ইনোসেন্টের শরবত-৭ : নাও দ্যাটস হোয়াট উই কল মার্কেটিং
তোমার যদি সফল কোন ব্যবসা থাকে তাহলে অবশ্যই তোমার একটা মার্কেটিং কৌশল থাকতে হবে। মুশকিল হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তি এই বিষয়টিকে ভিন্ন ভিন্নভাবে চিন্তা করেন। কারো কারো কাছে মার্কেটিং কৌশল মানে হল পণ্য বা সেবার চমত্কার একটি নাম, একটি সুন্দর লোগো যা কিনা কোম্পানির সফল কাগজপত্রের ওপরে শোভা পায়। আবার অন্যদের কাছে এ হল বিজ্ঞাপন ও জিঙ্গেল, মার্কেটিং বিভাগ যা তৈরি করে এবং বিভিন্ন মাধ্যমের বিজ্ঞাপন বিরতিতে দেখানো বা শোনানো হয়। আর আমাদের কাছে?
আমাদের সম্পূর্ণ ব্যবসা থেকে এর গুরুত্ব একবিন্দুও কম নয়। যেভাবে আমরা আমাদের ভ্যানগাড়ি চালাই, টেলিফোনের উত্তর দেই, আমাদের পণ্য তৈরি করি কিংবা গ্রাহকদের মোকাবেলা করি—তার সবই আমাদের মার্কেটিং। কারণ আজকের এই পরস্পর সংযুক্ত মার্কেটিং জগতে যা কিছু তুমি কর, বল কিংবা যা হয়েছ তার সবই কিন্তু যোগাযোগ করে। কাজে যখনই তোমার ব্র্যান্ডের মার্কেটিংয়ের কথা আসবে তখন সব কিছুই গুরুত্বপূর্ণ (যদিও কিছু কিছু বিষয় অন্য বিষয় থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ!)।
তোমার প্রতিশ্রুতি
বড় ব্র্যান্ডগুলো সবসময় কিছু না কিছুর সমার্থকে পরিণত হয়। তারা তাদের সম্ভাবনাময় গ্রাহকদের এমন প্রতিশ্রুতি দেয়, যা তাদের জন্য দরকারি বা নিদেনপক্ষে প্রাসঙ্গিক। নির্বাচনের সময় প্রার্থীরাও তাদের ‘আশা’ বা ‘পরিবর্তন’কে ব্র্যান্ডিং করতে পারে। সব বড় ব্র্যান্ডগুলো, যাদের মার্কেটিং এর ব্যাপার-স্যাপার পেশাদারিভাবে সামলানো হয় তারা সবাই জানে তাদের প্রতিশ্রুতি কী, তারা কী বিক্রি করে, কোন ধরণের সেবা দেয়।
কাজে, তুমি যদি তোমার ব্র্যান্ডকে বাজারে চালু এবং প্রতিষ্ঠিত করতে চাও তাহলে তোমার ব্র্যান্ডের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শুরু কর। তোমার পণ্য বা সেবা কোন কোন বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখে এবং কী কী আসলে সে ডেলিভারি করতে পারে তার ওপরই নির্ভর করে তোমার ব্র্যান্ড প্রতিশ্রুতি। এর সঙ্গে যোগ কর তোমার কাস্টোমাররা কী চায় আর প্রতিদ্বন্দ্বিরা কী কী দিতে পারছে না সেটাও। তবে যাই করো না কেন, তা অবশ্য সহজ, মোটিভেটিং, আলাদা এবং সত্য হতে হবে।
এরপর নিশ্চিত হও যে, তোমার পণ্য ঠিক এগুলোই ডেলিভারি করে। এর থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোন মার্কেটিং কৌশল আমাদের জানা নেই। মানে হল, তোমার পণ্য বা সেবাকে অবশ্যই তোমার ব্র্যান্ড প্রতিশ্রুতির পরিচারক হতে হবে। ইনোসেন্টে আমাদের প্রতিশ্রুতি হল প্রাকৃতিকভাবে, ভাল স্বাদের এবং স্বাস্থ্যকর জিনিস তৈরি করা এবং এ থেকে আমরা বিচ্যুত হইনি।
