উদ্ভাবনের কলকব্জা ৬ : শেয়ারিং ইনফরমেশন টু এমপাওয়ার সিটিজেন
উদ্ভাবনের কলকব্জা -১: উদ্ভাবন বৈষম্য???
উদ্ভাবনের কলকব্জা ২: বাক্সের বাইরে – ব্যাক টু ব্যাক লেটার অব ক্রেডিট
উদ্ভাবনের কলকব্জা ৩: দেখতে হবে আশে পাশে
উদ্ভাবনের কল-কব্জা-৪ : গোল্লাপূরণের পরীক্ষা
উদ্ভাবনের কলকব্জা-৫ : আমার রাস্তা ঠিক কর
আমি চট্টগ্রাম শহরে বড় হয়েছি। যখন ছোট ছিলাম তখন ঈদ-উল-আজহাতে গ্রামের বাড়ি যেতাম। পরে আস্তে আস্তে আমরা শহরমুকি হয়ে পড়ি। আন্দরকিল্লাতে বেশি কোরবানির স্মৃতি অবশ্য আমার নাই। ৯৬ সালে আমরা চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় চলে আসি। তখন থেকে ওখানে। এর মধ্যে কিন্তু আমি ছাত্র জীবন শেষ করে চাকরি শুরু করে দিয়েছি।
৯৭ বা ৯৮ সালের কোরবানির দিন আমার একটা নতুন অভিজ্ঞতা হল। সাধারণ কোরবানির বর্জ আমরা অনেক দূরে ফেলে দিয় আসতাম যাতে মিউনিসিপালটি পরিস্কার না করলেও কোন অসুবিধা না হয়। সেরকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু দেখলাম আশেপাশের কোন বাসাতে এই নিয়ে তেমন চিন্তা নাই। সবাই নিজেদের বাসার সামনেই সব জড়ো করে রেখে দিয়েছি। আমার বাসাতেও একই ঘটনা শুরু হলে আমি চিৎকার চেচামেচি শুরু করলাম।
তখন বাবা বললেন – কোরবানির বর্জ নিয়ে টেনশনের কিছু নাই। কিছুক্ষণের মধ্য চট্টগ্রাম সিটি কর্টোরেশনের টিম এসে সব পরিস্কার করে নিয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, সব নালা-নর্দমায় ব্লিচিং পাউডার দিয়ে যাবে। কোথাও কোথাও রাস্তার ওপর রক্ত থাকলে সেটা ধুয়ে দিযে যাবে।
আমি অপেক্ষা করলাম এবং দেখলাম সত্যি সত্যি সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ি আর বিশেষ জামাকাপড় পড়া টিম হাজির। তারা কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের এলাকা পরিস্কার করে ফেললো। একটু পর একজন এসে আমাদের বাসা থেকে একটা পানির পাইপ লাগিযে রাস্তা ধুয়ে ফেললো। তারপর, মনে হল, ইনচার্জ বাবাকে এসে জানালো সব ঠিক আছে। যদি কোন ঝামেলা হয় তাহলে যেন ফোন করা হয়।
এরপর আমি জানলাম চট্টগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী কোরবানির বর্জ পরিস্কার করার জন্য তার সিটি কর্পোরেশেন কর্মীদের বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন। সমগ্র সিটি কর্পোরেশন এলাকাকে কয়েকটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। কোরবানির দিন কেবল পরিচ্ছনতা টিম নয়, অন্যান্য কর্মকর্তাদেরও কাজে লাগানো হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হল কোরবানির দিন-দুই আগে পূর্বকোণ-আজাদীতে সবার টেলিফোন নম্বর দিয়ে বি্ঞাপন ছাপানো হয়। সেখানে বলা থাকে এলাকার বর্জ যদি সময় মত পরিস্কার না হয় তাহলে কোথায় ফোন করতে হবে এবং এর পর পর্যায় ক্রমে জোনের দায়িত্ব এবং তাতে কাজ না হহলে প্রধান নির্বাহী এবং সবশেষে মেয়রকে ফোন করা যাবে।
এইভাবে মহিউদ্দিন চৌধুরী তার কর্পোরেশনের বাসিন্দাদের ক্ষমতায়ন করতেন যাতে তারা একশন না হলে রি-একশন দেখাতে পারেন।
আমি ইদানীং চট্টগ্রামে কোরবানির ঈদে যাই না। তাই হয়তো এই সিস্টেম এখনো আছে কী না জানি না। যেহেতু ঢাকায় থাকি এবং সন্কিধ্ন্তুযা পর্যন্ত বর্জ পড়ে থাকতে দেখি তাই সবসময় মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিজ্ঞাপন থেরাপির কতঅ মনে হয়।
সামান্য একটা বিজ্ঞাপন এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা একটি শহরকে পরিস্কার থাকতে সাহায্য করে – এটা তার উদাহরণ। যে কোন মহল্লার লোকই কিন্তু ভাল থাকতে চান। তাদেরকে ঠিকমত ক্ষমতায়ন করতে পারলে কাজগুলো অনেক সহজ হযে যায়।
উদ্ভাবনের জন্য সবসময় প্রযুক্তি লাগে না। হাতের কাছে যা আছে তাই দিয়ে সমস্যার সমাধান করা যায়। মুখ্য বিষয় হচ্ছে আমি যা করছি সেটা আর দশজনের কাজে আসছে কীনা সেটি কার্যকরী কিনা। সেটা ডিজিটাল কিনা তা অবান্তর।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ – আচ্ছা। মহিউদ্দিন চৌধুরীর যদি কোন ডিজিটাল পরামর্শক থাকতো তাহলে এই সিস্টেমটা কেমন হতো আমরা চিন্তা করতে পারি। এজন্য একটা মোবাইল এপ বানানো হত…
সবার জন্য শুভ কামনা।