উদ্যোক্তা গ্রুপের পাঁচ বছর
গণিত অলিম্পিয়াড শুরু করার পর থেকে আমাদের একটা চিন্তা থাকতো প্রতিবছর এ আয়োজনে নতুন কিছু যোগ করার। শুরুতে আমরা ব্যবস্থা করলাম বছরওয়ারী থিমের। একবছর ছিল জাতীয় পতাকা – আমাদের পতাকা, আমাদের মান। সেবার আমরা জাতীয় পতাকার রং, মাপ, পতাকা স্ট্যান্ডের সামনে কীভাবে দাড়াতে হয় এসব বলেছি, এই নিয়ে প্রশ্ন করেছি। আর এক বছর ছিল –ধান : হেই সামালো ধান হো, কাস্তে তে দাও ধান হো। সেবার আমরা বললাম আমাদের হাজার বছরের, হাজার প্রজাতির ধান নিয়ে। কীভাবে খাসালত নামের ধানটির কতৃত্ব আমাদের হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছিল, কীভাবে আবেদ স্যার সেই লড়াই করেছেন। কীভাবে তেভাগা আন্দোলনের সময় আমাদের ধানের ঐতিহ্য আমাদের প্রাণের ঐতিহ্যে পরিণত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বললাম আমাদের এমন ধান চাই যা বন্যা কিংবা খরা প্রতিরোধী। সেবার আমরা যশোর উৎসবে নিয়ে আমলাম আমাদের কৃষক বিজ্ঞানী হরিপদ কাপালীকে।
২০১১ সালে আমরা ঠিক করলাম আমাদের ছেলে-মেয়েদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা সাংবাদিকের পাশাপাশি অন্য কিছু করার কথাও বলা হোক। শুধু চাকরি না করে চাকরি দিক। কাজে আমাদের সেবারের থিম হলো উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা। সারা দেশের আঞ্চলিক ভ্যেনুগুলোতে আমরা সেই অঞ্চলের একজন নিভৃতচারী সফল উদ্যোক্তাকে হাজির করলাম – রাজশাহীতে আসলেন আরাফাত, যশোরে তনুজা, গোপালগঞ্জে যিনি আসলেন তাঁর নামটা আমার মনে নাই কিন্তু তাঁর দোকানের “ক্যাটরিনা কাইফ” রসগোল্লার কথা মনে আছে। ঢাকার জাতীয় উৎসবে আসলেন এনভয় গ্রুপের কুতুবউদ্দিন আহমেদ আর বাংলাদেশ ওম্যান চেম্বারের প্রতিষ্ঠাতা সেলিমা আহমাদ। সব জায়গায় আমরা বাচ্চাদের মধ্যে নানান পেশার বাইরে চাকরি দেওয়ার কথাও বললাম।
উৎসব শেষে কথা প্রসঙ্গে একদিন প্রথম আলোর “স্বপ্ন নিয়ে” পাতার তখনকার সম্পাদক ফিরোজ জামান চৌধুরী বললেন উদ্যোক্তা নিয়ে যা বিভিন্ন জায়গায় বলেছি সেটার একটা সামারি তার পাতায় লিখে দিতে। লিখলামও। সেটা ছাপা হলো স্বপ্ন নিয়ে-তে “চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব” এই শিরোনামে, মনে হয় ৭-৮ এপ্রিল হবে।শিরোনামটা্মনে হয় তারই দেওয়া।
সেই লেখা ছাপা হওয়ার পর কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হলো যে আমরা উদ্যোক্তা উন্নয়নের কোন কাজ করতে পারি কিনা। ভাবলাম তাহলে যাচাই করে দেখা যাক। যাচাই করার উছিলাতে ১৩ এপ্রিল, ২০১১ রাতের দিকে ফেসবুকে একটা গ্রুপ তৈরি করলাম। ওমর শেহাব, মাহমুদুল হাসান – এই দুইজনকে যোগ করা হল সদস্য হিসাবে। তারপর কয়েকজনকে যোগ দেওয়ার কথা বলে ঘুমাতে গেলাম।কযেকদিন পরে দেখলাম কয়েকজন যুক্ত হয়েছে এবং আলাপ আলোচনাও হচ্ছে। আমার ঐ লেখাটিই গৃহীত হলো গ্রুপের ইশতেহার হিসাবে। সেই সঙ্গে ট্যাগ লাইন – পথে নামলেই পথ চেনা যায়।
কিছুদিনের মধ্যে হাজার খানেক সদস্য হলো এবং সবাই মোটামুটি এটাকে আর ১০টা গ্রুপের মতো মনের মাধুরী মেশানো সব কিছু বলতে শুরু করলেন। তখন আমরা গ্রুপটাকে মডারেটেড করলাম এবং তৈরি করলাম এর নীতিমালা।
এক বছর পরে আমরা ফেসবুক থেকে বের হলাম। শুর হলো আমাদের অফলাইন কার্যক্রম।
তারপর দেখতে দেখতে ৫ বছর কেটে গেল। শুরুর দিকে অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাষা করতো – অন্যরা উদ্যোক্তা হলে তোমার লাভ কী?
আমি হেসে বলতাম – ১০০০ উদ্যোক্তা বানাবো। ওরা মাসে আমাকে ১০০ টাকা করে দিবে। এটাই আমরা লাভ!
বেশিরভাগই হাসতেন। বলতেন – বাংলাদেশে ব্যবসায়ী বানানো সহজ না। তুমি পারবা না।
আমি বলতাম- আমি তো বানাবো না। আমরা খুঁজব কারো মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার আগুনটা আছে কীনা। থাকলে সেটাকে উসকে দেবো। বাকীটা তারাই দেখবে।আমার টাকা-কড়ি নেই। টাকা-কড়ি দিতে না পারি ভালবাসা-পরামর্শ আর ঝাড়ি দিতে পারবো।
আজ পাঁচ বছর পরে, পিছন ফিরে তাকলে দেখি আমাদের তরুনদের এক বড় অংশই একটা কিছু করতে চায় নিজে নিজে। তাদের পাশে দাড়ালেই তারা অনেক কিছু করে ফেলে।
আমরা কৃতজ্ঞ এই গ্রুপের সকল এডমিন, যারা সবাই প্রায় প্রচন্ড ব্যস্থতা স্বত্ত্বেও আমাদের গ্রুপটাকে সচল রেখেছেন, তাদের কাছে। এক প্রেমিক তরুন সকল আয়োজনের ঝামেলা নিজের কান্ধে নিয়ে কাজটাকে এগিয়ে দিয়েছে, তার প্রতি।
অনেকেই এই গ্রুপের মাধ্যমে নিজের উদ্যোক্তা জীবন শুরু করে এখন আমাদের আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করে। তাদের অভিনন্দন। অনেকেই প্রতিদিন ভাবেন নেমে পড়ার। তাদের জন্য শুভ কামনা।
আর আমাদের ৫৩ হাজার সদস্যকে জানাই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা।
সবার সেকন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।
One Reply to “উদ্যোক্তা গ্রুপের পাঁচ বছর”