তোমার প্রতিশ্রুতি তোমার পণ্যের মাধ্যমে প্রতিফলিত করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটিই কিন্তু একমাত্র বিষয় নয়। তোমাকে তোমার পণ্য বা সেবাকে জীবন্ত করে তুলতে হবে—যাতে সেটি চোখে পড়ে, কাঙ্ক্ষিত হয় কিংবা আলোচনাতে আসে বা স্মরণে থাকে। আর এইজন্যই তোমাকে ‘মার্কেটিং-এর কালো দিক’ ব্যবহার করতে হবে। যদি তুমি এ ব্যাপারে সতর্কও যত্নশীল না হও তাহলে তা তোমার জন্য হয়ে উঠতে পারে ব্যয়বহুল। কিন্তু সর্বাত্মক চেষ্টা কিন্তু এটিকে সাশ্রয়ী, এমনকি বিনামূল্যেরও করে তুলতে পারে।
একটি কম খরচের গাইড
আমরা যখন আমাদের ব্যবসার জন্য মূলধন খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম তখন সবাই আমাদের বলেছে কেন আমাদের ব্যবসা সফল হবে না। নানা কারণের মধ্যে একটা ছিল বড় বড় ব্র্যান্ডগুলোর বিজ্ঞাপনের লড়াইয়ে আমরা টিকে থাকতে পারবো না। সবাই আমাদের বলেছে ইউকের মার্কেটে প্রবলভাবে আধিপত্য বিস্তার করে আছে পেপসি কোম্পানি। তারাই ট্রপিকানা ও কোপেলা ব্র্যান্ডের মালিক। তাদের হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপনী ব্যয় আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
উদ্যোক্তার কাজই হল এই সব মানুষকে ভুল প্রমাণ করা। কিন্তু আমাদের স্বীকার করতে হবে, তাদের বক্তব্যেও কিছু সারবস্তু আছে। আমাদের মার্কেটিং বাজেট বলতে গেলে শূন্যের কোঠায়। তার মানে বড় কোন হোটেলে লঞ্চিং করতে পারবো না। আর বিষয়টা আমাদের একটু নার্ভাসও করে তুলেছে।
যাহোক, যদি নেসেসিটি মাদার অব ইনভেনশন হয় তাহলে টাইট বাজেটে সেটা করা হল ফাদার অব ইনভেনশন। যেহেতু আমাদের যোগাযোগ করতেই হবে এবং যেহেতু সেটি করার জন্য কোন টাকা আমাদের নেই সেহেতু আমাদের এমন রাস্তা বের করতে হয়েছে যা ফ্রি কিন্তু কার্যকরী। আর এি রাস্তাতে আমরা দেখেছি নিচের বিষয়গুলো হল সবচেয়ে দরকারি।
১. মঞ্চের সঠিক নাম নির্বাচন
বিজ্ঞাপনের জন্য যখন কোন টাকা থাকে না, তখন ব্র্যান্ডের নামটা এমন হওয়া চাই, যাতে সেটি নিজেই যেন প্রতিশ্রুতির সমার্থক হয়। বাংলা প্রবাদ অনুসারে কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন রাখলে যা হয় তেমনি প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নাম ব্র্যান্ডকে বিপদে ফেলে। নামটা অবশ্যই মনে রাখার মতো এবং অন্যদের চেয়ে আলাদা হতে হবে। আর আমাদের আর একটা শর্ত ছিল তা যেন টি-শার্টেও মানায়! কারণ—আমরা প্রায়শ টি-শার্ট পরে থাকি।
তবে সেরকম একটা নাম আমরা পাচ্ছিলাম না। এর মানে এই নয় যে আমরা চেষ্টা করিনি। বস্তুত সেই ট্রাক বা Yes/No-এর ঘটনার পর আমরা শ’খানিক নামের একটা তালিকাও তৈরি করি। আমরা ‘নেকেড’ এর পক্ষে দিলাম কিন্তু সেটি নেওয়া হয়েছে আগেই, বন্ধুরা বলেছে ‘Monkey Vomit’ তবে সেটিতে গ্রেট ব্র্যান্ড ভ্যালু আমরা পাইনি।
শেষ পর্যন্ত আমরা ইনোসেন্টকে খুঁজে পেয়েছি। রিচার্ডের শহরে গিয়ে আমরা ‘প্রাকৃতিক’, ‘স্বাস্থ্যকর’ এবং ‘পিওর’-এর সমার্থক শব্দ খুঁজতে থাকি। এমন শব্দ যা উপরের তিনটাকেই প্রকাশ করবে। আমরা একটা লম্বা তালিকা তৈরি করি এবং সেখানে প্রত্যেকটা নামের পাশে একটা স্কোর বসাই। কয়েকদিন সেই তালিকার ওপর ঘুমায়ে আমরা শেষ পর্যন্ত innocentকে খুঁজে পাই।
