শুভ জন্মদিন ফেসবুক

Spread the love

ফেসবুক কী জিনিষ সেটা এখন আর কাউকে নতুন করে বোঝানো লাগে না। বিশেষ করে যাদের ইন্টারনেট সংযোগ আছে বা নাই। পৃথিবীর মানুষ কী কখনো ভেবেছে এমন একটা প্রোডাক্ট তৈরি হবে যা কিনা পৃথিবীর প্রতি তিনজন মানুষের একজনের থাকবে, ইউজার জেনারেটেড কনটেন্টের একটি নতুন মাত্রা তৈরি করবে এবং গড়ে উঠবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রচার মাধ্যম যার কোন কন্টেন্ট মালিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে না!!!
এসবই সম্ভব হয়েছে ফেসবুক নামে বিশ্বের এক “নতুন আশ্চর্য” নিয়ে। সম্ভবত আর কোন ইন্টারনেট এপ্লিকেশন এত ঘর ভাঙতে পারে নাই, যা পেরেছে ফেসবুক।

হাবার্ট-এর ডরমিটরিতে শুরু হওয়া এ কোম্পানি হলো বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতবিকাশমান কোম্পানিগুলোর একটি, অন্যতম জনপ্রিয় ওয়েবসাইট! এই মুহুর্তে (৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩.৩০মিনিটে) এর বাজার মূলধন হল ৫৫৩ বিলিয়ন ডলার! গতকাল এর শেয়ারের দাম ছিল মাত্র ১৯০.২৮ ডলার। ফেসবুক যেদিন পাবলিক কোম্পানি হয় সেদিনই কয়েকডজন বিলিওনিয়ারের জন্ম দেয়।

ফেসবুক ব্যবহার করতে কোন টাকা পয়সা লাগে না। কিন্তু তারপর তারা এত বড়সড় হয়েছে কেমনে?

শেরিল স্যান্ডবার্গ

এর আয়ের উৎস বিজ্ঞাপন। কনজিউমার এডভার্টাইজিংকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে এই কোম্পানি। আগে কোন রাজনৈতিকনেতা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিরে লোকে হাসতো। এখন কমবেশি সবাই বুষ্ট করে। মিনি-মাগনা থেকে হাজার হাজার টাকা দিয়ে একই মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়ার বুদ্ধি কতোভাবে প্রয়োগ করা যায় সেটা ফেসবুককে না দেখলে শেখা মুশ্কিল।
এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের সম্পত্তির হিসাব বরং আমরা না নেই। ওখানে চকরি করেন একসময়ের বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী মহিলা বিলিওনিয়ার, শেরিল স্যান্ডবার্গ। ফেসবুকের প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা। তার সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ১,৬৫ বিলিয়ন ডলার (আজকের হিসাব)।

প্রশ্ন হচ্ছে ফেসবুক কী রাতারাতি ফেসবুক হয়েছে?

