গ্রামারলি -১ : জিরো টু ওয়ান

Spread the love

শরবত বাজিমাতের পরে আমি একটা নতুন উদাহরণ নিয়ে কাজ করবো ভেবেছি। এমন কিছু যেখানে থিউরির প্রয়োগ দেখা যাবে। অর্থাৎ অনেক পুরানো কোন চিন্তা নয়। বিশেষ করে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর ফায়দা নিয়েছে এমন কোন উদ্যোগ যদি হয় তাহলে সেটা হাল আমলেরই হবে। আমার দেখার বিষয হচ্ছে শরবতে বাজিমাত, গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং এবং ইমোশনাল মার্কেটিং-এ যেসব তত্ত্বকথা আমি আলাপ করেছি সেগুলো একত্রে কোথায় পরিণতি পেয়েছে।

খুজতে গিয়ে পেয়েছি। এটি হলো গ্রামারলি । এটি একটি উন্নত বানান পরীক্ষক। তবে শুধু বানান পরীক্ষা করে না, গ্রামার, কনটেক্সট সবই সে দেখে। অনেকেই নিশ্চয়ই এই গ্রামার কারেকশন করা সফটওয়্যারটির নাম শুনেছেন।  অনেকেই নিশ্চয়ই ব্যবহারও করেছেন। ২০১৭ সালে ওদের ভ্যালুয়েশন হয় ১.৩ বিলিয়ন ডলার।  ২০১৯ এর অক্টোবরে ওরা দ্বিতীয় দফার ৯০ মিলিয়ন ডলার ফান্ডিং পেয়েছে আবারও ইউনিকর্ন হিসাবে। অথচ ওরা একেবারে শূণ্যহাতে শুরু করেছে।

২০০২ সালে ইউক্রেনের দুই লোক আলেক্স শেভেঙ্কো এবং ম্যাক্স লিটভিন নিজেরা একটা কিছু করার চিন্তা করে। তারপর তারা বের করে একটা সফটওয়্যার যা কিনা লেখালেখির চৌর্যবৃত্তি ধরতে পারে। এটার নাম দেয় তারা মাইড্রপবক্স (ড্রপবক্সের সঙ্গে এটার সম্পর্ক নাই)। তারপর তারা এটা বিক্রি করতে বের হয়।একদিনও কিন্তু ফ্রি দেয় নাই। শুরুতে ওরা টার্গেট করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। প্রথমে ইউক্রেন এবং পরে ইউরোপ, আমেরিকা ও অন্যান্য।  কারণ থিসিস/প্রজেক্ট চুরি করা কিনা সেটা বের করা দরকার হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৮ সাল নাগাদ ওরা ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের কাস্টোমার বানিয়ে ফেলে। তারপর তারা এই প্রোডাক্ট বেচে দেয়।
২০০৮ সালে তারা নতুন কিছু করার কথা ভাবে এবং তৈরি করে গ্রামারলি (আরও দুইটা নাম ছিল) নামে একটি বানান চেক করার প্রোগ্রাম। ২০০৯ সালে তারা গ্রামারলিকে নিবন্ধন করে আমেরিকায় যদিও হেড কোয়ার্টার থাকে কিয়েভে। এখন আরও কিছু শহরে তাদের অফিস আছে। স্পেল চেকার একটা পুরানো টুলস, প্রায় সব জায়গাতে ফ্রি পাওয়া যায় এমন একটা টুলস ওরা বিক্রি করে!!! ওদের কর্মী হলো ২০০।

এটা ওরা শুরুতে ইউনিভার্সিটিগুলোতে দিতে শুরু করে। সেখান থেকে ফীডব্যাক নিয়ে তারা এটিকে আরও সমৃদ্ধ করে। শুরুতে এটি ছিল WYSIWYG এডিটর। মানে আপনি আপনার লেখা এখানে কাট-পেস্ট করলে সে আপনাকে সাজেশন দিবে, বানান ঠিক করে দেবে। ২০১০ সালে লক্ষ ব্যবহারকারী ও ২৫০+ ভার্সিটি হয় গ্রামারলির পেইড ভার্সন হিসাবে।

২০১২ সালে ওদের রেভেনিউ হয় মাত্র ১০ মিলিয়ন ডলার।

২০১৩ সালে ওরা ওদের এপ্রোচ চেঞ্জ করে। পৃথিবীর যেখানেই লেখা হবে সেখানেই ওরা গ্রামারলিকে নেওয়ার কথা ভাবে। কাজে তৈরি করে প্লাগইন। শুরুতে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ও আউটলুকের সঙ্গে এটিকে কাজ করানো হয়। তবে এটি শুধু একটি স্পেলচেকার না, বরং একই সঙ্গে কনটেক্সচুয়াল ও স্টাইলও দেখে।
২০১৫ সালে গুগল ক্রোম ও সাফারির জন্য ফ্রি প্লাগইন ওরা ছাড়ে যার একটি ফ্রিমিয়াম ভার্সনও তৈরি করা হয়। ২০১৬ সালে একই কাজ করা হয় ফায়ারফক্সের জন্য। ২০১৭ সালে শুধু ক্রোমের জন্য তাদের ব্যবহরকারী ছিল ৮ মিলিয়ন।

সবশেষে ২০১৭ সালে তারা ১১০ মিলিয়ন বিনিয়োগ নিয়েছে ১.৩ বিলিয়ন ডলার ভ্যালুয়েশনে। ২০১৮ সালে গুগল ডকের এক্সটেনশন তৈরি করা হয়। আর ২০১৯ সালের অক্টোবরে আবার ৯০ মিলিয়ন ডলার তুলেছে।

মাত্র এক পাতায় বলে দেওয়া গ্রামারলির গল্পটা কেমন? কেমন করে একটা বানান পরীক্ষকের কোম্পানি ইউনিকর্ন হয়ে ওঠে। কী তাদের বৈশিষ্ট্য? সেগুলো খোঁজার জন্যই এই নতুন সিরিজ শুরু করলাম আজকে।

দেখা যাক কতদূর কী করা যায়!!!

 

Leave a Reply