খুল যা সিম সিম-৩ : আলিবাবার শুরু
প্রথম পর্বে আমরা জ্যাকের জীবনের প্রথম পর্বের একটা সংক্ষিপ্ত কিন্তু কার্যকরী ধারণাটা পেয়েছি। যেটা সেখানে বলা হয়নি তা হল জ্যাকের অফুরান প্রাণ শক্তির কথা। আমরা দেখেছি জ্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় তিনবার ডাব্বা মেরেছিলেন। এই ডাব্বাটা তিনি অব্যাহত রেখেছিলেন অনেক জায়গায়। “আমি ৩০টি চাকরির জন্য দরখাস্ত করে প্রত্যাখাত হয়েছি। পুলিশের লোকেরা আমাকে বলে দিয়েছিল – তুমি কোন কাজের না। আমাদের হুয়াংজু শহরে যখন কেএফসি আসে অন্য ২৪ জনের সঙ্গে আমিও দরখাস্ত করি। বাকী ২৩ জনেরই চাকরিটা হয়। আমি হার্বার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য দশ দশবার আবেদন করেছিলাম। পরে ভেবেছি একদিন সেখানে পড়াতে যাবো।”
এত প্রত্যাখানের পরও তরুন বয়স থেকে জ্যাকের বিশ্বাস ছিল – সব কিছুই সম্ভব। এখন অবশ্য জ্যাক জানে “সব কিছু সম্ভব নয়।”
জ্যাকের বয়স যখন ১২-১৩ বছর তখন রিচার্ড নিক্সন হাংজু শহরে আসেন এবং এরপর থেকে সেখানে অনেক বিদেশি পর্যটক আসতে শুরু করে। সে সময় জ্যাকের ইংরেজি শেখার ইচ্ছে হয়। কিন্তু কোন বই বা ইংরেজি শেখার স্কুল ছিল না সেখানে। পরবর্তী ৯ বছর প্রতিদিন সকালে জ্যাক চলে যেত হাংজু হোটেলে। সেখানে গিয়ে সে বিদেশী পর্যটদের ফ্রি গাইড হতো বিনিময়ে তারা তাকে ইংরেজি শেখাতো। এই পর্যটকদের কাছ থেকে জ্যাক দুনিয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন কিছু জানতে পারে। জ্যাকের আসল নাম মা ইয়ুন। উচ্চারনের ঝামেলার জন্য এক তরুনী তার ইংরেজি নামকরণ করে জ্যাক। সেটিই এখন তাঁর নামের সঙ্গে মিশে গেছে।
১৯৯৫ সালে তার প্রথম আমেরিকা যাবার কথা আমরা জানি। তার প্রথম সার্চ ছিল “Beer” সম্ভবত বানানটা সহজ! জ্যাক জার্মান, আমেরিকা, জাপানের বিয়ারের উল্রেখ থাকলেও সেখানে কোন চীনা বিয়ারের নাম নিশানা খুঁজে পাওয়া গেল না। হতাশ ও দু:খিত জ্যাক ভাবলো তারা একটি চিনা পেজ বানাবে। ঐ বন্ধুর সহায়তায় ওরা একটা চিনা ভাষায় ওয়েব পেচ বানালো এবং সকাল ৯.৪০ মিনিটে সেটি লঞ্চ করে জ্যাক নিজের ঘরে এসে পড়লো। দুপুর ১২.৩০ মিনিটে বন্ধুটি ফোন করে জানালো – তোমার পাঁচটি ই-মেইল এসেছে। জ্যাক জানতে চাইল- ই-মেইল কী?
এভাবে ইন্টারনেট জগতে জ্যাকের পা।
১৯৯৮ সালে আলিবাবার জন্ম। ১৯৯৮ সালে ভাল নাম বলতে তো ইয়াহু। আলিবাবা নামটি জ্যাকের মাথায় আসে সান ফ্রানসিসকোর একটি রেস্টুরেন্ট। তার মাথায় চিন্তা ছিল এমন নাম যা গ্লোবাল এবং সবাই নামটা জানে। এক সময় তার মনে হল – “আলিবাবা একটা ভাল নাম। ওয়েট্রেস আসার পর তার কাছে জানতে চাইলাম- তুমি কি আলিবাবা সম্পর্কে জানো?
সে বলল- খুল যা সিম সিম।
রাস্তায় বের হয়ে আমি আরো ১০,২০ জনকে জিঙ্ঘাষা করলাম। সবাই আলিবাবাকে জানে। তাছাড়া এটা A দিয়ে শুরু। কাজে শুরুতে থাকবে। তখন আলিবাবা নামটা স্থির করে ফেলি।”
আলিবাবা মূলত একটি মার্কেট প্লেস, ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের জন্য। জ্যাকের বিশ্লেষন ছিল চাইনীজ উৎপাদকদের বড় অংশই আসলে পাইকারী বিক্রেতা। সেই সময় তাদের প্রত্যকের পক্ষে ইন্টারনেটে নিজেদের একটা কিছু করা সম্ভব ছিল না। এক নম্বর কারণ হল চিনে তার অবকাঠামো নেই আর জনবলও নেই। কাজে দেশ ও দেশের বাইরের উদ্যোক্তাদের তাদের পন্য ইন্টারনেটে বিক্রি করতে দেওয়ার জন্য একটা প্ল্যাটফরম বানানোই ছিল আলিবাবার লক্ষ্য। শুরু থেকেই অনেকেই এই প্ল্যাটফরম ব্যবহার করতে শুরু করে। তবে, বেচাকেনার বিশ্তস্ততা অর্জন করার কাজটি সহজ ছিল না মোটেই। আস্তে আস্তে প্ল্যাটফরমে বেচা বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু তা থেকে আলিবাবার কোন আয় ছিল না।
প্রথম তিনবছর আলিবাবার রেভিনিউ ছিল শূণ্য। তখন তাদের একটাই লক্ষ্য – টিকে যাওয়া।
জ্যাক সে সময়কার একটা অভিজ্ঞতা প্রায়শ শেয়ার করে। কনো কোন দিন রেস্তোরায় খাবার পর বিল দিতে গেলে দেখা যেত বিল দেওযা হয়ে গেছে। সঙ্গে একটা নোট- “Mr. Ma, I’m your customer on the Alibaba platform. I made a lot of money, and I know you don’t, so I paid the bill.”
যে লোকটা জীবনে ৩০ বার প্রত্যাখাত হয় মাত্র তিন বছরে তার হেরে যাবার কোন কারণ নাই। কাজে শুরু হয় নিরন্তর সংগ্রাম।