বিশ্ব প্রোগ্রামিং অলিম্পিকে স্বর্ণপদক পাবে কোন দেশ?
দেশভিত্তিক কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর আলোচনায় প্রথমে আসে প্রোগ্রামিং-এর সূতিকাগার দেশটির কথা। ডেনিস রিচি, ডোনাল্ড নুথ, বিল গেটস-দের দেশ আমেরিকা। অনেকে ভারতের কথাও ভাবে কারণ আইটি রপ্তানীতে সেটি আবার সবার ওপরে। যারা প্রোগ্রামিং কনটেস্টের খবর রাখে তারা জানে রাশিয়ার প্রোগ্রামাররাও যথেষ্ট সমীহ আদায় করতে জানে।
কিন্তু সত্যি সত্যি কোন দেশের প্রোগ্রামাররা সবচেয়ে ভাল?
ডিরেক্ট কোন ফর্মুলা নাই এটি বের করার। ভার্সিটি লেবেলের শিক্ষার্থীদের কনটেস্ট হয় সেটা দিয়ে মাপা যায় কিন্তু বড়দের তো নাই। তাহলে?
উপায় হলো বিভিন্ন অনলাইন ফোরামের পার্টিসিপেন্টদের নিয়ে গবেষণা করা। যেমনটা করেছে হ্যাকাররেঙ্ক।
হ্যাকাররেঙ্ক একটা কোম্পানি যারা প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং নিয়ে কাজ করে। সেখানে প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন প্রোগ্রামিং চ্যালেঞ্জ প্রকাশ করা হয়। মানে সমস্যা দেওয়া হয় যার সমাধান যে কেও করতে পারে। ওদের কমিউটিনিটিতে এখন প্রায় ১০ লক্ষের বেশি প্রোগ্রামার আছে। তারা নানান কিছু নিয়ে কাজ করে। পাইথন থেকে সিকিউরিরিট। কী নয়?
সম্প্রতি তারা একটি হিসাব নিকাশ করেছে তাদের কমিউনিটির পারফরম্যান্স নিয়ে। হ্যাকররেঙ্কে ডেভেলপারদের রেঙ্কিং করা হয় তাদের পারফরম্যান্স দিয়ে।
তাদের হিসাবে গণিত, ফাংশণাল প্রোগ্রামিং এবং ডেটা স্ট্রাকচারের বেলায় রাশিয়া আর চীন সমানে সমানে কিন্তু এলগরিদমের বেলায় রাশিয়া থাকে এগিয়ে। আমেরিকা আর ভারতের সবচেয়ে বেশি প্রোগ্রামার হ্যাকাররেঙ্কে থাকলেও তাদের অবস্থান যথাক্রমে ২৮ ও ৩১ তম। আর আমাদের বাংলাদেশের অবস্থান ৪৪তম।
জনপ্রিয়তায় এলগরিদম
হ্যাকররেঙ্কে মোট ১৫টি ডোমেইনের চ্যালেঞ্জ থাকে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হলো এলগরিদম। প্রায় ৪০% ডেভেলপার এখানে প্রতিযোগিতা করে। এর মানে হলো ডেটা সর্টিং, ডাইনামিক প্রোগ্রামিং, কী-ওয়ার্ড সার্চিং এবং যুক্ত প্রয়োগের ব্যাপারটাতেই বেশিরভাগের আগ্রহ। এলগরিদমের সমস্যা সমাধানে যে কোন প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা যায়। এটাই হয়তো জনপ্রিয়তার কারণ। তাছাড়া গুগল, ফেসবুক কিংবা বুকিং ডট কমের মতো জায়গায় প্রোগ্রামারের চাকরির ইন্টারভিউতে এলগরিদমেরই প্রাধান্য থাকে। এটাও জনপ্রিয়তার আর একটা কারণ।
তো এই ১৫টি ডোমেইনের হার্যক্রমে কারা এগিয়ে থাকছে?
