আমি যেভাবে কাজ করি
[আবু বকর সিদ্দিক নামে এক তরুণ বেশ কয়েক বছর আগে আমার কাজ করার ধরন-ধারণ নিয়ে একটা দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। সেটির একটি লিংক আমার হোম পেজে রাখতে গিয়ে দেখলাম সাইটটি আর নেই। তখন ভাবলাম ঐ প্রশ্ন-উত্তরগুলো বরং আমার সাইটে থাকুক। এগুলো ২০১৪ বা ২০১৫ সালের প্রশ্ন-উত্তর।]
আপনিতো গণিত অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক। BdMOC সম্পর্কে কিছু বলুন এবং আপনার অবস্থানটি সম্পর্কে কিছু বলুন।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি হল আমাদের গণিত কর্মকাণ্ডের মূল সংস্থা। ১৯৯৭ বা ১৯৯৮ সালে বুয়েটের একদল শিক্ষার্থী প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় ১১তম স্থান অধিকার করে। সে সময় কায়কোবাদ স্যারকে (বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ) জিজ্ঞাসা করেছিলাম কী করলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা প্রোগ্রামিং-এ ভাল করবে। স্যার তখন আমাকে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের কথা বলেন। তখন আমি বুয়েটের কম্পিউটার সেন্টারে সার্ভার-টার্ভার দেখাশোনা করি। তারপর থেকে স্যারের সঙ্গে আমার দীর্ঘ আলাপ আলোচনার একটা অংশ জুড়ে থাকতো বাংলাদেশে গণিত অলিম্পিয়াড শুরু করা।
স্যার একদিন আমাকে জাফর ইকবাল স্যারের বাসায় নিয়ে যান । জাফর স্যার আর কায়কোবাদ স্যার একদিন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে দেখা করে পত্রিকার পাতায় গণিত অলিম্পিয়াড শুরুর কথা বলেন। সে সময় আমি প্রথম আলোর সাপ্তাহিক বিজ্ঞান পাতাটি সম্পাদনা করতাম। তারপর ২০০১ সালের ১৭ জুন আমরা প্রথম আলোর সাপ্তাহিক বিজ্ঞান প্রজন্ম পাতায় “নিউরনে অনুরণন” নামে একটা অভিনব গণিত প্রতিযোগিতা শুরু করি। কিছুদিন পত্রিকার পাতায় থাকার পর আমরা এটিকে বাইরে আনতে সচেষ্ট হই। ২৬ জানুয়ারি ২০০২ সালে প্রথম আলোর ৯ তলায় আমরা একটা মিনি গণিত অলিম্পিয়াডের আয়োজন করি। সেই অনুষ্ঠানে শাবিপ্রবির অধ্যাপক (এখন প্রয়াত) গৌরাঙ্গ দেব রায় স্যার ২০০৩ সালে একটি জাতীয় ভিত্তিক গণিত অলিম্পিয়াড শাবিপ্রবিতে করার কথা ঘোষণা করেন।
২০০২ সাল জুড়ে আমরা বিভিন্ন জেলায় কয়েকটা মহড়া দেই এবং পরে ২০০৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আর ১ ফেব্রুয়ারি প্রথম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড হয়। প্রথম আলো তার খরচের ভার বহন করে। এই সময় আমি ভাবলাম এটাকে যদি একটা নিয়মিত কর্মকাণ্ড করতে হয় তাহলে একটা সংগঠন দরকার। সেই চিন্তা থেকে স্যারদের সঙ্গে কথা বলি এবং ২০০৩ সালের ১৩ এপ্রিল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অফিস কক্ষে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির (বিডিএমওসি)র জন্ম। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যার সভাপতি, জাফর ইকবাল স্যার আর মুনিবুর রহমান স্যার সহ-সভাপতি, প্রথম আলোর আবদুল কাইয়ুম কোষাধ্যক্ষ এবং আমি সাধারণ সম্পাদক। কায়কোবাদ স্যার সহ আরো ৬ জন সদস্য। মোট ১১ জনের কমিটি। সেই থেকে এই কমিটি বাংলাদেশে গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধি প্রেরণ ইত্যাদি কাজ করে আসছে।
২০১৫ সালে বাংলাাদেশ আইএমওতে একটি রূপা ও ৪টি ব্রোঞ্জ পদক পেয়ে দক্ষিণ এশিয়া দেশগুলোর মধ্যে সেরা ফলাফল করেছে। ২০১৮ সালে রোমানিয়া থেকে আমরা প্রথম সোনার পদক অর্জন করেছি।
সাধারণ সম্পাদক হিসাবে এখানে আমার কাজ হলো কমিটির কাজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এর মধ্যে স্পন্সর ডাচ বাংলা ব্যাংক আর প্রথম আলোর সঙ্গে যোগাযোগ, বিভিন্ন এলাকার আয়োজন, একাডেমিক আর লজিস্টিক টিমের সমন্বয়, হিসাব রাখা, পত্রিকার পাতা বের করা (গণিত ইশকুল বা বিজ্ঞান প্রজন্ম এখন আর প্রকাশিত হয় না) ইত্যাদি। আমাকে সহায়তা করার জন্য একাধিক টিমও রয়েছে। কাজে আমাকে বেশির ভাগ সময় সিদ্ধান্ত নিতে হয় আর বড়দের বকা শুনতে হয়। বাকীটা টিমের লোকেরা করে।
BdOSN সম্পর্কে কিছু বলুন এবং এটি কিভাবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সহযোগিতা করছে?
বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) বিডিওএসএন হল আমাদের যত সংগঠন, কর্মসূচী বা উদ্যোগ রয়েছে তার সবের কেন্দ্রবিন্দু। এই সংগঠনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এমনভাবে আমরা ঠিক করেছি যেন এটি তারুণ্যের প্রায় সব ধরণের কার্যক্রমকে ধারণ করতে পারে।
তরুণ যেহেতু একা পথ চলে না, সবাইকে নিয়ে এগুতে চায় তাই এ সংগঠনের মূলমন্ত্র হলো শেয়ারিং। বোঝা যাচ্ছে এই সংগঠনের দর্শন হল মুক্ত দর্শন। অনেকে মুক্ত দর্শনকে মুক্ত সফটওয়্যারের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। আসলে মুক্ত বা ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হল মুক্ত দর্শনের সফটওয়্যার। সফটওয়্যারের কারণে অনেকে ভাবেন এটি বুঝি কেবল সিএসই শিক্ষার্থী বা কম্পিউটার প্রকৌশলীদের সংগঠন! আসলে কিন্তু তা নয়।
তবে, বিডিওএসএনে তাদের সংখ্যাধিক্য রয়েছে দুটি কারণে। এক নম্বর কারণ হল তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া এ যুগের তরুণদের এগিয়ে যাওয়াটা কঠিন। তথ্যপ্রযুক্তির নতুন সবকিছু আয়ত্তে রাখার কাজটাতে তাদের একধরণের প্রাধান্য থাকে। থাকার কথাই। আর দ্বিতীয় কারণ হল আমরা যারা শুরু করেছিলাম তারা সবাই কমবেশি তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত। এখন অবশ্য বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষার্থীরা এর সঙ্গে জড়িত। নিয়মিত কার্যক্রমগুলোর একটা হল উদ্যোগ এবং অন্যটা হল কর্মসূচী।
উদ্যোগ হয় এমন একটা কাজ যা কী না শেষ পর্যন্ত একটি আলাদা সংগঠনে পরিণত হয়। যেমন আমাদের বাংলা উইকির উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ এ পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব এখন আলাদা সংগঠনে রূপান্তরিত হচ্ছে। সাধারণভাবে আমাদের কাজ –
ক. সক্ষমতার উন্নয়ন– একুশ শতকের লড়াই-এ জিততে হলে দক্ষ আর সক্ষম হতে হবে। আমাদের কর্মকাণ্ডের বড় অংশ জুড়ে তাই রয়েছে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং। সেমিনার, প্রশিক্ষণ, বুট ক্যাম্প, কর্মশালা- নানান বিষয়ের, নানান ধরণের। উদ্দেশ্য একটাই দক্ষ মানবসম্পদ।
খ. মুক্ত কন্টেন্টের বিকাশ ও প্রসার– মুক্ত কন্টেন্টের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল উইকিপিডিয়া। বিডিওএসএনের একটি কাজ হলো উইকিপিডিয়াকে এগিয়ে নেওয়া। এজন্য ক্যাম্পেইন, শোভাযাত্রা, সমাবেশ, লেখালেখি যেমন করা হয় তেমনি উইকি ক্যাম্প ইত্যাদির মাধ্যমে উইকিকে কাজ করার স্বেচ্ছাসেবী তৈরিতে কাজ করা হয়েছে। এখন আলাদা সংগঠন হওয়াতে উইকির কাজটা সেভাবে সাংগঠনিক ভাবে করতে হয় না। তবে, ২১ ফেব্রুয়ারি আর পহেলা বৈশাখের সমাবেশ এখনো এই ক্যাম্পেইনের দুইটি বাৎসরিক প্রোগ্রাম যা ২০০৭ সাল থেকে হচ্ছে, আমরা পালন করি। ২০১১ সাল থেকে উইকিপিডিয়া নিয়ে বিডিওএসএনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের হাতে চলে যায় কারণ সেটি তখন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়। তবে, বিডিওএসএন এখনো মাঝে মধ্য উইকি নিয়ে কাজ করে।
