বিশ্বমানব হবি যদি কায়মনে বাঙ্গালি হও
আজ সকালে প্রথম আলোতে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যারের “২০১৭ সাল হোক বাঙালির বিশ্বমানব হওয়ার বছর” লেখাটা পড়েছি। স্যারের আশাবাদ ২০১৭ সালে বাঙ্গালি বিশ্বমানব হয়ে উঠবে। বিশ্বমানবের সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একেক রকম। সেজন্য হয়তো এটা নিয়ে বিতর্ক হতেও পারে। তবে আজকাল আমরা একাডেমিক বিতর্ক করি না। আমি স্যারের লেখাটা দেখছি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে।
প্রথমত বিশ্বমানব হওয়ার পথটাও ইদানীং সহজ। কারণ ইন্টারনেট। ইন্টারনেট এমন একটা প্রযুক্তি যা আমাদের জলিলগঞ্জের রাখীকে ইন্দোনেশিয়ার তিলতিলাতির সম-মর্যাদায় পৌঁছে দেয়। ফলে, সমান সমান লড়াই-এর একটা ক্ষেত্রও তৈরি হয়।
আমার আশাবাদটা সেখানে। আশাহত হওয়াটাও ওখানে। কারণ তিলতিলাতির সঙ্গে লড়াই-এর জন্য রাখীর অনেক শর দরকার। এর মধ্যে সবচেয়ে জরুরীটা হলো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। দু:খের বিষয় হলো এবছরেও আমরা রাখীর জন্য কোন ভালমানের ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করতে পারলাম না। পারলাম না তাকে পিইসি বা জেএসসি নামক এ গ্রহের সবচয়ে অদ্ভুত পাবলিক পরীক্ষা থেকে নিস্কৃতি দিতে। ফলে, লড়াই-এ রাখীর হাতিয়ার হয়ে যাচ্ছে তার নিজের নিষ্ঠা আর একাগ্রতা। তাঁকে অনেকগুলো কাজ করতে হচ্ছে কষ্ট করে যা কিনা সে করতে পারতো সহজে। ঐ যে বলছি ইন্টারনেটের কথা সেটা যদি ঠিক থাকতো তাহলে জলিলগঞ্জের রাখী বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লেকচার শুনতে পারতো, অংশ নিতে পারতো বৈশ্বিক ফোরামগুলোতে। সেই সুযোগতো সে পাচ্ছে না। আবার দেশেও তার জন্য বাংলা ভাষাতে বিশ্বমানের কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে না। সবাই ভাবছে একটা কিছু ভিডিও করে ইন্টারনেটে দিলেই বুঝি সেটা বিশ্বমানের হয়ে যায়। কিংবা একটা ভিডিও যদি ১০০ জন দেখে তাহরেই সেটা ভাল। ভাবনার জায়গাটা সেখানে।
রাখীদের যদি তৈরি করতে না পারি তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে পৌঁছাবো?
একটা হিসাব আমরা পাচ্ছি দেশের অর্থনীতিতে বিদেশের অংশগ্রহণের হিসাবে। ২০১৬ সালে নাকি প্রায় চার হাজার কোটি টাকা বিদেশী কর্মীরা বাংলাদেশ থেকে নিয়ে গেছে!!! বটে, যে দেশে প্রতি কিলোমিটারে হাজার লোকের বাস সেখানে বিদেশীরা এসে কাজ করে টাকা নিয়ে যাচ্ছে আর আমাদের ৪৭% শিক্ষিতের কোন কাজ হচ্ছে না। না, হিসাবটা মানুষের না। হিসাবটা দক্ষতার। কাজে দক্ষতার। ঘাটতিটা মানুসের নয়, ঘাটতিটা দক্ষতার। তাহলে সেখানেই আমাদের নজর দিতে হবে তবে সেটা এলোমেলোভাবে নয়, ঠিকভাবে।
এই যে বলছি, দক্ষতার ঘাটতি সেটা কিন্তু আমাদের তরুনরাই পূরণ করতে পারে। তাঁরা তাদের মেধার প্রমাণ দিয়ে চলেছে। ২০১৬ সালের গণিত অলিম্পিয়াডের বিশ্ব আসরে ১০৪টি দেশের মধ্যে আমাদের খুদেদের অবস্থান ছিল ৩৪ তম। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বারত মাত্র ১ নম্বর বেশি নিয়ে আমাদের উপরে ছিল। জুনিয়ার সায়েন্স অলিম্পিয়াডে দ্বিতিয়বারের অংশগ্রহণে আমাদের অর্জন তিনটা রৌপ্য ও তিনটা ব্রোঞ্জ। ৪৮টা দেশের কয়েকশতাধিক ছেলে-মেয়ের মধ্যে আমাদের তাহমিদ মোসাদ্দেকের অবস্থান ৪০তম! সেই ১৯৯৮ সাল থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর বিশ্ব লড়াই-এ আমরা ভারতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরেই থাকি। আমাদের তারুন্য ভূবনজয়ী, লড়ছে নানান কিছুর বিরুদ্ধে, যোগ করছে সভ্যতায়।
কিন্তু সে হেরে যাচ্ছে নিজের দেশে। তাঁকে দেখানো হচ্ছে ভুর পত, হাতে তুলে দেওযা হচ্ছে ইয়াবা, মাদক কিংবা অস্ত্র। আর এসব থেকে পরিত্রাণের নতুন পত খুঁজছে সে বিশ্বমানবে। তবে, বিশ্বমানব হতে গিয়ে তার লক্ষ্য হয়ে যাচ্ছে দেশ থেকে ৭৬ হাজার কোটি টাকা পাচার করে দেওয়া। কারণ সে দেখছে তাতে কোন বিচার হচ্ছে না।
কাজে, বাঙ্গালি হওয়ার ব্যাপারটা মুখ্য থাকুক। বিশ্বমানব সে পরে হোক। অথবা বিশ্বমানব হওয়ার জন্য সে কায়মনে বাঙ্গালি হোক।
অনুকরণ খোলস ভেদি
কায়মনে বাঙ্গালী হ’
ষোলআনা বাঙ্গালী হ’।
বিশ্ব-মানব হবি যদি
শাশ্বত বাঙ্গালী হ’।
– গুরুসদয় দত্ত (১৮৮২—১৯৪১)।
২০১৭ সালে সবার জীবনের সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।