না-দুধের স্টার্টআপ – বিলিয়ন ডলারের নতুন জগৎ
আমাদের অনেকের ধারণা “কেবল” তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিস্ঠানই শেষ পর্যন্ত ইউনিকর্ন বা বিলিয়ন ডলার মূল্যমানে পৌঁছায়। এই ধারণার পেছনে মূল কারণ মাইক্রোসফট, এপল বা অ্যামাজনের মতো প্রতিস্ঠানগুলো। এই ধরণের প্রতিস্ঠানগুলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নতুন একটা প্রোডাক্ট বা সার্ভিস চালু করে যা আগে ছিল না। ফলে, এদের চাহিদা ও ভ্যালু সহজে মাপা যায় না। বিশেষ করে পুরানো কোন ধ্যান ধারণার সঙ্গে তূলনার সুযোগ তো কম। কাজে এগুলোর নতুন একটা জগৎ তৈরি হয়। আমাদের দেশে যে দুইটি স্টার্টআপ এখন পর্যন্ত ইউনিকর্ন হয়েছে সেদুটোও প্রযুক্তি সম্পর্কিত। কিন্তু জগৎ আসলে অনেক বড়। এখন অনেক প্রতিস্ঠানই ইউনিকর্ন হয়ে উঠছে যাদের মূল পন্য বা সেবা তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক নয়। যদিও বিপনণ বা ব্যবস্থাপনায় ঠিকই আইটিকে ব্যবহার করছে। এরকম একটা হলো ক্যাসপার যা কিনা জাজিম বিক্রি করে! তো, নতুন নতুন আইডিয়া, প্রোডাক্ট ও সেবার কারণে এখন অন্য খাতেও ইউনিকর্নের দেখা মিলছে।
ধারণা করা হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলির প্রথম ইউনিকর্ন হবে নটকো(NotCo)। এই প্রতিস্ঠানটি বিকল্প প্রোটিনের কারবার করে। কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ওরা প্রাণীজ প্রোটিনকে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন দিয়ে প্রতিস্থাপন করছে। ওদের প্রোডাক্ট হলো মেয়োনিজের বিকল্প নটমেয়ো, দুধেল আইসক্রিমের বিকল্প নটআইসক্রিম এবং নট মিল্ক ও নট বার্গার।
প্রাণীজ প্রোটিনের বিকল্প প্রোটিনের বিশ্ববাজার এখন প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। অনেক বিনিয়োগকারীই এখন এদিকে ঝুঁকছেন। সবজি-বার্গারের প্রতিস্ঠান ইমপসিবল ফুডের ভ্যালুয়েশন প্রায় ৬ বিলিয়ন, প্ল্যান্ট বেজড ডিমের বিকল্পের প্রতিস্ঠান জাস্ট ইনক.-এর ভ্যালুয়েশনও ১.১ বিলিয়ন। এই দুইটা মনে হয় ইউএস বেজড।
কিন্তু নট কো চিলির একটা স্টার্টআপ। ওদের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জেফ বেজোসও আছেন। ২০২১ সালের রাউন্ডে ওদের ভ্যালুয়েশন ১ বিলিয়নে পৌছালে সেটা হবে চিলির প্রথম ইউনিকর্ন। লাতিন আমেরিকায় অবশ্য সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু ইউনিকর্নের জন্ম হয়েছে। ব্রাজিলের ফিনটেক নিউব্যাংক ২৫ বিলিয়ন, কলম্বিয়ার ডেলিভারি এপ রাপ্পি ৩.৫ বিলিয়ন আর মেক্সিকোর পুরাতন গাড়ি বিক্রির কাভাক ও উরুগুয়ের পেমেন্ট প্রোভাইডার ডি-লোকাল-এর ভ্যালুয়েশন এক বিলিয়নের ওপর।
নট কো এপর্যন্ত ১২০ মিলিয়ন ডলার তুলেছে। অ্যামাজনের মাধ্যমে ওদের হোলসেল হয়। গত এক বছরের ওদের বিক্রি বেড়েছে চারগুণ এবং বিক্রির ভলিউম বেড়েছে ৫ গুণ। তাদের আশা যে, এবার তারা বিলিয়ন ডলার হবে!
২০২০-২১ সালের বিনিয়োগকারীদের দিকে তাকালে ফুড প্রসেসিং-এর দিকে ঝোঁকটা বোঝা যায়। আমাদের দেশে খাবারের উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগই রেস্তোরা বা ক্রাউড কিচেনের দিকেই ঝুঁকে আছেন। ফলে বড় কোন সুপারশপে গেলে আপনি প্রসেসফুডের রেকে দেমী প্রোডাক্ট দেখবেন খুবই কম। আমাদের জ্যাম-জেলির মার্কেটের বড় শেয়ার মনে হয় ভুটানের ড্রুকওয়ালারা দখল করে রেখেছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোতে আমের আচার দেওয়ার মতো প্রতিস্ঠানও এখনও আমরা গড়ে তুলতে পারি নাই। শুস্ক-ফলের কথা নাই বা বললাম।
নটকো-এর অভিজ্ঞতার আলোকে খাবার উৎপাদনের প্রতিস্ঠানের ব্যাপারে তুরনরা ভাবতে পারে। আশির দশকে দেশে পোলট্রি খামারের বিপ্লবের পেছনে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ভূমিকা ছিল। এখনও সেরকম কিছু হতে পারে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়।
বাংলাদেশ ভেঞ্চার এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ই-জেনারেশনের শামীম আহমেদ ২০২৫ সালের মধ্যে নতুন ৫টি ইউনিকর্নের স্বপ্ন দেখেন। এরই মধ্যে শেয়ার মার্কেটে লো-ক্যাপের ব্যাপারটা চালু হয়েছে। এটিকে একটি সংস্কৃতিতে রূপ দিতে হলে সবাইকে অনেক কাজ করতে হবে। শুধু ফান্ডিং দিয়ে এই কাজটা হবে না। ইকো-সিস্টেমের নানা কাজে দরকার সমন্বিত উদ্যোগ।
2 Replies to “না-দুধের স্টার্টআপ – বিলিয়ন ডলারের নতুন জগৎ”
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.
*দামী প্রোডাক্ট ,*ক্লাউড কিচেন
আমিও অনেক দিন ধরে ফুড প্রসেসিং প্রযুক্তি ব্যবসার কথা ভাবছি। ভবিষ্যতে এই সেক্টরে কাজের অনেক সুযোগ হবে। আমি আশা করছি আমিও এই সেক্টরে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সমর্থ হবে। তখন মার্কেটিং এর জন্য আপনার সহযোগিতা কামনা করব।