গ. মুক্ত সফটওয়্যার প্রচার, বিতরণ, লোকালাইজেশন– মুক্ত সফটওয়্যার বিতরণের কাজটি করা হয়। শুরুর দিকে অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে মিলে লোকালাইজেশনের কাজ বেশ হলেও ইদানীং ঝিমিয়ে পরেছে অনেকখানি। সম্প্রতি আরডুইনোর পরীক্ষা বাংলা করা এবং এমআইটির স্ক্রাচকে লোকালাইজেশনের কাজে আমাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
ঘ. প্রযুক্তি মেলা – বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেসব প্রযুক্তি মেলার আয়োজন করে বিডিওএসএন তার সঙ্গে যুক্ত থাকতে ভালবাসে।
ঙ.উদ্যোক্তা উন্নয়ন – তরুণ সমাজকে আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিডিওএসএন কাজ করে। এক যুগ আগে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংকে জনপ্রিয় করার জন্য বিডিওএসএন যে কর্মকাণ্ড শুরু করে সেটি এখন নানান দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে আধুনিক পেশাজীবী তৈরি করার জন্য কাজ করছে এই সংগঠন। এ ব্যাপারে আমাদের একটি আন্দোলনের নাম চাকরি খুঁজবো না, চাকরি দেবো।
চ. তামাক (মাদক) বিরোধী কর্মকাণ্ড – বিডিওএসএন যেহেতু তারুণ্যের বিকাশ চায় সেহেতু যা যা তারুণ্যকে ধ্বংস করে তার বিরোধীতা করে। দেশের বেশ কটি বিশ্ববিদ্যালয়কে তামাকমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণা এবং সেটিও বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করেছে বিডিওএসএন। ইদানীং অবশ্য এই কাজটা কম হয়।
ছ. প্রোগ্রামিং জনপ্রিয় করা : কম্পিউটার প্রোগ্রামিংকে জনপ্রিয় এবং প্রোগ্রামারদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করি আমরা। সরকারের আইসিটি বিভাগকে হাইস্কুল পর্যায়ে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা আয়োজনে সহায়তা করে বিডিওএসএন। তাছাড়া আমরা শুরু করেছি ন্যাশনাল গার্লস প্রোগ্রামিং কনটেস্ট, ন্যাশনাল হাইস্কুল প্রোগ্রামিং কনটেস্ট ইত্যাদি।
ছাড়াও এর আরো কিছু কার্যক্রম রয়েছে এবং বেশ কিছু কাজ নতুন নতুন যোগ হচ্ছে।
বিডিওএসএনের ট্যাগ লাইন – স্বাধীনতার জন্য সব প্রজন্মকে রুখে দাঁড়াতে হয়েছে। এখন আমাদের পালা।
সংগঠন সংগীত – কাজী নজরুলের কারার ঐ লোহ কপাট।
সদস্যদের চাঁদা এবং কখনো কখনো কিছু স্পন্সরশীপের বেঁচে যাওয়া অর্থ দিয়ে এর কাজ চলে।
আপনি তো প্রথম আলোের “Youth Programme” এর কোঅরডিনেটোর। কো-ওরডিনেটোর হিসেবে কি ধরনের দায়িত্বগুলো আপনাকে পালন করতে হয়?
