খাচ্ছি, দাচ্ছি, দাড়ি কামাচ্ছি …

Spread the love

2আমরা অনেকেই নিজের দিনবদলের পাশাপাশি দেশের, দশের আর দেশের মানুষের দিনবদলের স্বপ্নদেখি।

নিজেদের স্বপ্নে আমরা নানান মাল-মশলা যোগাই। ছোটবেলায় আমাদের স্বপ্নগুলো কঠিন থাকে। ১৯৭১ সালে বয়স ১৮ও ছিল না দেখে মনে হয় দেশ-মাতৃকার সেবা করতে পারলাম না। কী দু:খ।

আমরা আস্তে আস্তে বড় হই। সমাজে নানান রকম বিষয় দেখি। এর মধ্যে আমাদের একটা বড় অংশ রাজনীতির ব্যাপারে একটা নেগেটিভ ধারণা পেয়ে যাই- প্রথমত পরিবার থেকেই (যারা রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসি তাদের কথা আলাদা)। আমাদের শেখানো হয় রাজনীতি পরিত্যাজ্য। রাজনীতি করার দরকার নাই। আমরা ছাপোষা মানুষ, আমাদের স্বপ্ন হবে সহজ, সিম্পল- আমি ভাল পাশ দেবো, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবো, সুন্দরী বউ/স্বামী পাবো, বছরে একবার দুইবার কক্সবাজার বেড়াতে যাবো (আর একটু বেশি হলে হিল্লী-দিল্লী করবো), সকালে বউ-এর কপালে চুমো খেয়ে অফিসে যাবো। সেখানে আমার নিজের চেয়ার-টেবিল থাকবে। আমি ফাইলে সই করবো।

আমরা রাজনীতি করবো তবে সেটা অফিসের কেন্টিনে, বন্ধুদের সঙ্গে যখন আলাপ করবো তখন। তখন আমরা চুল চেরা বিশ্লেষন করবো – কোন কোন রাজনীতিক দেশের বারোটা বাজিয়েছেন তার ফর্দ করবো, কে কাকে বেশি বাঁশ দিতে পারবো তার প্রতিযোগিতা করবো। গিন্নি এসে বলবে – অনেক হয়েছে। এবার খেতে এসো! রাতে বাসায় ফিরে যাবো।

আমাদের এই পলায়ন মনোবৃত্তি কিন্তু তস্করদের উৎসাহী করে, তারা নিত্য নতুন উপায়ে আমাদের ছোট ছোট স্বপ্নগুলোর বারোটা বাজায়। আমাদের মধ্যে যারা ভাবে বড় পরিসরে কাজ করার কথা ভাবে তাদের জন্য এমন সব উদাহরণ দেখানো হয় যে, সে আর রাজনীতির মধ্যে যেতে সাহস পায় না। তার আশেপাশের লোকেরা তাকে বলে- হে হে, বলে কি। ব্যাটারতো দেখি মাথা খারাপ!!!

হ্যা। আমাদের দেশে এখন এমন অবস্থা হয়েছে কেহ যদি বলে সে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে চায় তখন সবাই তাকে তীর্যক চোখে দেখে, ভাবে – ব্যাটার নিশ্চয়ই কোন কু-মতলব আছে!

ক্রমাগতভাবে না না শুনতে শুনতে সে কোনঠাসা হয়ে পড়ে। এতকিছুর পরেও যদি নিজের মধ্যে বিপ্লবের ধার না কমে তখন সে সংবাদপত্রে লেখালেখি করে নিজেকে একজন সফল কলামিস্ট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে।

1এই পুরো ব্যাপারটারই একটি প্রতিচ্ছবি আমরা দেখি ফেসবুকেও। সেখানে বেশিরভাগ তরুন-তরুনী তার রাজনৈতিক বিশ্বাসের জায়গায় লিখে রাখে – hate politics!!!!

এই সমাজেরই প্রতিধ্বনি। নতুন তো নয়!

