শুভ জন্মদিন আনিস ভাই
১৯৮৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আমি আমাদের গ্রাম থেকে ঢাকায় আসি। উদ্দেশ্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় নামের বাঁশবাগানের আতিথিয়তা গ্রহণ, পরবর্তী চার বছরের জন্য। স্কুল এবং কলেজে থাকতেই আমার রক্তে মিছিলের ডাক। এরশাদ বিরোধী যে মিছিলে চট্টগ্রামে শহীদ হন মোজাম্মেল সে মিছিলটি যখন মেডিকেল থেকে এসে চট্টগ্রাম কলেজ হয়ে আগাতে থাকে তখন আমরা সেই মিছিলে যোগ দেই। গণি বেকারির মোড়ে এসে প্রথম পুলিশের লাঠিচার্জ। দুই বাড়ি খেয়ে বাম দিকের কালভার্ট দিয়ে নেমে বড় নালা দিয়ে দৌড় দিয়েছিলাম। তারপর একটা পেরেক বসানো দেওয়াল পাড়ি দিয়ে বসায় পৌছে যাই। বন্ধুরা খেয়াল করে আমার পা থেকে রক্ত পড়ছে। কাজে আন্দরকিল্লার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গিযে এটিএস ইনজেকশন দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বিকেলের দিকে আবার বের হয়ে জানতে পারি মহীদ মিনার এলাকায় পুলিশের তান্ডব!
এরকম একজন “বীরপুঙ্গব” বুয়েটে এসে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হবে না এটা কী হয় নাকি। সম্ভবত এ কারণে মোজাম্মেল বাবু ভাই (এখন একাত্তর টিভির এমডি) একদিন পাকড়াও করলেন। তার সঙ্গে আমি প্রথম আনিস ভাইকে দেখি। আনিস ভাই আমাদের আগের ব্যাচের, বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থীদের একজন। বোর্ড স্ট্যান্ড কিন্তু বুয়েটের টিচার হওয়ার কোন পরিকল্পনা নাই! কবিতা লেখেন এবং মিছিলে শ্লোগান দেন। সেই থেকে আনিস ভাইকে আমি চিনি।
এরপর তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ “খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে” প্রকাশিত হয়। বুয়েট শহীদ মিনারে আয়োজন করা হয় কবিতা পাঠের আসর। আমার দায়িত্ব ছিল কেতলিতে করে হাতে কাপ নিয়ে কবিদের চা খাওয়নো। পরের ইউকসু নির্বাচনে আনিস ভাই দাড়ালেন কেন্দ্রীয় বার্ষিকী সম্পাদক পদে, আমি আহসান উল্লাহ হলের। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্যানেল। আনিস ভাই কেন্দ্রে জিতলেন আর আমি হলে।
তারপর আনিস ভাই পাস করে বের হলেন। না তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং করেন না। করেন লেখালেখি। সাতদিনের পূর্বাভাস পত্রিকায় টেকনোলজি নিয়ে সপ্তাহে এক পাতা লিখে দেওয়ার জন্য আমাকে ধরে নিযে গেলেন, ভোরের কাগজে বের করলেন “মেলা”। তাতে একদিন আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন একপাতা স্টিফেন হকিং-কে নিয়ে করার জন্য। আমার প্রথম বই “মিথ্যার মুখোমুখি প্রতিদিনের” প্রায় সব লেখাই ছাপা হয়েছে “মেলা”তে।
এখন যে সব পত্রিকায় বইমেলা প্রতিদিন ছাপা হয় শেষ পাতায় সেটাও শুরু করেছিলেন আনিস ভাই। বছর আমার মনে নেই। ততোদিনে আমি বুয়েটে চাকরি করি। একমাসের আধাবেলা ছুটি নিয়েছি, মেলার স্টলে বসবো বলে। বিজ্ঞান সংস্কৃতি পরিষদের স্টল। মাত্র দুইটা বই বিক্রি করি। কিন্তু আড্ডা দেই প্রায় সময়। হাটতে হাটতে আনিস ভাই আসলেন একদিন।
“কী মুনির কী করো?”
“একটা বিজ্ঞান সংস্কৃতির স্বপ্ন ফেরি করি।”
তো এভাবে আমাদের সখ্যতা বাড়ে।
আনিস ভাই আমার লেখালেখির ব্যাপারটাকে সর্বোচ্চ উসকে দিয়েছেন, প্ল্যাটফরম দিয়েছেন। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
আর আনিস ভাই-এর কারণে আমার সখ্যতা হয়েছে মেরিনা আপার সঙ্গে। ঢাকা শহরে যে দুইজন আপা আমাকে তুই বলে তাদের একজন। আর যখনই আমার লাইক ব্যবসাতে ভাটা পড়ে তখনই আমি মেরিনা আপার সঙ্গে ছবি তুলি!
আজ এতক্ষণ ঘাটাঘাটি করে দেখলাম আনিস ভাই-এর সঙ্গে কোন ছবি আমার সংগ্রহে নাই। (এটা একটা কথা! আমরা গর্দান যাওয়া উচিৎ। আমার চ্যালা-চামুণ্ডারা দ্রুত আমার গর্দান বাঁচাও)।
আজ আনিস ভাই-এর জন্মদিন।
গেল বছর পেটপুড়ে খাওয়ার একটা ব্যবস্থা করেছিলেন। এবার সেটা করেন নাই। আশাকরি সামনে করবেন।
ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
আল্লাহ আপনাকে দীর্ধ জীবন দান করুন।
শুভ জন্মদিন, আনিসুল হক।