ের খবর দাবী করলো। কাজির মুহুরী অবাক হয়ে জানতে চাইলো সে এটাই চায় কিনা। যখন সিওর হলো তখন গিয়ে মোটা বালাম বই এনে তাকে দিলো। ডেল বালাম বই থেকে নাম-ঠিকানা-ফোন নম্বর একটা খাতাতে তুলতে শুরু করলো। একটু পরই তার মনে হলো আরে আমার তো এপল-II আছে। বাসায় গিয়ে এপল নিয়ে এসে সরাসরি টাইপ করতে শুরু করলো। ডেল জানে এটা তার জ্যাকপট।
রাতে বাসায় ফিরে তার মনে হলো হিউস্টনে মোট ১৬টা কাউন্টিতে ১৬টা কাজি অফিস আছে। তার বন্ধুরা আছে। বন্ধুদের অনেকের কম্পিউটার আছে আর দরকার হলে তার এপলও ধার দেওয়া যাবে। কাজে ডেল তার হাইস্কুলের কয়েকজন বন্ধুকে হায়ার করে ফেললো এই কাজে।
তারপর সে বের হলো নতুন এপার্টমেন্টের খোঁজে।
“আমি এসেছি হিউস্টন পোস্ট থেকে”। এপার্টমেন্টের কেয়ারটেকারকে বললো – এই ফরমটা পূরণ করে দিলে পরের কয়েক সপ্তাহ সবাইকে পত্রিকা উপহার দেওয়া হবে।
…
…
…
নতুন দম্পতি আর নতুন এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের সবার কাছে ডাকযোগে পত্রিকার গ্রাহক হওয়ার অফার পাঠিয়ে দিল মাইকেল ডেল।
সেই সামারে মাইকেল ডেল মাত্র ১৮ হাজার ডলার আয় করে।
লেসন লার্ন কী –
১. ডেটা থেকে ঠিকমতো তথ্য বের করে আনতে হবে, আর ডেটার জন্য চোখ কান খোলা রাখতে হবে
২. সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজে নেমে পরতে হবে
৩. সব কাজ একা করা যাবে না, টিম বানাতে হবে
৪. কোম্পানি যা করতে বলছে সেটাতে স্টিক না থেকে নিজের বুদ্ধিও খাটাতে হবে।
ভাল খেলো কিন্তু জিততে হবে।
One Reply to “প্লে নাইস বাট উইন-২: প্ল্যান করে খেলতে হবে”