“Success is a journey from failure to…”
পঞ্চম শ্রেণীর বালকটি ব্যাপক পরিশ্রম করে “ষড়ঋতু” রচনা মুখস্ত করেছে। পরীক্ষায় আসলে ঝর ঝর করে লিখে ফেলবে। কিন্তু হায় পরদিন পরীক্ষায় ষড়ঋতু নাই আছে শীতকাল! ৬ ভাগের ১ ভাগ দিয়ে তো হবে না। ভাবতে ভাবতে বালকের চোখ গেল প্রশ্নের আর এক জায়গায় – তোমার শৈশব। বালক ভাবলো বানায় বানায় লিখবে এবং লিখলো। পরে নম্বর দেওয়ার পর জানা গেল বালকের বানানো লেখাটি শিক্ষিকা খুবই পছন্দ করেছেন এবং রচনায় সবার চেয়ে বেশি নম্বর দিয়েছেন। বালক বুঝতে পারে সৃজনশীলতাই হলো আসল। কাজে সে নিত্য নতুন বিষয় নিয়ে ভাবতে শুরু করে।
কিন্তু “বিধি হলে বাম, কী করবে রাম” তার এই নিজে নিজে লেখাটা ক্লাশ এইটে বুমেরাং হয়ে ফেরৎ আসলো। আমাদের বালক ইংরেজিতে পাশই করতে পারলো না। কাজে সিদ্ধান্ত পাকা। বালক তার পুরানো স্কুলে আবার ক্লাশ এইটে পড়তে পারবে না। মা’ বললেন – চল স্কুলে গিয়ে দেখি কিছু করা যায় কিনা।
মা’র সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার পথে আমাদের বালক রিকশা থেকে নেমে দৌড়। সে রাতে সে আর বাসায় ফেরেনি। রাত কাটিয়েছে মসজিদে!
মা গ্রেসের ব্যবস্থা করে ছেলের প্রমোশনের ব্যবস্থা করে এসেছেন। কাজে ৬৩ জনের ক্লাশে রোল ৬৩ হয়ে শুরু হলো নতুন লড়াই।
তারপর এসএসসি হয়ে ঢাকা কলেজে। সেখানে নতুন কিছু করার তাড়নায় কিশোরের হাতে তৈরি হলো “ঢাকা কলেজ বিজ্ঞান ক্লাব”। নানান কাজের ঠেলায় এইচএসসি আবার খারাপ।
ততোদিনে আমাদের কিশোরটি বুঝে ফেলেছে মুখস্ত করতে না পারলে এদেশে পড়ালেখা হবে না। কাজে চেষ্টা করলো আমেরিকা যাওয়ার। স্যাটে তখন স্কোর আসার পর টাকা দিতে হতো। টাকা দিলে স্কোরটা অফিশিয়াল হতো। আমাদের কিশোরের সেই স্কোর এমন যে সে টাকা দিয়ে সেটিকে অফিশিয়ালই করলো না।
আমেরিকার ভার্সিটিগুলোতে তার পড়ালেখাটা মোটেই জুতের হয়নি। কিন্তু তাতে তার নিজের পছন্দের ব্যাপারটা থেকে সরে আসা কমেনি। গবেষণায় বিশেষ করে এমন কিছু একটা করা যার মাধ্যমে সত্যি সত্যি মানুষের জন্য কাজ করা হবে।
তরুন এই যুবকের নাম এহসান হক। এবার এমআইটির ৩৫ এর নিচে ৩৫ তালিকায় একমাত্র বাঙ্গালি নাম। এই নিয়ে মাত্র ৪বার আমাদের বাঙ্গালি তরুনরা এই তালিকায় এসেছে।
এহসানের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ২০১০ সাল থেকে। ২০১২ সালে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে এসেছিল।
তারপর তাঁকে আর কেউ ডাকে নি।
গত ২০ তারিখে সেই ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে একটা সেমিনারে বক্তব্য রাখার জন্য এসেছে এহসান। আজ রাতে আবার চলে যাবে।
এই ঝটিকা সফরে গত ২২ অক্টোবর ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে কৃত্রিম বু্দ্ধিমত্তা নিয়ে একটি কর্মশালা করেছে। আর আজ ২৮ অক্টোবর এসেছিল বিজ্ঞানচিন্তার “তরুনদের সাথে” অনুষ্ঠানে। প্রায় দেড়ঘন্টার অনুষ্ঠানে এহসান বলেছে তাঁর নিজের জীবনের গল্প আর বলেছে কীভাবে কোন গবেষনার কারণে আজ সে এমআইটির তালিকায় উঠেছে।
এহসানের সঙ্গে বিজ্ঞান চিন্তার পাঠক-লেখকদের এই আড্ডার বিস্তারিত জানা যাবে বিজ্ঞানচিন্তার আগামী সংখ্যায়।
আপাতত এটুকু আমরা জানি, এহসানের ভাষায় সাফল্য হলো মোটিভেশন না হারিয়ে এক ব্যর্থতা থেকে অন্য ব্যর্থতায় পদার্পন।
ধন্যবাদ এহসান আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ছয়মাসের ছোট বাচ্চাকে রেখে বাংলাদেশে ৭টা দিন কাটিয়ে যাওয়ার জন্য।
ডিসেম্বরে আবার দেখা হবে, ইনশাআল্লাহ।
মানুষের সঙ্গে যন্ত্রের সহজবোধ্য যোগাযোগে এহসানের কাজ আরও এগিয়ে যাক। এই কামনা করি।
ফিরতি যাত্রা শুভ হোক।