
ইমোশনাল মার্কেটিং-১০ : চাই সঠিক কৌশল-৩
ইমোশনাল মার্কেটিং-৯ : চাই সঠিক কৌশল-২
আকাঙ্খাকে আবেগ বলা চলে না। কিন্তু কোন ইচ্ছা বা আকাঙ্খা পূরণ হলে সেটি অনেক অনেক আবেগের জন্ম দিতে পারে। এবং যখন কেউ কোন অনুপ্রেরণার ভিতর দিয়ে যায় তখনও অনেক আবেগের বহিপ্রকাশ ঘটে।উল্লাস, আনন্দ, উত্তেজনা, আশা – এসবই কিন্তু হতে পারে অনুপ্রেরণার পথে। কাজে এসপিরেশনাল বা আকাঙ্খাকে টার্গেট করে যে সব প্রচারণা চালানো হয় সেগুলো স্বভাবতই মানুষের স্বপ্নের জায়গা নিয়ে কাজ করে। এবং এ কারণে এগুলো খুব তাড়াতাড়ি মানুষের মনে স্থান করে নেয়। কারণ এগুলো পাঠক/দর্শকের স্বপ্ন, লক্ষ্য কিংবা রুপকল্পের একেবারে প্রতিরূপ হয়ে যায়।
যেমন ধরুন প্রিপেইড মোবাইল ফোন। আপনার সবচেয়ে দু:খের সময় কী জানেন? কথা বলতে বলতে ব্যালেন্স ফুরায় যাওয়া। সে সময় মনে হয়, আমার যদি একটা আলাদিনের চেরাগ থাকতো তাহলে কতোই না সুবিধা হতো। ব্যবহারকারীদের মধ্যে যখন এই বোধটা প্রবল হয়ে উঠে তখনই সব টেলিকম অপারেটর ইমার্জেন্সী ব্যালান্সের প্রবর্তন করে। আর এর প্রচারণায় সব কিছুকে ছাড়িয়ে যায় প্রামীণ ফোনের “অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্ত জলিলের কাজ” বিজ্ঞাপন চিত্রটি।
দেখুন ইমোশনকে সরাসরি ব্যবহার করা হয়নি। বরং জিপির ইমার্জেন্সি ব্যালান্সের ব্যাপারটাকে আনা হয়েছে স্বপ্ন পূরণ, বিপদ তাড়ণ হিসাবে। তার সঙ্গি জুড়ে দেওয়া হয়েছে বাংলা চলচ্চিত্রের একজন নায়ককে। কোন নায়ক? যার সিনেমায় ‘অসম্ভব সব ঘটনা ঘটে’। কারো হৃদয় বের হয়ে আসে, লাফ দিয়ে ছাদে উঠে পড়েন ইত্যাদি। বিজ্ঞাপন চিত্রে দেখানো হয়েছে একটি মেয়ের সঙ্গে অনন্ত জলিলের দেখা হয় লিফটের মধ্যে। হতবিহ্বল মেয়েটি লিফট থেকে বের হয়ে বান্ধবীকে তার এই অভিজ্ঞতার গল্প বলতে গিয়ে দেখা গেল ব্যালান্স শেষ। আর তখনই অনন্ত জলিল এসে তাকে ইমার্জেন্সি ব্যালান্স দিয়ে যায়। খুবই শাদামাটা গল্প! কিন্তু কতো শক্তিশালী। সেই বিজ্ঞাপন চিত্রটি কতোটা “ওয়ার্ড অব মাউথ” হয়েছে সেটি টের পাওয়া যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এখনও লোকে কোন আপাত অসম্ভব কাজ সমাধা হলে “অসম্ভবকে সম্ভব করাই অমুকের কাজ” বলে দাবী করে!
এ বিজ্ঞাপন চিত্রে দাবী করা হয়েছে তাদের নতুন সার্ভিস (ইমার্জেন্সি ব্যালান্স) মোবাইল গ্রাহকদের একটি ভোগান্তি দূর করছে ম্যাজিকের মতো। তবে, এ ধরণের মার্কেটিং কৌশলে সফল হতে হলে আপনাকে অবশ্যই প্রোডাক্টটা ভালমতো বুঝতে হবে। কারণ এটি বব্যবহারকারীর কোন দু:খ,কোন বেদনাকে আনন্দে রুপান্তরিত করবে সেটি যদি বোঝা না যায় তাহলে মার্কেটিং টা জলে যেতে পারে।
এ মার্কেটিং-এর লক্ষ্য কিন্তু বরাবরের মতো দুইটা। একটা হলো যারা গ্রাহক তাদের ধরে রাখা আর সঙ্গে সঙ্গে নতুন টার্গেটদের কাছে যাওয়া। এই যে নতুনদের কাছে আপনি যাবেন সেটির ফলাফল কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে টের পাওয়া যাবে না। কাজে এমন কাজের ক্ষেত্রে দূরের লক্ষ্য যেন মাথায় থাকে। এ কৌশলের টার্গে কিন্তু আগামী দিনের গ্রাহক!
এর ফলে আপনার ডেমোগ্রাফিক টার্গেটও কিন্তু ভিন্ন হয়ে যায়, অথবা বড় হয়ে যায়। এপলের ১৯৮৪ বিজ্ঞাপনটার কথা ভাবুন। এ বিজ্ঞাপন দিয়েই এপল টেকিদের ব্র্যান্ড থেকে সাধারণের ব্যান্ডে চলে আসে। মেইনস্ট্রিমে এসে পড়ে। আবার আপনার এ কৌশলের লক্ষ্য হতে পারে জেন্ডার পরিবর্তন, ইনকাম গ্রুপ পবিরবর্তন ইত্যাদি। আগেই বলেছি এ ধরণের কৌশল কিন্তু বিক্রি বাড়াবে না, বরং ভবিষ্যতের গ্রাহক তৈরি করবে।
রেড বুলের “রেড বুল গিভস ইউ উইংস” ক্যাম্পেইন এর একটি ভাল উদাহরণ। বিজ্ঞাপনগুলোতে সত্যিকারের এথলেটরা তাদের সাফল্যের মূহুর্তগুলো উদযাপন করে। এটি দেখতে দেখতে দর্শকরাও উল্লাস, উত্তেজনা ও আনন্দের মধ্যে ভাবে একদিন তারাও তাদের আকাঙ্খা পূরণ করতে পারবে।
2 Replies to “ইমোশনাল মার্কেটিং-১০ : চাই সঠিক কৌশল-৩”