সংবাদপত্র হয়েও প্রথম আলো কিন্তু সংবাদ পত্রের চেয়ে একটু বেশি। আমার কাজ হল প্রথম আলোর যুবকদের জন্য সামাজিক কাজকর্মগুলোর সমন্বয় করা। যেমন গণিত অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞান জয়োৎসব ইত্যাদি। তাছাড়া যুবকদের সাফল্যের গল্প সবার সামনে নিয়ে আসা।
বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি সম্পর্কে কিছু বলুন।
আমাদের যতগুলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে তার মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো হল বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি। এটি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ২০০১ সালে, নিউটনের জন্মদিনে। মানে ২৫ ডিসেম্বর।
সংগঠনের জন্ম হয়েছিল দুইটি কারণে। আমরা, মানে আমি আর কয়েকজন, তখন গণিত অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞান উৎসব, টেলিস্কোপ বানানো এসব নানান বিষয় নিয়ে কাজ করছি। প্রথম আলোতে নিউরনে অনুরণন শুরু হয়েছে। আসিফের ডিসকাশন প্রজেক্টের উদ্যোগে একটা বিজ্ঞান উৎসবের প্ল্যান হল। তারপর অনুসন্ধিৎসু চক্রের সঙ্গে প্ল্যান হল একটা ভ্রাম্যমাণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর করার। মানে ভ্যানে করে নানান প্রজেক্ট নিয়ে যাওয়া হবে বিভিন্ন স্কুলে তারপর সেখানে সেই প্রজেক্টগুলো দেখানো হবে। উদ্দেশ্য হল বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করা।
নাম দেওয়ার সময় আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম উনিশ শতকের বিখ্যাত Society for the cultivation of Science, India থেকে। আমরা ঠিক চাষাবাদ করতে চাইনি। জনপ্রিয় করতে চেয়েছি। তাই নাম দিলাম Society for the Popularization of Science, Bangladesh (SPSB).
তারপর ২০০২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আমরা নারায়ণগঞ্জে একটি বিজ্ঞান উৎসব করি যেখানে প্রথমবারের মতো মাঠে গণিত অলিম্পিয়াড করেছি। মূল আয়োজন ছিল আসিফের ডিসকাশন প্রজেক্টের। সঙ্গে এসপিএসবি। তারপর আমরা একটা ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরও বানালাম অনুসন্ধিৎসু চক্রের সঙ্গে। নানান প্রজেক্ট আর আস্ত একটা কংকাল নিয়ে অনুসন্ধিৎসুর কর্মীরা দেশের নানান জায়গায় ঘুরে বেড়াতো। তারপর একদিন মুগদা পাড়ার জাদুঘরের স্টোর থেকে চোর বেটা সব চুরি করে নিয়ে যায়। সে সময় মাত্র দেড় হাজার টাকায় টেলিস্কোপ আর ৬০০ টাকায় মাইক্রোস্কোপ বানানোর একটা বুদ্ধি বের করে অপু। এরকম একটা টেলিস্কোপ নারায়ণগঞ্জের এক স্কুলে আর একটি মাইক্রোস্কোপ আমরা আহমেদ বাওয়ানি একাডেমীতে দিয়ে আসি!!! বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির আর একটি কার্যক্রম হলো জহুরুল হক – আবদুল্লাহ আল মুতী স্মারক বক্তৃতা। এখন পর্যন্ত ৫টি বক্তৃতা হয়েছে।
মাঝখানে দীর্ঘদিন এর কাজ কর্ম বন্ধ ছিল। কানাডা থেকে দেশে ফিরে বুয়েটের শিক্ষক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী এরপর এর হাল ধরে। শুরু হয় জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত কর্মশালা ও অন্যান্য আয়োজন। জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত আয়োজনের মধ্যে রয়েছে বক্তৃতা, কর্মশালা ও আকাশ দেখার আয়োজন।
আর ২০১২-এর মার্চ থেকে আবার আমরা নতুন করে কাজ শুরু করেছি। আগের কাজগুলো ছাড়াও এখনকার কাজগুলোতে যোগ হয়েছে-
১. বিজ্ঞানের প্রজেক্ট (এটি জাদুঘরের মতো) নিয়ে নানান জায়গায় যাওয়া। কোন স্কুল বা কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের বিজয় মেলায় প্রজেক্ট দেখানোর জন্য আমাদের দাওয়াত দিলে আমরা যেতে পারি।
২. সত্যেন বোস বিজ্ঞান ক্যাম্প : এটি বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষকদের জন্য ক্যাম্প।
৩. চিলড্রেন সায়েন্স কংগ্রেস : স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এই কংগ্রেস ২০১২ থেকে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই কংগ্রেসে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারে। এই পর্যন্ত ৩ বছরের কংগ্রেস হয়েছে।
৪. গুগল সায়েন্স ফেয়ারে অংশগ্রহণকারীদের সহায়তা প্রদান, ইত্যাদি।
আপনার মতে, আপনি কাকে উদ্যোক্তা বলেন আর কাকে ব্যবসায়ী?