২. আগে দর্শনধারী, পরে গুনবিচারি
সহজ করে বললে বলতে হয় তোমায় প্যাকেজিংই প্রথমবার তোমার পণ্য বিক্রি করে। এর পরে শত হাজার বারের বেলায় সেটি হয় স্বাদ এবং গুণের কারণে। কাজেই মার্কেটিং ব্যকরণে নাম খুঁজে পাওয়ার পরের কাজই হল প্যাকেজিং। আমাদের প্যাকেট ডিজাইন করার সময় আমরা প্রাকৃতিক ও বিশুদ্ধতার ব্যাপারটি মাথায় রেখেছি। সে সময় যত ফ্রুট ড্রিংক পাওয়া যেত সবগুলো থাকতো অস্বচ্ছ বোতলে। বোতলের ওপর একটা চকচকে লেভেল থাকতো যাতে ফলের ছবি দেওয়া থাকতো। কারণ হলো—ফলের নির্যাস থেকে শরবত বানানো হলে সেটি দেখতে বাসার শরবতের মত হয় না। অস্বচ্ছতা সেটিকে অনেকখানিক ঢেকে রাখতে পারে আর ফলের ছবি না দিলে তো কথাই নাই!
আমাদের এই সমস্যা নাই। আমাদের শরবত হল প্রাকৃতিক, তাই তা ফলের চমত্কার রং সমৃদ্ধ। কাজেই, আমরা ‘সী থ্রু’ বোতল বেঁচে নিলাম। আর যেহেতু জুসের রঙই বলে দিচ্ছে কিসের জুস, কাজে কষ্ট করে বোতলের গায়ে আম-কমলার ছবি দেওয়ারও দরকার নাই। পক্ষান্তরে, এটি একটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে যাতে আমরা লেবেলের জায়গাটি নিয়ে ভাবতে পারি।
সে সময় আমরা ডিপেন্ড নামে একটা এজেন্সির সঙ্গে কাজ করতাম। ওদের প্রধান ডিজাইনারের নাম গ্রেভি। আমরা একটা সহজ লোগো খুঁজছিলাম। জনের পরামর্শ দিল একটি মুখ এবং তার ওপর একটি হালো। [যারা সেইন্ট ছবিটি দেখেছেন তারা হালো দেখেছেন, সেইন্টের মাথার ওপর একটি বৃত্তের মত যা তার পবিত্রতা প্রকাশ করে]। গ্রাফি বললো—কী, এরকম?
এটা বলার পরপরই গ্রাফি একটা মুখের ছবি একে তাতে দুটো চোখ বসায় দিল আর তার ওপর একটু মেঘের মতো হলো। আমরা তাকালাম এবং বললাম, ইয়েস।
গ্র্যাভির সঙ্গে বসে আমরা মাত্র ৩ সেকেন্ডে আমাদের লোগো চূড়ান্ত করে ফেললাম! জন সেই মূল স্ক্যাচটা নিয়ে বোতলের লেভেলে জুড়ে দিল আর আমাদের ভেলেও হেভি হয়ে গেল।
তৃতীয় সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে লেভেলের কাগজ সংক্রান্ত। অনেকের কাছে এটি খুবই সহজ একটা বিষয়। আমরা দেখেছি বাজারের লেভেলগুলো চকচকে প্লাস্টিক যা লেমিনেশন করা। আমাদের কাছে এগুলোকে সস্তা ও কৃত্রিম মনে হয়। আমরা এমন কাগজ খুঁজে বের করলাম যাতে কোন বাড়তি ট্রিটমেন্ট হয়নি। ফলে সেটির মধ্যে কিছু উঠানামা, খাঁজ ছিল। সরবরাহকারী অবশ্য বলেছিল ফ্রিজে রাখলে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিন্তু আমরা পরীক্ষা করে দেখলাম সেটা সত্য নয়। ফলে আমরা ওইটা নিয়েই আগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম। আর একটি লেসন আমরা শিখলাম—Don’t always believe people who say things won’t work।
প্যাকেজিংয়ের সব কাজ শেষ হওয়ার পর দেখা গেল প্যাকেটের পেছনে সামান্য একটা খালি জায়গা রয়ে গেছে। আমরা ওই জায়গাটা বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
