জেফ বেজোস তালুকদার!!!
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই, ২০১৭) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিশ্বের এক নম্বর সম্পদশালী থাকার পর বিশ্বের সর্ববৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস আবারও বিশ্বের দ্বিতিয় ধনীতে পরিণত হয়েছেন। মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ৯০ বিলিয়নের কিছু বেশি সম্পদ নিয়ে আবারও এক নম্বরে চলে এসেছেন। এ নিয়ে গত দুইবছরে বিল দুইবার শীর্ষ স্থান খুইয়েছেন। আগেরবার সেটা ছিল দুইদিনের জন্য। আর এবার তা কয়েক ঘন্টার জন্য!
বৃহস্পতিবার দিন শেষে জেফ শীর্ষ থেকে নেমে আসলেও সকল হিসাব নিকাশ কিন্তু জেফের পক্ষেই। আগামীদিনগুলোতে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর সিংহাসন পাকাপোক্তভাবেই জেফের দখলে চলে যাবে বলে মনে হচ্ছে। ২২ বছর আগে হেজ ফান্ডের চাকরি ছেড়ে জেফ নিজের গ্যারাজে আমাজন প্রতিষ্ঠা করে অনলাইনে বই বিক্রি করতে শুরু করেন।
জেফের এই উত্থান নানা দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রযুক্তি পন্য ও সেবার উল্লফনের সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এককভাবে আমাজনের বিশাল উত্তরণ হয়েছে। অথচ বছর পাঁচেক আগেও আমাজনের ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের মনভঙ্গি এতোটা সহায়ক ছিল না। জেফ বেজোসের সম্পদ কিন্তু মাইক্রোসফটের বিলের মতো ধীরে ধীরে পুঞ্জিভূত হয়নি। সে তুলনায় জেফের উত্থান অবিশ্বাস্য!
বিশ্বখ্যাত ফোর্স ম্যাগাজিন ধনকুবেরদের (বিলিয়নিয়ার, যাদের সম্পদের পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটি ডলারের বেশি) তালিকা প্রকাশ করছে ১৯৮৭ সাল থেকে। বাজারে শেয়ার ছাড়ার পর ১.৬ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে জেফ এই তালিকায় যুক্ত হোন ১৯৯৮ সালে। পরবর্তী এক দশকে তার সম্পদ বেড়ে হয় ৪.৪ বিলিয়ন। ২০১২ সালে ১৮.৪ বিলিয়ন ডলার নিয়ে জেফ হয়ে যান এই তালিকার ২৬ তম।
কিন্তু গত দুইবছরে আমাজনের শেয়ারের দাম এতো এতো বেড়েছে যে জেফের সম্পদও হয়ে গেছে আকাশচুম্বী। আমাজনের ১৭ ভাগের মালিক জেফের কাছে এ প্রতিষ্ঠানের ৭ কোটি ৯৯ লক্ষ শেয়ার রয়েছে। গত পাচ বছরে তাঁর সম্পদ বেড়েছে ৭০ বিলিয়ন ডলার এবং শেষের দুই বছরে বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র ৪৫ বিলিয়ন ডলার। সিএনবিসি বলছে, “সম্ভবত এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সম্পদ বৃদ্ধির হার”।
অন্য অনেক ধনীর মতো জেফও নিজের সম্পদ নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন না। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন বক্তৃতায় জেফ বলেছিলেন নিউ ইয়র্কে একটি হেজ ফান্ডে চাকরি করার সময় তার মাথায় প্রথম অনলাইনে বই বিক্রির চিন্তাটা এসেছিল। একটি ভাল, সম্মানজনক চাকরির বিপরীতে স্টার্টআপের চড়াই উৎরাই পথ তিনি বেঁছে নেন। বলেছেন, “আমার প্যাশনের জন্য আমি অপেক্ষাকৃত কম নিরাপদ রাস্তাটি বেছে নেই এবং এ জন্য আমি গর্বিত”।
জেফের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের বিলিওনিয়ারদের সম্পদের পরিমানও বেড়ে চলেছে। ১৯৮৭ সালে ফোর্বসের তালিকায় শীর্ষ ধনী ছিলেন সৌদি আরবের অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাসোগী। তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪ বিলিয়ন ডলার। ১৯৯৫ সালে ১২.৯ বিলিয়ন ডলার নিয়ে বিল উঠে আসেন এই তালিকার শীর্ষে। ২০০৫ সালে ৫০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে বিল শীর্ষেই থাকেন। আর এখন বিল ও জেফ উভয়ের সম্পদ প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলার!!!
১৮৮৭ সালে ১৪০ জন ধনকুবেরের মোট সম্পদ ছিল ২৯৫ বিলিয়ন। অথচ ২০১৬ সালেই এই তালিকায় নতুন যুক্ত হয়েছে ২৩৩ জন! এখন বিশ্বে বিলিওনিয়ারের সংখ্যা ২ হাজার ৪৩ জন যাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৭.৭ ট্রিলিয়ন ডলার।
বিল গেটস আর ওয়ারেন বাফেট তাদের দাতব্য কাজের মাধ্যমে বিলিওনিয়ারদের একটা ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছেন। জেফ অবশ্যই তাদের ব্যতিক্রম। যেখানে বিল ও বাফেট এখন পুরোদস্তুর দাতব্য কাজে শ্রম দিচ্ছেন সেখানে জেফ তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তারে কাজ করে চলেছেন। ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক ও বেভারলি হিলসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিলাসী বাড়ি জেফের। শুধ তাই নয়, জেফ আমেরিকার সবচেয়ে বড় তালুকদারও বটে। তাঁর মালিকানায় রয়েছে মাত্র তিন লক্ষ একরের বেশি জমি!
ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা কেনা ছাড়াও সম্প্রতি তিনি শুরু করেছেন একটি মহাকাশ ভ্রমণ বিষয়ক কোম্পানি ব্লু অরিজিন!
সম্পদ বৃদ্ধি তাকে কীভাবে পরিবর্তিত করে?
প্রথমবার ফোর্বসের তালিকায় যুক্ত হওয়ার পর জেফ এ প্রশ্নের উত্তর দেন এভাবে,”ব্যক্তিগতভাবে আমাকে সেটা পরিবর্তন করে না। শুধু পার্থক্য এই যে ব্যাংকে ৫০ মিলিয়ন ডলার আছে যা অনেক!”
সম্পদ যে তাঁর যে সবিশেষ পরিবর্তন করে না তার বড় প্রমাণ হলো জেফ এখনো ১৯৯৬ মডেলের হোন্ডা একর্ড গাড়িতেই চড়েন!!!
3 Replies to “জেফ বেজোস তালুকদার!!!”