গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-৪: কাজের জিনিষ কেমনে বানাই?
আগের পর্ব- গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-৩: কাজের জিনিষ কোথায় পাই?
আগের পর্বে আমরা দেখেছি গ্রোথ হ্যাকার মার্কেটিয়াররা সম্পূর্ণ প্রোডাক্ট তৈরি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে না। তারা শুরু থেকেই প্রোডাক্টের গুনাগুন যাচাই-বাছাই-এর জন্য মার্কেট থেকে ফিডব্যাক নিতে থাকে এবং সেটি প্রোডাক্ট টিমকে জানায়।
প্রশ্ন হচ্ছে এই কাজটি কেমন করে করা যায়। রায়ান তার বই-এ একটি উদাহরণ দিয়েছেন বই নিয়ে।
রায়ান অনেকগুলো বেস্টসেলার বই-এর মার্কেটিং-এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি দেখেছেন যেসব লেখক অজ্ঞাতবাসে গিয়ে বই লিখে ফেরৎ এসেছে, তারপর ব্যাপক মার্কেটিং করেছে তাদের সাফল্য কম। কিন্তু যারা শুরু থেকে পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছে তাদের সাফল্য অনেক বেশি।
পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ মানে লেখকের ব্লগ, স্যোসাল মিডিয়া ইত্যাদি। সফল লেখকেরা এমনকি তাদের বই-এর বিষয়বস্তুও অনেক সময় পাঠকের কাছ থেকে পেয়েছে।
বিদেশে বই প্রকাশের ব্যাপারটা আমাদের দেশের মতো নয়। আমাদের এখানে একজন লেকক একটা বই লিখে ফেলেন তারপর প্রকাশকের কাছে যান। আর কিছু সৌভাগ্যবান লেখক আছেন প্রকাশক তাদের কাছে আসেন। কিন্তু পশ্চিমে লেখকদের প্রথমে তাদের বই-এর আইডিয়া জমা দিতে হয় প্রকাশকের কাছে। প্রকাশকের সম্পাদক, বিপননকর্মী ইত্যাদি সেটা দেখে ব্যাপারটা এপ্রূভ করেন। তারপর লেখা। লেখার সময় সম-বিরতিতে সম্পাদকেরা ফীডব্যাক দিতে থাকেন এবং সেভাবেই বই লেখা শেষ হয়।
এখন এই ফীডব্যাকে সম্পাদকদের ছাড়াও সরাসরি পাঠকদের নিয়ে আসার কথাই বলা হচ্ছে। সেটা কীভাবে হতে পারে?
প্রথম লেখক তার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার পাঠকদের জানাতে পারেন তিনি নতুন কি বিষয় নিয়ে ভাবছেন। তখন তিনি পাঠকের একধরণের ফীডব্যাক পাবেন। এরপর তিনি তার লেখার কথা বলতে পারেন তার ব্লগে। সেখানে তিনি যেটুকু লিখেছেন তার অংশ বিশেষ শেয়ার করতে পারেন। তাতে পাঠকেরা শুরু থেকে বই-এর সঙ্গে একাত্ম হতে পারেন। রায়ানের মতে এই বইগুলোর বিক্রি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এবং এ মেথডযে কাজ করে তা আমার চেয়ে ভাল কে জানে। আমি কয়েক বছর আগে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রথম বর্ষের কিছুদিনের অভিজ্ঞতা ফেসবুকে ১০ পর্বে নোটাকারে প্রকাশ করি। পরে যথন আমার ওয়েবসাইট তৈরি হয় তখন আমি সেগুলোর সবটুকু একত্রে আমার সাইটে প্রকাশ করি। সেই লেখা পড়ে আদর্শ প্রকাশনীর প্রকাশক মাহবুব রাহমান একদিন আমার অফিসে আমার কাছে আসে। তার বক্তব্য এটিকে বড় করে একটি বই করে ফেলেন। আমি তার কাছে জানতে চাই – আমার মতো মানুষের আত্মজীবনীর অংশবিশেষ কেন মানুষ পড়বে বা ভাল করে বললে ‘টাকা দিয়ে কিনবে”?
“কতো বিক্রি হলো সেটাতো বড় না। বরং এটা বই হলো সেটাই বড়”।
মাহবুবের কথায় রাজী হওয়ার পর আমি ভাবলাম আমি তাহলে বই-এ কী কী লিখবো। তারপর আমি কখনো ফেসবুকে কখনো আমার সাইটে যা আমি বই-এ লিখতে চাই সেগুলো লিখতে শুরু করি। তখনই আমার সাইট আর ফেসবুকের পাঠকরা বই নিয়ে আগ্রহ দেখায় এবং বিভিন্ন ফীডব্যাক দিতে থাকে। তাদের ফীডব্যাক নিয়েই আমি বইটা শেষ করি। আমার আর মাহবুবের ধারণা বাতিল করে দিয়ে ক্রেতারা এরই মধ্যে পড়ো পড়ো পড়ো এর দ্বিতীয় মুদ্রণ শেষ করে ফেলেছে।
তো, এ হলো মার্কেটের জন্য উপযোগী প্রোডাক্ট বানানোর বুদ্ধি। যারা গুহার ভেতর থেকে একদিন পাণ্ডুলিপি নিয়ে হাজির হয় তাদের পক্ষে বাজারমাত করাটা কঠিনই বটে। অন্যদিকে পাঠকের সঙ্গে যে সব লেখকের যোগাযোগ তারা বই-এর সম্ভাব্য নাম, সম্ভাব্য কভার এগুলো সবই শেয়ার করে এবং পাঠকের ফীডব্যাকের ভিত্তিতে সেটা চূড়ান্ত করে। কখনো কখনো তারা সংবাদপত্রে কি লিখছেন সেটা জানান দেন এবং কোন পাবলিক অনুষ্ঠানেও তার বই-এর কথা বলেন। এই ধরনের বই-এর বিপনন কিন্ত আমাদের মতো দেশেও অনেকখানি সোজা। ফলে এগুরো রিচ বাড়ে এবং সেটা সবজায়গাতেই যায়।
এ বিষয়ে মার্ক এন্ডারসেনের একটা কথা আছে। মার্ক হলো নেটসক্যাপের প্রতিষ্ঠাতা। নিং, ওপসওয়্যারের পেছনেও তাঁর অবদান আছে। একটা বড় ভেঞ্চার কোম্পানি চালানো ছাড়াও মার্ক কিন্তু ফেসবুক, ই-বে এবং এইচপির বোর্ডের মেম্বার। তার মতে কোম্পানিগুলো “do whatever is required to get to product/market fit. Including changing out people, rewriting your product, moving into a different market, telling customers no when you don’t want to, telling customers yes when you don’t want to, raising that fourth round of highly dilutive venture capital—whatever is required.”