হ্যাকররেঙ্কের গবেষকরা প্রথমে প্রত্যেক দেশের একটা গড় স্কোর বের করেছেন সব ডোমেইনের জন্য। (পরিসংখ্যানের ভাষায় জেড-স্কোর)। তারপর গড় করা হয়েছে। পরিসংখ্যানের মারপ্যাচ থেকে বের হয়ে তারপর এই স্কোরকে ১-১০০ এর মধ্যে ফেলা হয়েছে।
অংশগ্রহণের সংখ্যার হিসাবে শীর্ষ ৫০টি দেশের জন্য তারা তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছে।
চীনের প্রোগ্রামাররা ১০০ নম্বর পেয়ে সবার শীর্ষে থাকলেও রাশিয়ার সঙ্গে তাদের ব্যবধান চুল পরিমান। কারণ রাশিয়ার স্কোর ৯৯.৯। পোলান্ড ও সুইজারল্যান্ডের সকোর ৯৮ হলেও ৫৭ নিয়ে তালিকর সবচেয়ে নিচে রয়েছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের স্কোর ৬৭.৮ এবং অবস্থান ৪৪।
যে দুইটি দেশের প্রোগ্রামারের সংখ্যা হ্যাকররেঙ্কে সবচেয়ে বেশি সেই ভারত আর আমেরিকার স্কোর হলো যথাক্রমে ৭৬ ও ৭৮ এবং অবস্থান যথাক্রমে ৩১ ও ২৮ তম।
যদিও চীনের গড় সবচেয়ে বেশি তবে, ১৬টি ডোমেইনের সব কটিতে তারা শীর্ষে নেই। যদিও বেশ কটিতে তারা এগিয়ে আছে। এলগরিদমে রাশিয়া সবার ওপরে আর চিনের সাফল্য ডেটা স্ট্রাকচার, গণিত আর ফাংশণাল প্রোগ্রামিং-এ।
বিভিন্ন দেশের প্রোগ্রামারদের বিভিন্ন ডোমেইনে ভাল করার কারণগুলো কী হতে পারে? এ নিয়ে হ্যাকাররেঙ্কের ১০-এর মধ্যে আছে এমন একচন জীনা প্রোগ্রামারের কোটেশন দেওয়া হয়েছে সেখানে। সিমি জাং দুই বছর আগে চনের চংপিয়ং শহর থেকে আমেরিকায় এসেছে মাস্টার্স করতে। তার কথা-
“অন্য অনেক দেশের তুলনায় চিনের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে রিসোসের্র স্বল্পতা আছে। এজন্য কয়েকটি বিসয়ের একটিতে আগ্রহীদের বেঁছে নিতে হয়, যেমন কনটেস্ট। চীনে ছেলেমেয়েরা মিডল স্কুল আর হাইস্কুলেই তাদের প্রোগ্রামিং শুরু করে এবং এমন সব চ্যালেঞ্জের সমাধান করে যা বিশ্বের কম জায়গাতেই করা হয়। ছোটদের জন্য সেখানে নানান আয়োজনও আছে। প্রদেশ ভিত্তিক ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াড, তারপর জাতীয় ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াড শেষে ৪ জন আইওআইতে অংশ নেয়। গত ১০ বছর ধরে সেখানে তারা গড়ে ৩টা স্বর্ণপদক পায়। মজার বিষয় হচ্ছে, কোন চীনা প্রতিযোগী যদি আইওআইতে স্বর্ণ পদক পায় তাহলে সে পরেরবার আর অংশ নিতে পারে না। এর মানে হল চীনের প্রতিযোগীরা প্রথমবারেই স্বর্ণপদক পায়”।
কোন প্রোগ্রামাররা হ্যাকাররেঙ্কে কোন ধরণের সমস্যা সমাধানে বেশি সময় দেয় সেটাও দেখা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে চীনাদের গণিতের প্রতি আগ্রহ বেশি (আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে চীনের সাফল্য অসাধারণ)। অন্যদিকে চেক রা শেল প্রোগ্রামিং-এ বেশি সময় দেয় বলে তারা সেটাতেই বেশি ভাল করে।
এর পাশাপাশি দেশগুলোর প্রোগ্রামিং ভাষার প্রতি দুর্বলতাও চিহ্নিত করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে জাভার প্রতি আকর্ষণ রয়েছে বেশিরভাগের।
একাগ্রতা আর নিষ্ঠার বেলায় সবচেয়ে বেশি আগানো সুইসরা!!!” Swiss coders the Most Tenacious Programmers in the World”। যখন কোন প্রোগ্রামার হ্যাকাররেঙ্কে যোগ দেয় এবং প্রথম সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে ব্যর্থ হয় তার স্কোর হয় শূণ্য। সুইজারল্যান্ডের মূণ্য স্কোরধারী নেই বরলেই চলে। এর মানে হলো তারা নিরবচ্ছিন্ন হয়ে চেষ্টা করে।
সব ডেটা মিলিয়ে হ্যাকাররেঙ্কের হিসাবে এখন প্রোগ্রামিং অলিম্পিয়াড লে সেখানে স্বর্ণ পাবে চীন, রূপা রাশিয়া আর ব্রোঞ্জ পাবে পোলান্ড।
আর বাংলাদেশ?
ঠিক আছে। ৩ বছর পর আবার এখানে ফিরবো, ইনশা আল্লাহ। চমৎকার পরিবর্তন নিয়ে।
শুভ সকাল।
2 Replies to “বিশ্ব প্রোগ্রামিং অলিম্পিকে স্বর্ণপদক পাবে কোন দেশ?”
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.
Incredible! This blog looks just like my old one! It’s on a totally different topic
but it has pretty much the same page layout and design.
Wonderful choice of colors!