৩. ঠিক জায়গায় নিজেকে দেখাও
একটা ব্র্যান্ডকে কোথায় দেখা যায় সেটিও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। তারকারা এটা খুব ভাল জানে। ফলে, তারা কোন অনুষ্ঠানে ছবি তুলতে পছন্দ করে কিন্তু নিজের বাসায় সময় কাটানোর ছবি তুলতে চায় না! আমরাও ঠিক তাই করেছি, করি। আমাদের লঞ্চিং কৌশলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আমাদের বোতলকে যেন দেখা যায়, ঠিক জায়গায়।
প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ইনোসেন্ট একটি খাবার কোম্পানি যা প্রাকৃতিক এবং ভাল মানের প্রতি সবচেয়ে বেশি নজর দেয়। কাজে, শহরের প্রিমিয়াম ফুড শপ, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ফুড কর্নার—এসব জায়গায় থাকাটা দরকার। আমাদের লঞ্চিং-এর সময় লন্ডনের বড় স্টোর ছিল—প্ল্যানেট অর্গানিক ও ওয়াইল্ড ওইস। ওদের সঙ্গে দেখা করে আমাদের শরবতের কথা বলার পর সৌভাগ্যক্রমে তারা রাজি হয়ে যান। আমরা অবশ্য আরো কিছু জায়গা যেমন ক্লাব, পশ হোটেল আর ফেন্সি শপেও ইনোসেন্টকে পৌঁছে দিলাম।
৪. মিডিয়াতে যাও
জনসংযোগ একটি ব্রান্ডকে তুলতে বা নামাতে পারে। প্রথম কয়েক সপ্তাহের অভিজ্ঞতা আমাদের ঠিক এই শিক্ষাই দিয়েছে।
ব্যবসা শুরু করার কয়েকদিন পর অ্যাডাম খুব মন খারাপ করে একটি মিটিং থেকে ফিরে আসে। সে সময় সে চেষ্টা করছিল হার্ভে নিকলস ফুড হলে আমাদের শরবত বিক্রি করার। কিন্তু তারা প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। এটি ছিল আমাদের জন্য খুবই মর্মান্তিক। কারণ—হার্ভে নিকলস ছিল আমাদের পছন্দের আউটলেট তালিকার শীর্ষে। আমাদের ধারণা ছিল হার্ভে নিকলস-এ রাখতে পারলে অন্যত্র রাখাটাও সহজ হবে। কিন্তু বিধিবাম।
একই দিন অন্য একটা ঘটনা ঘটে যার সঙ্গে অ্যাডামের ব্যর্থতার কোন সম্পর্ক ছিল না। জনের এক বন্ধু তাকে একটি অনুরোধ করে। বন্ধুটির গার্লফ্রেন্ড ইভনিং স্টান্ডার্ড নামে একটি পত্রিকায় কাজ করে এবং তার একটি কাজ হল নতুন উদ্যোক্তাদের ইন্টারভিউ করা। সে জনকে লন্ডনে ব্যবসা শুরু করা প্রসঙ্গে ইন্টারভিউ করতে চায়। খুবই সহজ অনুরোধ যাতে না বলাটা কষ্টকর।
সাংবাদিক তার ইন্টারভিউটি করার পরের দিনই পত্রিকায় একটা ফিচার ছাপা হয়—লন্ডনের নতুন ইকো-এন্ট্রারপ্রেনার। মজার ব্যাপার হল একজন টেলিভিশন প্রযোজক ফিচারটি পড়ে আমাদেরকে তার শো’তে দেখানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।
তার শোর নাম—ক্যাপিটাল গেইনস। কিন্তু পত্রিকার লোকেদের কাছে আমাদের বিস্তারিত ছিল না। ফলে তিনি পত্রিকা থেকে আমাদের ঠিকানা জোগাড় করতে পারেননি। কাজে ওই প্রযোজক ফুড হলে ফোন করে তাদের জুস ক্রেতার সঙ্গে কথা বলতে চান। দেখা গেল, উনিই সেই লোক যিনি অ্যাডামকে না বলেছে। প্রযোজক ফুড হলের কাছে জানতে চান তারা ইনোসেন্টের খবর রাখে কিনা, ইনোসেন্ট ওখানেই পাওয়া যায় কী না এবং ইনোসেন্টের কারো কোন ফোন নম্বর আছে কি না?