অন্যভাবে বলা যায় এখন সবকিছুই তোমাকে টেবিলে রাখতে হবে।
ফীডব্যক!!!
মার্কেটিয়ারদের শুরু থেকে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টে যুক্ত রাখতে চাননা অনেকেই। কারণ সবার ধারণা যে জিনিস আমি বানাইনি সেটা কেমনে বিক্রি করবে? তবে, দিন এখন বদলাচ্ছে। আর মার্কেটিং মানে কিন্তু পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, বড় বড় বিলবোর্ড স্থাপন নয়। সেটি খুবই সাদামাটা ভাবে হতে পারে।
এবারনোটের কথা ধরা যাক। এই স্টার্টআপটি প্রোডাক্টিভিটি আর অর্গানাইজেশনাল টুলস বানিয়েছে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরুর কয়েকবছর মার্কেটিং-এ কোন টাকাই খরচ করেনি! কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ফিল লিবেনর বক্তব্য সোজা – যারা সেরা পন্য বানানোর বদলে অন্যকিছু চিন্তা করে তারা সেরা পন্য বানাতেই পারে না (“people [who are] thinking about things other than making the best product, never make the best
product.” )
কাজে এভারনোট “মার্কেটিং” বাজেটের সবটুকু প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টে ব্যয় করে। এতে তাদের গ্রোথ প্রথমে বলতে গেলে কিছুই হয়নি কিন্তু তাদের প্রোডাক্টের মান হয়ে যায় আকাশ ছোঁয়া। এখনতো এটা নিজেই নিজের মার্কেটিং করে।
তো, একবার তারা তাদের সীমিত কাস্টোমারদের কাছে থেকে একটা অদ্ভুত ফীডব্যাক পেল। কাস্টোমাররা জানালো মিটিং-এ কম্পিউটার অন রেখে নোট নিলে “বস”রা মাইন্ড করে। সঙ্গে সঙ্গে এভারনোট টিম একটা স্টিকার বের করে যাতে লেখা – “I’m not being rude. I’m taking notes in Evernote.”
কাস্টোমাররা সেটি লাগানো শুরু করলো তাদের ল্যাপটপের ওপরে আর যেতে তাকলো মিটিং থেকে মিটিং-এ! ব্যাস এভারনোটের কাস্টোমাররাই হয়ে গেল তাদের বিলবোর্ড। মার্কেটিংই হলো কিন্তু শেষ পর্যন্ত।
কাজে যে মার্কেটিয়ার শুরু থেকে যুক্ত থাকবে তার একটা বড় কাজ হবে প্রশ্ন করতে থাকা?
এই প্রোডাক্টটা কারজন্য বানাচ্ছেন?
ঐ ব্যাটা কেন এটা কিনবে?
এ জিনিস কার মাধ্যমে বেচবেন? সে ব্যাটা দোকানে এটা রাখবে কেন?
শুধু প্রশ্ন করবে? না, এই সকল প্রশ্নের উত্তর তার মার্কেটিয়ার বন্ধুদের জানাবে, প্রেসের সঙ্গে আলাপ করে ক্যাজুয়ালি। তবে এটুকেতে থেমে থাকা যাবে না বা কেবল বুন্ধুদের ফীডব্যাক নিরেই হবে না। কিছুদিনের মধ্যে মার্কেটিয়ার যখন জেনে যাবে কোন বাজাের জন্য এই প্রোডাক্ট তখন সে ফীডব্যাকের জন্য এই গ্রাহক-দলের কাছে যাবে। সার্ভে মাংকি বা গুগল ডকের মতো জলিপ সহায় টুল ব্যবহার করতে পারে কিংবা একই সঙ্গে অফলাইন কাগজ-জরিপও করতে পারে।
সব ফীডব্যাকনিয়েই যে ফিরতে হব তা নয়। কিন্তু যতো ডেটা ততো বিপদে না পড়ার সম্ভাবনা। যদি কখনো এ কথা বরথেই হয় যে, যা বানাচ্ছেন সেটা কোন কাজে আসবে না, তখন তো তোমার কাছে সে কথার পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকতে হবেনা কি?
যারা ফলো করছে তারা এই ভিডিওটা দেখে নিতে পারে
https://www.startupschool.org/videos/13
একবার যদি কাজের জিনিষ বানোন যায়, তখন কেবল কাস্টোমার নিয়ে আসার ব্যাপারটাই থাকে।