আমরা যখন ছাত্র ছিলাম – স্কুল, কলেজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে – সেই সত্তর আর আশির দশকে, শিক্ষায়তনগুলোতে নানান বিষয়ের চচ্চা হতো। এসবের সঙ্গে কখনো প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতি থাকতো, কখনো থাকতো না। কিন্তু প্রচ্ছন্ন একটা যোগাযোগ থাকতো রাজনীতির। বিতর্ক, কুইজ কিংবা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার বাতাবরণে দেশ আর দশ হতো মূখ্য। এখনও নিশ্চয়ই হয়, আমি হয়তো জানি না।

কিন্তু এখন আমাদের শিক্ষার্থীদের বড় একটা সময় চলে যায় ক্যাম্পাস থেকে আগাছা দূর করার কাজে, সময় নষ্ট হয় শিক্ষার অধিকারটা বজায় রাখতে। অথচ কথা ছিল আর দশটা স্বাধীন দেশের মতো একজন শিক্ষার্থী নিজেকে তৈরি করবে আগামীতে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। তার বদলে তাকে বলা হয় পালিয়ে যাবার দীক্ষা নিতে!

এসবের মাঝে সে ভুলে বসে তার দরকার একুশ শতকের শিক্ষা আর দ্রুতগতির ইন্টারনেট হলেই এই মুখস্তনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থাকে সে কলা দেখাতে পারে। সে যে কলা দেখাতে পারে এটা জানে উপর তলার মানুষ। তাই ঢাকা ছেড়ে যেন দ্রুতগতির ইন্টারনেট বেশিদূর যেতে না পারে তার সকল আয়োজন পূর্ণ করা হয়। মাত্র পাঁচবছরে তৃতীয় প্রজন্মের লাইসেন্স দেওয়ার গাইডলাইন লেখা যায় না। সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ১১ বছর পরও দেশের ৬৪টি জেলা শহরে উচ্চগতির ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা যায় না! কী অদ্ভুত!

অন্যদিকে, সমাজের বড় একটা অংশের কথা কেহ ভাবে না। ভাবে না কেমন করে উন্নত করা যায় তাদের জীবন। ঘটি-বাটি বিক্রি করে তারা পাড়ি জমায় “সোনার” দেশ। সেখানে বাস্তবিক এক মানবেতর জীবন কাটায়, অনেক কষ্টে থেকে ডলার আয় করে দেশে পাঠায়। তাদের টাকা আমাদের জিডিপির ১০-১২ শতাংশের যোগান দেয়। শত কষ্ট করে বেচারা যখন দেশে আসে, তখন এয়ারপোর্টে তাঁকে দেখানো হয় ভেলকি!!! বেচারা না খেয়ে না দেয়ে যে টেলিভিশনটি আনে, ছেলের জন্য যে খেলনা মোটর সাইকেলটি বয়ে আনে সেগুলোর পোস্ট মোর্টেম করা হয়। বিধ্বস্থ হযে যখন সে বের হয়ে আসে তখন তাকে তুলে দেওয়া হয় আর একদল হায়েনার হাতে! আমরা অন্য কাজে ব্যস্ত। প্রবাসী শ্রমিকের কষ্ট দেখে আমাদের লাভ কি? আমাদের লাভতো তার ডলার দেখে!

অথচ প্রবাসী শ্রমিকের স্রোত বাড়ে। বছর বছর এটির হার দ্বিগুন হয় কারণ দেশে কর্মসংষ্থান নাই। ৪২০০টি সরকারি পদের জন্য লড়াই করে মাত্র দুই লক্ষ তরুন-তরুনী।

৩০ বছরের একটি ছেলে বা মেয়ে, ক’দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় মাতিয়ে বেড়িয়েছে যে, প্রতিদিন সকালে মা’র কাছে হাত পাতে- দিনের খরচের জন্য। এ দৃশ্য কে দেখে? এদের এক বড় অংশ কোন কাজ না পেয়ে ঝাপিয়ে পড়ে জুয়া খেলতে যায়, শেয়ার বাজারে।

বলবেন উদ্যোগতো আছে – ইইএফ ফান্ড আছে, এসএমই ফাউন্ডেশন আছে, ব্যাংকগুলোর এসএমই লোন আছে! যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কতো আয়োজন! কর্মসংষ্থান ব্যাংক। কতো কিছু, জীবন সাজানোর জন্য! তাহলে?

 

এসব ভেবে লাভ কি? ভালই তো আছি।

 

খাচ্ছি, দাচ্ছি, দাড়ি কামাচ্ছি …

Leave a Reply