মাসিক মাত্র দুই লক্ষ টাকার ফেলোশীপ
সম্পদ যখন কম থাকে তখন প্রজাতির বিকাশের সম্ভাবনা বাড়ে কারণ প্রত্যেকেরই তখন যোগ্যতম হয়ে উঠতে হয়ে। আমাদের মতো দেশে তাই একটা ভাল প্রতিযোগিতা অনেক সময় খুবই ভাল উদাহরণ তৈরি করতে পারে। আমরা না জানলেও, সে ১৮৯৩ সালে হাঙ্গেরিতে প্রথম গণিত অলিম্পিয়াড শুরু হয় আর আমরা শুরু করি ২০০১ সালে! বাংলাদেশে মেধাভিত্তিক প্রতিযোগিতার যে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে সেটি শুরুর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমাদের কায়কোবাদ স্যারের। সেই ১৯৮৬ সালে দেশে ফিরে একটা গণিত অলিম্পিয়াড শুরুর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেটা করার জন্য তাকে মাত্র ১৪ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। গণিত অলিম্পিয়াড শুরুর গল্পটা আমি আগেই লিখেছি।
তবে, গণিত অলিম্পিয়াড শুরুর আগেই তিনি দেশে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার ব্যাপারটা চালু করেন। প্রথমে বুয়েটের সিএসই বিভাগের ছেলেমেয়েদের নিয়ে পরে সেটি অন্য ক্যাম্পাসেও ছড়িয়ে পড়ে। আর এখনতো আমরা জাতীয় হাইস্কুল ও মেয়েদের জন্য প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা শুরু করেছি। তবে, বিডিওআইটা সেভাবে বিকশিত হয়নি কেন জানি।
তো স্যারের সঙ্গে গল্প হলেই স্যার কয়েকটা কথা বলতেন। যেমন ইউনিভার্সিটির জন্য একটা আইকনিক বিল্ডিং বানানো। গাজীপুরের দিকে একটা ভার্সিটি হবে যার বিল্ডিং হবে ১০০ তলা। দূর থেকে দেখা যাবে। অথবা দেশে এমন একটা চাকরি থাকবে যেখানে বেতন দেওয়া হবে এতো বেশি যে, সবাই ঐ চাকরি করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়বে। আমাদের সেরা মেধারা সেটার চেষ্টা করবে এবং যারা সেটা পাবে না তারা মনের দু:খে গুগল বা ফেসবুকে চাকরি করতে যাবে।
স্যারের এই গল্পটা আমরা অনেকদিন ধরে শুনি। আমাদের তো তেমন কিছু করার নাই তাই শুনি।
তো, বছর দেড়েক আগেই স্যারের শ্রোতাদের মধ্যে যুক্ত হয়েছেন আমাদের আইসিটি মন্ত্রী, জুনাইদ আহমেদ পলক। তো, স্যার একদিন কথায় কথায় এ কথাগুলো বললেন। তারপর থেকে মন্ত্রী মহোদয় সেটা নিয়ে ভেবেছেন, আইসিটি বিভাগ থেকে উদ্যোগ নিয়ে অবশেষে মাসখানেক আগে সে প্রস্তাব পাস হয়েছে কেবিনেট থেকে।
আজ এনজিপিসির সমাপনী অনুষ্ঠানে এই “হাই প্রোফাইল আইসিটি স্কলার ফেলোশীপ”-এর কথা তিনি বলেছেন। এই ফেলোশীপ দেওয়া হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য স্নাতককে। পাস করার সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে আবেদন করা যাবে। দুটো জিপিএ ৫ (চারটা নয়!) ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কমপক্ষে ৩.৭৫ (৪.০০ এর মধ্যে) সিজিপিএ থাকলেই কেবল আবেদন করা যাবে। তবে, শুধু রেজাল্টে এই ফেলোশীপ পাওয়া যাবে না। মেধার পাশাপাশি উদ্ভাবনি ক্ষমতাও থাকতে হবে। চারঘন্টার একটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার পর প্রার্থীকে একটি হাই-পাওয়ারড কমিটির সামনে দাঁড়াতে হবে (বসার কথা কেন বলছি না)। মানে নির্বাচিত হলে পরবর্তী একবছর সে কোন উদ্ভাবনী কাজটা করতে চায় তার একটা পূর্নাঙ্গ প্রস্তাব দাখিল করতে হবে এবং সেটা বিচারকদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। যদি সেটা টিকে যায় তাহলেই নির্বাচন।
তো এই হাই-প্রোফাইল স্কলার ফেলো কী করবেন?
ঐ যে কাজটা তিনি করতে চেয়েছেন সেটাই করবেন তবে আইসিটি বিভাগ তাঁর জন্য একজন সুপারভাইজর ঠিক করে দেবেন যার তত্ত্বাবধানে তিনি কাজ করবেন।
তার ফেলোশীপ ধরা হয়েছে মাসে কমপক্ষে দুই লক্ষ টাকা। বছরে মাত্র ৩০ হাজার ডলার! বাছাই কমিটি সুপারিশ করলে এটা মাসিক তিনলাখও হতে পারে। দেওয়া হবে দুইজনকে, একজন মেয়ে আর একজন ছেলে।
২০১৯ সালের আবেদন
২০১৯ সালের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। আবেদনের নোটিশটি দেখা যাবে এখানে।
এই ফেলোশীপের বিস্তারিত নীতিমালা এখান থেকে পড়া যাবে। এ গেজেটের ১১ পাতা থেকে এই ফেলোশীপের বিস্তারিত আছে।
আবেদনের শেষ সময় – ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২টা।
এবারের দুইজনের জন্য শুভেচ্ছা।