২০০৬ সালে ফেসবুক সবার জন্য উন্মুক্ত হয়। আমি আমার একাউন্ট তৈরি করি মনে হয় ২০০৭ সালে। পেশাগত এবং নেশাগত কারণে ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে আমার কিছুটা আগ্রহ আছে। এ জন্য এ সময়ের তিনটি বড়ো কোম্পানি সম্পর্কে যখনই সুযোগ পাই তখনই পড়ার চেষ্টা করি।
বিল গেটসের বক্তৃতা, খোলা চিঠি এবং দি রোড এহেড আমাকে অনেক খানি আপ্লুত করেছে। কোথাও সুযোগ পেলে আমি আইবিএমের সঙ্গে বিলের চুক্তির গল্পটি উল্লেখ করতে ভুলি না। যেমনটি আমি প্রায়শ বলি সিলিকন ভ্যালিতে গড়ে আড়াই হাজার চেষ্টার পর একটি গুগল তৈরি হয়। ভাল করে আমরা যদি দেখি তাহলে কয়েকটি ঘটনা আমরা লক্ষ করতে পারি।
গেল শতকের ষাটের দশকে যখন কম্পিউটারের বিকাশ শুরু হয় তখন এটির কেন্দ্র ছিল হার্ডওয়্যারকে ঘিরে। কাজে সে সময়ের সবচেয়ে বড়ো কোম্পানির নাম আইবিএম। ওদের মনোপলি ঠেকাতে আমেরিকার আইন বিভাগ আইবিএমকে কিছু একটা ছাড়তে বলেছিল। আইবিএম সে সময়ের সবচেয়ে অনুল্লেখ্য অংশ অপারেটিং সিস্টেমটি ছেড়ে দেয় বিল গেটসের হাতে। পিসি প্রতি ১ ডলারে শুরু হয় মাইক্রোসফটের যাত্রা। আশির দশক শেষ হতে না হতে বোঝা গেল কম্পিউটারের সবকিছু আাবর্তিত হবে সফট্ওয়্যারকে ঘিরে। কাজে বিশ্বের সবচেয়ে দ্বিতীয় ধনী লোকটির ফোর্ডের মতো কোন গাড়ি বা আইবিএমের মতো কোন ফ্যাক্টরি নাই। আছে হলো হাজার হাজার মানুষের জ্ঞানের ব্যবহারে গড়ে ওঠা পরিবার। তারা এমন জিনিষ বানায় যেটা ধরা যায় না।
ইন্টারনেট আর ওয়েব নিয়ে এল নতুন স্রোত। সে সময় অনেকে বলতেন এক সময় সবার একটি হোম পেজ থাকবে। কিন্তু কীভাবে থাকবে তা বোঝা যায় নি। যতো মানুষ ইন্টারনেটে ঝুকতে শুরু করলো, ততো দেখা গেল খোঁজা খুঁজির মাত্রা বাড়ছে। কাজে হাজির হলো গুগল। (১ এর পর ১০০টি শূন্য বসালে যে সংখ্যাটি পাওয়া যায় সেটির নাম গুগল)।
গুগলের ব্যবসা কীভাবে হয়? দীর্ঘদিন আমি এটা ভাবতাম। পরে বুঝলাম ব্যবসার ব্যাপারটাই গুগলে নাই! কী আছে??? সেবা। মানে গুগল আবর্তিত হয় সেবাকে কেন্দ্র করে। গুগল সেবা দিতে চেয়েছে আর ব্যবসা তার পিছু পিছু হাজির হয়েছে। গুগলের নানান বিষয় বোঁঝার জন্য এখন অনেক বই পত্র পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালটি সম্ভবত জার্ভিসের হোয়াট উড গুগোল ডু?
হার্ড্ওয়্যার, সফটওয়্যার, সেবা – তারপর কী??


মানুষ।

”হার্ড্ওয়্যার, সফট্ওয়্যার, হিউমানওয়্যার
তিন মিললে হয় বিজয়,
মানুষই আসল তবু,
নইলে পুরো অপচয়।”

তা সে মানুষকে কেন্দ্র করে কী কিছু হবে না?
একুশ শতকে তাই মূখ্য হয়ে ওঠার কথা মানুষেরই। আমাজন ডট কমে আমরা তার একটা নমুনা দেখে ফেলেছি। আমাজন কেন সফল? কারণ আমাজনের কোন সেলসপারসন নাই!!! আমরা সবাই তার সেলসপারসন। মুক্ত দর্শনের এক বিরাট সাফল্য হলো আমাজন। সকল ক্রেতাই তার বিক্রেতা!
তবে, আমাজনের কথা কী জাকারবার্গের মনে ছিল?? না, জাকারবার্গ আসলে আমাজন ডট কম নিয়ে ভাবেনই নাই। ওর চেষ্টা ছিল এমন একটা কিছু করা যা সামাজিক সম্পর্কগুলোকে জোরদার করবে। ফেসবুকের আগেও এমন সাইট ছিল। তবে, সেগুলো বেশিরভাগই ডেটিং সাইট।
জাকারবার্গ এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়তে চেয়েছেন যা কী না জনগণকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে রাখবে, প্রত্যেক মানুষ, তার সঙ্গে অন্য মানুষের সম্পর্ক, সেগুলোর বিকাশই হবে মুখ্য।

কাজে আবির্ভূত হলো ফেসবুক। যা বিক্রি করে আমাকে, আপনাকে, আমার আপনার সম্পর্ককে। এতো সুন্দরভাবে বিক্রি করে যে, এই বিক্রি হওয়ার জন্য আমরা লাইন দেই, আন্দোলন করি এবং শেষ পর্যন্ত সরকারকে বাধ্য করি ফেসবুক খুলে দিতে।

একুশ শতকের এই আচানক নতুন কাহিনীর জন্মদাতা ফেসবুকের আজ আনুষ্ঠানিক জন্মদিন।

মার্ক জাকারবার্গসহ ফেসবুকের জন্য জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
 

 

Leave a Reply