সীমারেখা টানাটা এক অর্থে কঠিন। কারণ সকল বাণিজ্যিক উদ্যোক্তাই কিন্তু ব্যবসায়ী। তবে, “সাধারনভাবে আমি উদ্যোক্তা বলতে তাদেরকে বুঝি যারা কী না কোন একটা সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করে, রিস্ক নিতে ভালবাসে এবং একটা পজিটিভ ইম্প্যাক্ট রাখার জন্য কাজ করে।”
ব্যবসায়ীদের মধ্যেও কিন্তু শেষের দুইটা দিকও আছে। তবে, অনেক ব্যবসায়ী হয়তো প্রচলিত কোন ব্যবসা করতে থাকেন যার জন্য তার আলাদা উদ্যোক্তা স্কিলের দরকার নাও হতে পারে।
উদ্যোক্তাদের বড় একটি সমস্যায় পরতে হয় পার্টনার নির্বাচন করায়। এই বিষয়ে আপনার কোন পরামর্শ আছে?
আমি মনে করি পার্টনার নির্বাচনের কয়েকটা ধাপ মেনে নিলে এই সমস্যা হবে না। একটা কাজ হলো কিছুদিন পরস্পরকে সময় দেওয়া। সম্ভব হলে দূরে কোথাও একত্রে বেড়াতে যাওয়া। এটা টিমের সঙ্গেও হতে পারে। এছাড়া দরকার পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা। এটা খুব সহজে হয় না। এটা নিজের কালচারের অংশ হতে হয়। এ হলো অন্যের মতকে গুরুত্ব দেওয়া, অন্যকে সম্মান জানানো।
আপনি আপনার টিম মেম্বারদের আপনার সাথে দীর্ঘ সময় কাজ করার জন্য কিভাবে অনুপ্রানিত করেন?
আমি আলাদাভাবে কিছু করি না। সবার খোঁজ খবর নেই, বকাঝকা করি, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছে কী না সেটা খেয়াল রাখি।
কিভাবে আপনার টিম মেম্বারা আপনার ভিশনের সাথে এক হয়?
এটা মনে হয় তারাই ভাল বলতে পারবে। আর সবাই সম্ভবত আমার ভিশনের সঙ্গে একমত হয়ও না। হওয়ার দরকারও নাই। যে কাজটা আমরা সবাই মিলে করি, সেটি ওউন করা নিয়ে কথা।
আপনার সফলতার পেছনে কোন জিনিসটির অবদান সবচেয়ে বেশি?
নিজেকে আমি খুব একটা সফল ভাবি না। আল্লাহর রহমতে এতদূর আসতে পেরেছি।
আমি যে কোন কাজের পেছনে লেগে থাকতে পারি, কচ্ছপের মতো। আর আমি খুব সহজে ব্যর্থতাকে মেনে নেই। ফলে প্রতিবছর আমি অনেক কাজ করবো বলে ঠিক করেও করতে পারি না। সেটা নিয়ে কখনো মন খারাপ করি না।
উদ্যোক্তা হিসেবে, কোন মানুষটির চিন্তা-ভাবনা আপনার কাছে ভাল লাগে উদ্যোক্তা?
নুরুল কাদের খান এবং ইউছুফ চৌধুরী। নুরুল কাদের বাংলাদেশের রপ্তানীমুখী গার্মেন্টস শিল্পের উদ্যোক্তা। আর ইউছুফ চৌধুরী চট্টগ্রামের পূর্বকোণ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা।
প্রতিদিন আপনার কাছে এমন কি মনে হয়, যে আপনি সবার থেকে আলাদা?
তা কেন হবে। আমি আমার মতো, মোটেই আলাদা না।
আপনার প্রতিদিনকার কাজ সম্পাদন করার জন্য কোন ডিভাইসটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকেন এবং কেন? প্রতিদিনের টু-ডু লিস্ট তৈরি করার জন্য কোন সফটওয়্যার/পন্থাটি আপনার কাছে সেরা মনে হয়?
আমি পুরান দিনের লোক। এই কাজের জন্য আমি কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করি না। প্রতিদিন সকালে অফিসে এসে আমি আমার আজকের দিনের কাজের একটা তালিকা বানাই ডাইরিতে, হাতে লিখে । অনেক সময় নির্দিষ্ট দিনে আগে থেকে কোন এপয়ন্টমেন্ট থাকে। তার সঙ্গে দিনের তালিকা যুক্ত হয়। দিন শেষে আমি যখন ফিরে যাই বাড়িতে তখন একবার রিভিউ করি। যদি কোনটা বাকী থাকে তাহলে সেটা পরের কোন দিনের তালিকায় পাঠিয়ে দেই। আর মাঝে মধ্যে কয়েকটা কাজের দিকে তাকিয়ে দেখি ওইগুলো ছাড়া আমার দিন চলে কি না। ডিভাইস হিসাবে মোবাইল আর পিসির ব্যবহারই বেশি।
একজন বাংলাদেশি হিসেবে যানজট আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। আপনি যানজটের সময়টাকে সদ্ব্যবহার করার জন্য কি করেন?
আমি হেঁটে বা রিকশা করে অফিসে আসি এবং তাতে আমাকে খুব একটা যানজটে পড়তে হয় না। সন্ধ্যায় আমি হেঁটে বাসায় যাই। তবে, যানজটে পড়লে সেই সময়টা কাজে লাগাতে একটা কিছু করতেই হবে এমনটা আমি ভাবি না। সব সময় কাজ করতে হবে এমন চিন্তা আমার নাই। অনেক সময় আমি যানজট উপভোগ করি। আমি রাত দশটার পর ফোন ধরিনা। আমার মোবাইলে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট নাই। জরুরী দরকার হলে আমি ২ টাকা বা ১৫ টাকার ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে নেই। ট্রেনে বা প্লেনে বই সঙ্গে রাখি। আর ফোনে কথা বলার দরকার হলে সেটা করি। জোর করে কিছু করি না।
(এখন অফিসের গাড়িতে আসা যাওয়া করি।)
আপনার কাজের স্থানটি কেমন?
বাসারটা গুছিয়ে রাখতে হয় কারণ আমি আর আমার ছেলে-মেয়ে একই চেয়ার টেবিল শেয়ার করি। অফিসেরটা যতোটা অগোছালো রাখা সম্ভব ততোটাই থাকে।
আপনার দৈনিক ঘুমানোর সময়সূচি কেমন ?
বাচ্চাদের স্কুল খোলা থাকলে আমাদের বাসার সবাই রাত সাড়ে দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। ফজরের নামজের সময় একবার উঠতে হয়। তারপর আবার একটু গড়িয়ে নেই। সকাল ৬টার সময় উঠে বাচ্চাদের স্কুলের জন্য তৈরি করতে হয়।
একজন উদ্যোক্তার কোন তিনটি বই বা সিনেমা অবশ্যই পড়া বা দেখা উচিৎ ?
একেক সময় একেটাকে মনে হয়। আমার পছন্দের তিনটা বই হল –
বাংলাদেশের কিছু সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে বলুন যাদের সফলতার গল্প আপনার কাছে উল্লেখযোগ্য মনে হয়?
আমি অনেককেই সম্ভাবনাময় দেখি। আমার বাসার পাশের গলিতে সুমন নামের যে স্কুল শেষ না করা তরুণটি দোকান শুরু করেছে সেও সম্ভাবনাময়। আলাদা করে কারো নাম সেভাবে করতে চাই না। কারণ তালিকাটা অনেক দীর্ঘ।
আমার স্থির বিশ্বাস, আজ থেকে ১৫-২০ বছর পরে বাংলাদেশের বিজ্ঞান, গণিত এবং উদ্যোগে যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে তাদের সবার সঙ্গে কোন না কোনভাবে আমার যোগ ছিল বলে আমার উত্তরসূরীরা বলতে পারবে। আমি তখন হয়তো থাকবো না।
যারা ভবিষ্যতের উদ্যোক্তা হতে যাচ্ছে তাদেরকে আরও উৎসাহিত করতে আপনার উপদেশ কি হবে?
আইডিয়া না খুঁজে সমস্যা খুঁজতে বলি। তোমার চারপাশের কোন সমস্যা খুঁজে পেলে সেটার সমাধান করতে লেগে যাও। প্রচুর পড়, পড় এবং পড়।
[আমার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন টুইটার, লিংকডইন, ইউটিউব বা ফেসবুকে]