কারণ তিনি ইনোসেন্টকে নিয়ে একটা টিভি শো করতে চান।
ওই লোক তখন জানায় যে, যদিও তারা ইনোসেন্ট রাখে না, কিন্তু তার সঙ্গে টেলিফোনের পর এখন রাখবেন।
কাজেই, অ্যাডামের রিজেকশনের মাত্র কয়েকদিন পরেই আমরা দুটো কল পাই। একটি একজন টেলিভিশন প্রযোজকের যিনি আমাদের নিয়ে টিভি শো করতে চান, অন্যটি হার্ভে নিকলস থেকে যারা এখন আমাদের শরবত রাখতে চান। কী সুন্দর দিন।
এটি খুবই দুর্লভ ঘটনা। তবে এটা থেকে বোঝা যায় যে, জনসংযোগ ও মিডিয়া আসলে কী করতে পারে। মানুষ মিডিয়াতে যা দেখে বা শুনে তা থেকে প্রভাবিত হয়। সবচেয়ে বড় কথা সব হয়েছে নিখরচায়।
ইন্টারেস্টিং না হলে সাংবাদিকরা কোন কিছুতে আগ্রহী হয় না। কিন্তু, সাংবাদিকদের নজরে পড়ার জন্যও কিছু কাজ করা যায়। নিয়মিত পত্রিকা পড়লে দেখা যাবে যে, অনেক পত্রিকাতে নতুন উদ্যোক্তাদের সাক্ষাত্কার ছাপা হয়, কর্নার থাকে যেখানে তোমার পণ্য বা সেবার অনুরূপ পণ্য যা সেবার রিভিউ থাকে। সেখান থেকে সাংবাদিকের নাম-ঠিকানা যোগাড় করে তাকে ফোন করা যায়। বলা যায় যে, তাদের ছাপানো খবরগুলো তুমি নিয়মিত পড় এবং তোমার গল্পটিও তাকে শোনাতে পারো, তাকে কিছু নমুনা পাঠাতে পারো, সঙ্গে একটা প্রেস রিলিজ। তোমার ব্যবসার ইন্টারেস্টিং স্টোরি তাকে বল—হয়তো তুমি স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে শুরু করেছ বা তোমার পণ্যটি কোন জাদুকরের মাথা থেকে এসেছে। তবে, মিথ্যা বল না। যদি তুমি তাকে সন্তুষ্ট করতে পারো তাহলে সে তোমাকে সাহায্য করবে এবং প্রথম রিপোর্টই তোমাকে অনেক সাহায্য করবে।
রিচার্ডের একটা ইন্টারভিউ এখানে পড়া যাবে।
৫. চাখতে দাও!
তোমার পণ্য যদি ভাল হয়, তাহলে সবচেয়ে ভাল বিজ্ঞাপন হল কাউকে সেটা পরখ করতে দেওয়া। এই ব্যাপারটা সবচেয়ে ভালো জানতেন উইলিয়াম রিগলি, জুনিয়র। উইলিয়াম রিগলি হলেন রিগলি’জ গামের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯১৫ সালে তিনি আমেরিকার ফোন বইয়ে যতজনের নাম পান, প্রত্যেকের কাছে ৪টি করে গামস্টিক পাঠিয়ে দেন, বিনামূল্যে। এর মাধ্যমে তিনি বাজারের ৫০% দখল করেন এবং এখনো সেটা অব্যাহত আছে।
দুর্ভাগ্যবশত আমাদের শরবত ডাকযোগে পাঠানো সহজ নয়। তবে, শুরু থেকে আমরা কাছাকাছি একটা কিছু করার চেষ্টা করেছি। যেখানে ইনোসেন্ট বিক্রি হত সেখানে আমরা একটি টেবিল আর টেস্টার নিয়ে বসতাম। যেই আগ্রহ দেখাতো তাকে একটু চেখে দেখতে দিতাম। দেখা যেত, অনেকেই কেনার ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন।
সামনাসামনি কাস্টোমারদের মধ্যে কয়েকজনকে চেখে দেখার সুযোগ দেওয়াটা কিন্তু অন্য একটা দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে নিজের পণ্য ও কোম্পানি সম্পর্কে কিছু কথা বলা যায় আবার তাদের ফিডব্যাকও জানা যায়। এটি খুব কাজে লাগে কারণ তুমি তোমার গ্রাহকদের সম্পর্কে আরো সচেতন হতে পারো।
এবং বরাবরের মতো মূলনীতি কিন্তু একই—সব কিছুই যোগাযোগ করে, বিশেষ করে যে কিনা এই স্যাম্পলটা গ্রাহকের হাতে তুলে দিচ্ছে সেও। কোন কোন ব্র্যান্ড তাদের ফ্রন্ট লাইনের কর্মীদের এই কাজে নিয়োগ করে। আমেরিকার MAC কসমেটিক্স কোম্পানি আলাদা করে লোক নিয়োগ করে যারা নিউইয়র্ক ও লসএ্যাঞ্জেলস শহরের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে এই কাজ করতে পারে। এদের কানে দুল, হাতে ট্যাটু কিংবা শরীরে অনেক আঁকিবুকি থাকে!
