প্লে নাইস বাট উইন-১ : ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ
আমাদের দেশে অনেক কিছু ফ্রি-তে পাওয়া যায়। যেমন কোন সেমিনারে গেলে মিনিমাম একটা কলম আর প্যাড পাওয়া যায়। ঐ সেমিনারের উদ্দেশ্য যদি হয় টাকা খরচ করা তাহলে একটা ব্যাগ এবং কোন কোন সময় একটা পেন ড্রাইভও পাওয়া যায়। ভালমন্দ খাওয়া তো জুটেই। এগুলোর মধ্যে দোষের কিছু নাই। কিন্তু এসব প্রাপ্তি আমাদের অনেক সময় হোমওয়ার্কের কথা ভুলিয়ে দেয়। ফলে আমরা সেখানে শুধু হাত-ঠ্যাং নিয়ে হাজির হয়ে যাই। ফলে দেখা যায় ঐ প্রোগ্রাম থেকে আমার যে একটা অভিজ্ঞতা হওয়ার কথা ছিল সেটা আর হয় না।
বিলিয়ন ডলার স্টার্টআপের গল্প লেখার জন্য আমাকে প্রায়শ অনেক অনেক লোকের গল্প পড়তে হচ্ছে। কোনটা মোটা বই, কোনোটা এইচবিআরের কেস স্টাডি, কোনটা ব্লগ ইত্যাদি। পড়তে গিয়ে একটা জেনারেল ট্রেইট দেখতে পাচ্ছি। সেটা হলো বিনিয়োগ। ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ। পরে ভাল করেছেন এমন লোকদের ছোটবেলা হোক বা কলেজ বেলা হোক দেখা যাচ্ছে তারা নানাভাবে ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করেন। এই বিনিয়োগ শুধু শ্রম ও সময়ে সীমাবদ্ধ থাকে না। নিজের কঠিন পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্জিত টাকাও থাকে।
শ্রম ও সময়ের কথা বললে আমার প্রথমেই জামিলুর রেজা স্যারের কথা মনে হয়। মেট্রিক পরীক্ষার পর পুরো সময় স্যার দুপুরের খাবার খেয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরিতে চলে যেতেন। ফিরতেন লাইব্রেরি বন্ধ হলে। আমি কখনো জানতে চাইনি ঐ সময়ে স্যার কতো কতো বই পড়েছেন কিন্তু জানি এই পড়ার অভ্যাসই স্যারকে একজন জেআরসি বানিয়েছে।
প্রথম আলো সম্পাদক মতি ভাইকে দেখছি প্রচুর পড়তে পারেন। সকালে দিনের অনেকগুলো পত্রিকাতে চোখ বুলিয়ে, প্রথম আলোর পোস্ট মর্টেম করে তাঁর দিন শুরু হয়। দিনশেষে যোগ করতে পারলে দেখা যাবে এর বাইরে বই পড়েছেন, গান শুনেছেন এবং সপ্তাহান্তে হয়তো একটা সিনেমাও দেখে ফেলেছেন। যারা আবুল হাসনাতের “হারানো সিড়ির চাবির খোঁজে” পড়েছেন তারা জানেন দুই বন্ধু তাদের শ্রম আর সময়কে কোথায় বিনিয়োগ করেছেন। তবে, আমার কাছে সবচেয়ে জরুরী শিক্ষা মনে হয় ১৯৫৬ সালে বিশ্ব অলিম্পিকের খোঁজ রাখার জন্য কোলকাতার দ্যা স্টেটসম্যান পত্রিকার গ্রাহক হওয়া। প্রতিদিন অলিম্পিকের বিস্তারিত জানার জন্য একজন স্কুল ছাত্র তাঁর জমানো টাকা খরচ করছে, ভাবা যায়।
গত কয়েকদিন ধরে আমি পড়ছি ডেল কম্পিউটার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ডেলের বই “প্লে নাইস বাট উইন”। বাবার চেম্বারের জিনিষপত্র ডিস-ইনফেক্ট করে শুরু। তারপর ফোর সিজন যখন তাদের শহরে চালু হলো তখন সেখানে ডিসিগিরি, তারপর ওয়াটার বয় হয়ে অভ্যর্থনাতে উন্নতি। ঘন্টায় আধা বা এক ডলার। সেখান থেকে অন্য একটা মেক্সিকান রেস্তোরাতে আওয়ারলি রেটের উন্নতি। এমন করে ১৩০০ ডলার জমানো বালক সেই টাকা দিয়ে কোথাও বেড়াতে গেল না, কোন নতুন প্যান্ট কিনলো না (বুয়েটে স্কলারশীপের টাকা দিয়ে আমরা একটা প্যান্ট, একটা শার্ট আর হিজ হিজ হুজ হুজ সিস্টেমে চাইনীজ খেতাম। তিনদিনেই ঐ টাকা শেষ হয়ে যেতো)। কী করলো?
সদ্য বের হওয়া এপল-II কিনলো। বাসায় নিয়ে এসে প্রথমদিনই সেটা খুলে দেখলো ভিতরে কী আছে!!! এই বিনিয়োগ ডেলকে সমৃদ্ধ করেছে, অন্যদের থেকে এগিয়ে রেখেছে।
ডেলের কাহিনী পড়ার আমার একটা উদ্দেশ্য হলো বোঝার চেষ্টা করা কোন সাহসে তিনি একটা বিলিয়ন ডলার পাবলিক কোম্পানিকে প্রাইভেট কোম্পানিতে রূপান্তরিত করতে পারেন। আবার সেটা নিয়ে প্রবল বিক্রমে ফিরে আসেন শেয়ার বাজারে!
তার সাহসের একটা ভিত্তি হলো তার বাবার বাণী। ছোটবেলায় খেলতে যাওয়ার সময় তিনি ছোট ডেলকে পরামর্শ দিতেন ভাল খেলতে হবে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু জিততে হবে।
কারণ বিজয়ীকেই মানুষ মনে রাখে।
One Reply to “প্লে নাইস বাট উইন-১ : ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ”