কথা নয়, নেমে পড়
রিচ, এডাম আর জনের কথা মনে আছে? ঐ যে ৯০ এর দশকে ব্রিটেনে ভার্সিটিতে পড়তো এক সঙ্গে, তারপর পাস করে লন্ডনে চাকরি করতো আর প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিজেরা কিভাবে একটা স্টার্টআপ করবে তার আলাপ করতো।
আমাদের অনেকের মতো ওরাও খালি আলাপ করতো। সপ্তাহান্তে নতুন একটা স্টার্টআপের প্ল্যান করে সেটি নিয়ে সকল গবেষণাও হয়ে যেত। তবে, পরের সপ্তাহে আবার নতুন প্ল্যান, নতুন গল্প।
তবে সেগুলোর শেষ হলো ১৯৯৮ সালে। তিনজন মিলে এক ছুটিতে একটু দূরে বেড়াতে গেল। সেখানে বসে ঠিক করলো তারা আর পরিকল্পনা করবে না। এবার কাজে নেমে পড়বে। কারণ পথে নামলেই কেবল পথ চেনা যায়।
এই সময় তারা লক্ষ করলো লন্ডনের মতো শহরেও বিকেলে পান করার মতো কোন স্বাস্থ্যকর পানীয় পাওয়া যায় না। হয় বিয়ার নওতো পাবে গিয়ে আরো ভারী কিছু।
ওরা খুঁজলো অনেক আর শেষ পর্যন্ত বের করলো বাজারে যে সব ফলের জুস পাওয়া যায় ওখানে আসলে ফল নেই!!! আছে কনসেনট্রেটর। যার সঙ্গে পানি মিশিয়ে জুসটা তৈরি হয়। এগুলোতে দেওয়া হয় মাত্রাতিরিক্ত কনজারভেটিভ, সংরক্ষণের জন্য। তিনজন মিলে ঠিক করলো তারা জুস বিক্রি করবে। তবে, ফ্রেশ!
১৯৯৯ সালের একটি মেলাতে ওরা একটা জুস কর্নার বানালো এবং বিক্রি করলো নিজেদের স্মুথি। আর বুথের সামনে দুইটা বড়ো বাক্স। একটাতে লেখা “ইয়েস” আর একটাতে “নো”। এর মানে হলো গ্রাহকরা যদি মনে করে যে জনদের এই ড্রিংক বিক্রি করা উচিত তাহলে তারা ইয়েস বলবে আর না হলে নো। দিন শেষে ইয়েসের পাল্লা ভারী হওয়ায় ওরা শহরে ফিরে চাকরি ছেড়ে দেয় এবং ইনোসেন্ট শরবতের কারখানা খুলে বসে।
২০০৯ সালে, শুরুর দশ বছর পর ওরা কোকাকোলার কাছে ১০% শেয়ার বিক্রি করে মাত্র ৩০ মিলিয়ন ডলারে। ২০১৩ সালে নিজেদের ৯০% শেয়ার ওরা কোকাকোলার কাছে বিক্রি করে দেয় অজানা দামে।
মাসখানেক আগে চট্টগ্রামে জিইসির মোড়ে এক ছোট্ট শরবতের দোকানে অসম্ভব টেস্টি এক গেলাস লেবুর শরবত খেয়ে আমার ইনোসেন্টের কথা মনে পড়ে যায়। কদিন আগে আমাদের শফিউল আইডিয়া সংক্রান্ত একটা স্ট্যাটাস দেয়। যেটা দেখে মনে হয় আমাদের হবু উদ্যোক্তাদের বড় অংশেরই আইডিয়া খোঁজা থেকে গ্রোথ স্টেজ পর্যন্ত অনেক খটকা আছে।
এই খটকা দূর করার জন্য রিচ, এডাম আর জনের লেখা এ টেল এবাউট ইনোসেন্টের উল্লেখযোগ্য অংশ আমার পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছিলাম সেই ২০১৪ সালে। এখন মনে হচ্ছে নতুনদের আর একবার এটা মনে করিয়ে দেওয়া দরকার।
তাই সব পর্বকে একত্রে এখানে লিংক আকারে সংযোজন করে দিলাম যাতে কেউ ইচ্ছে করলে এক লহমায় সব পড়তে পারে।
এ বুক এবাউট ইনোসেন্ট : অবতরণিকা
ইনোসেন্টের শরবত-১: হোয়াট ইজ দি বিগ আইডিয়া
ইনোসেন্টের শরবত-২: স্টার্ট স্মল, বাট ডু স্টার্ট
ইনোসেন্টের শরবত-৩: কীপ অন কীপিং অন
ইনোসেন্টের শরবত-৪: বাড়ার যন্ত্রণা সামাল দেওয়া
ইনোসেন্টের শরবত ৫: নো হোয়াট ইউ কেয়ার এবাউট
ইনোসেন্টের শরবত ৬- মানুষই আসল তবু (ইটস অল এবাউট পিপল)
ইনোসেন্টের শরবত-৭ : নাও দ্যাটস হোয়াট উই কল মার্কেটিং
ইনোসেন্টের শেষ কিস্তি : কান পেতে রই
ইনোসেন্টের শরবতের আরও কিছু ইনসাইড আছে যা ২০১৪ সালে আমার কাছে শেয়ার করার মতো মনে হয়নি। এখন মনে হচ্ছে এ অংশগুলোও হয়তো ঠিক করে, কাস্টোমাইজ করে প্রকাশ করা যায়।
তাই ভাবছি এটাকে একটা বই করবো।
আমাদের উদ্যোক্তা বিষয়ক আলাপ আলোচনার বড় অংশজুড়ে থাকে আইটি উদ্যোক্তাদের আর বিলিয়ন ডলারের আলাপ। কিন্তু এর বাইরেও সমস্যাসংকুল জগতে লাখো-লাখো সমস্যা আছে। সেগুলো সমাধান করেও স্বনামের উদ্যোক্তা হওয়া যায়।
সবার জন্য শুভ কামনা।