কাজে তামার অ্যাম্বাসেডররা কীভাবে যোগাযোগ করছে সেটা নজরদারিতে রাখতে হবে। তারা সবকিছু জানে ও বোঝে কী না সেটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারাই গ্রাহকদের কাছে তোমার কোম্পানির প্রথম পরিচয়। আর প্রথম পরিচয়ের ধারনাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে।
৬. ডিজিটাল! ডিজিটাল!!
ডিজিটাল মিডিয়ার শক্তিকে ব্যবহার করা হালআমলে কোন ব্রান্ডকে প্রতিষ্ঠিত করার একটি উপায়। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এটি খুব ভালভাবে বোঝেন। তার নির্বাচনী প্রচারনাই হল চূড়ান্ত মার্কেটিং কৌশল (একটি সহজ ও সোজা প্রতিশ্রুতি— ‘পরিবর্তন’। একটি প্রোডাক্ট যা এই প্রতিশ্রুতিকে প্রকাশ করে—তিনি নিজে। এবং একটি গ্রেট এন্ডলাইন—‘হ্যাঁ, আমরা পারি (Yes we can)। তবে, এই প্রচারণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহার। এর মাধ্যমে তিনি দেশজুড়ে তার পক্ষের ভোটার, অংশগ্রহণকারী ও প্রচারকদের রিক্রুট করেছেন। নির্বাচনের সময় তার সংগ্রহে ছিল ১৩ মিলিয়ন ই-মেইল, এদের মধ্যে ৩ মিলিয়ন তার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ডোনেশন দিয়েছে, তার নিজের সামাজিক যোগাযোগ সাইটে ২ মিলিয়ন প্রোফাইল এবং ১.২ মিলিয়ন কমিউনিটি ভলান্টিয়ার। এরকম একটি বিষয় ডিজিটাল প্রযুক্তির আগে কল্পনা করাও কঠিন ছিল এবং এর শক্তিতে বলিয়ান ওবামা তার জয় নিশ্চিত করেছেন।
এখন যদি তোমার ব্যবসা হয় চকলেটের তাহলে তা নিশ্চয় ওবামার মত সেরকম পরিবর্তনশীল হবে না, কিন্তু তাই বলে ডিজিটাল মাধ্যমের গুরুত্ব কিন্তু কমে যাচ্ছে না। এবং সবচেয়ে বড় কথা হল বারাক ওবামা যেভাবে ডিজিটাল মিডিয়াকে ব্যবহার করতে পারেন, তুমিও কিন্তু সেভাবেই সেটি ব্যবহার করতে পারো। কাজে, এ ব্যাপারে তোমাকে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসার শুরু থেকে আমরা এই বিষয়ে যথেষ্ট উপকার পেয়েছি।
একেবারে শুরুতে আমরা একটি সিম্পল ওয়েবসাইট বানাই। এটি এমনভাবে বানানো হয় যাতে আমরা কোন রকম বাড়তি খরচ ছাড়াই প্রতিদিন এটিতে নতুন বার্তা, খবর এবং তথ্য দিতে পারি। আমরা আমাদের শরবতের বোতলে ওয়েবসাইটের ঠিকানাটা প্রিন্ট করে দিয়েছি। প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমরা অনেকের কাছ থেকে ই-মেইল পাই। সেখানে তারা কোম্পানি সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে চান। আমরা তাদের প্রত্যেককে জবাব দেই এবং বলি যে তারা রাজি থাকলে আমরা তাদেরকে যখনই নতুন কোন খবর হবে তখনই সেটি জানাতে পারবো। মজার ব্যাপার হলো ১১ জনের প্রত্যেকেই তাতে রাজি হোন। পরের সোমবার ড্যান আমাদের প্রথম নিউজ লেটার তৈরি করে সেটি তাদের সবাইকে ই-মেইল করে। এভাবে শুরু হয় যাকে আজ আমরা বলছি—ইনোসেন্ট পরিবার—এক দল লোক যারা আমাদের নানান খবর পেতে চান। প্রতি সপ্তাহে আমরা তাদের নিউজ লেটার এবং কখনো কখনো ক্ষুদ্র কোন উপহার পাঠিয়ে দেই। এই পরিবার এখন এক লক্ষ ২০ হাজার সদস্য রয়েছে যার শুরুতে ছিল মাত্র ১১ জন। এখন আমাদের আছে ব্লগ, ইউটিউব ভিডিও, ফ্লিকারের গ্রুপ, ফেসবুক ফ্যান, টুইটার ফীড ইত্যাদি। আমরা সব কয়টা প্ল্যাটফরমেই চেষ্টা করি এবং কোন একটার প্রতি বায়াস হইনি। যদি আমাদের ড্রিংকাররা নতুন কোন পদ্ধতিতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায়, তাহলে আমরা সেটিই এডপ্ট করে ফেলি।
৭. এরপর বিজ্ঞাপন দাও
আমাদের ব্যবসা শুরুর ষষ্ঠ বছরে আমরা প্রথম টাকা দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করি। আমাদের সবসময়ের পরিকল্পনা ছিল এটি সবার শেষে করা যখন আমাদের ব্রান্ড এসটাবলিশ এবং ডিস্ট্রিবিউটেড। অবশ্য আমাদের টাকাও ছিল না। তবে ওপরের কাজগুলোর কারণে আমাদেরকে দেখা যাচ্ছিল। সুপার মার্কেটে যখন আমাদের শরবত খেতে শুরু করল তখন মনে হল বেশি লোকের কাছে খবরটা পৌঁছানো যাক।
অন্য সবকিছুর মত আমরা খুব ছোট আকারে শুরু করি। আমরা শুরু করি মাত্র ৫টা বিলবোর্ড দিয়ে। পরের বছর আমরা লন্ডন জুড়ে পোস্টারিং করি আর তারপরের বছর পুরো দেশ জুড়ে।
আমাদের প্রথম টিভি বিজ্ঞাপন প্রচার হয় ২০০৫ সালে। সেটির স্ক্রিপ্ট আমরাই লিখেছি। আমাদের এক বন্ধু তা ভিডিও করে দিয়েছে। এতে মাত্র ৫ হাজার পাউন্ড খরচ হয়।
তারপর আমরা অনেক দামী বিজ্ঞাপন প্রচার করেছি, তবে ওইটির মতো আর কোনটি কার্যকর হয়েছে বলে আমাদের মনে হয় না।
এখন আমরা এটিকে মার্কেটিং বলে থাকি।
=====আমাদের পরামর্শ ======
১. প্রতিশ্রুতির তালিকা বানাও এবং তা রক্ষা কর
২. সঠিক নামটি খুঁজে নাও
৩. লুক গুড
৪. সঠিক জায়গায় নিজেকে দেখাও
৫. পত্রিকায় নিজেকে আনো
৬. ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাও
৭. গো ডিজিটাল
৮. এবং বিজ্ঞাপন দাও
=================
পরের পর্ব—টেইক কেয়ার অব দ্যা ডিটেইলস।
3 Replies to “ইনোসেন্টের শরবত-৭ : নাও দ্যাটস হোয়াট উই কল মার্কেটিং”
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.
পড়ছি, আর ভাবছি্লাম।বরাবরের মতই অসাধারন লেগেছে। অনেক কাজে লাগবে এটা আমার। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।