গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-৩: কাজের জিনিষ কোথায় পাই?
আগের পর্ব : গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-২ : কাজের জিনিষ বানাও
একজন মার্কেটিয়ারের সবচেয়ে বড় দু:খ কী?
এমন জিনিষ তাকে বিক্রি করতে বলা যা কী না কারও দরকার নাই!!!
দরকারের ব্যাপারটা অবশ্য ইদানীং আপেক্ষিক। কারণ এমন অনেক পন্য বা সেবা বের হচ্ছে যা আগে মোটেই দরকার ছিল না। কিন্তু বের হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে সেটি ছাড়া জীবন অচল। নিকোলাম টেসলা যখন স্মার্টফোনের কথা ভেবেছিলেন তখন কী তিনি এটা ভেবেছেন যে এটি একেবারে সর্বব্যাপী হবে? কে বা ভেবেছে বিশ্বের প্রতি তিনজনের একজন ফেসবুক ব্যবহার করবে? কিংবা মিনিপ্যাক শ্যাম্পুর উদ্ভাবন হবে এবং সেটা শ্যাম্পুকে আম জনতার কাছে পৌছে দিয়ে প্রমাণ করবে – When numbers outnumbered the numbers!
প্রশ্ন হচ্ছে এমন একটা কাজের জিনিষ কেমন করে বানানো যায়? যে জিনিষটা বাজারের উপযোগী সেটা খুঁজে পাওয়ার উপায় কী?
এয়ারবিএনবির কথা ধরা যাক। এখন এটির ভ্যালুয়েশন কয়েক বিলিয়ন ডলার। আজকে আমরা জানি এ হলো রিয়েলস্টেট শেয়ার করার একটা সাইট। ফাউন্ডার ব্রায়ান চেস্ককি ব্যাপারটা এভাবে বলেন, “”you can book space anywhere. It can be anything, and it really is anything from a tent to a castle.” মানে তাবু থেকে দুর্গ খুঁজে পাওয়ার উপায়। কিন্তু ২০০৭ সালে কী ব্যাপারটা এরকম ছিল?
২০০৭ সালে ব্রায়ান তাদের লিভিং রুমকে একটা ছোট “বেড এন্ড ব্রেকফাস্ট” বানাতে চেয়েছে। এ জন্য ঐ রুমে বায়ু ভর্তি ম্যাট্রেস দেওয়া হতো আর সকালে অতিথিদের জন্য সকালের নাস্তা। বোঝাই যাচ্ছে এই সার্ভিসের নাম ছিল Airbedandbreakfast.com।
তবে ব্রায়ান এতটুকুতে সন্তুষ্ট থাকতে চাইলো না। কাজে এর পরপরই সে ব্যাপক উদ্যমে মার্কেটিং-এ নেমে পড়ে নাই। যা করছে তা হলো নিজের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে খবরটা পৌছে দিল যে, হোটেলে যায়গা না পেলে আমার এখানে থাকতে পারো। (২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রেকিার জোহানেসবার্গে গিয়ে এরকম একটা বিবিতে কয়েকদিন থাকতে হয়েছে হোটেল জায়গা পাইনি বলে। তবে সেখানে খাট ছিল, বাতাসভর্তি ম্যাট্রেস ছিল না!)। হোটেলে চাপ থাকলেই ব্রায়ান ভাল খদ্দর পেয়ে যেতো। ব্রায়ান যদি এতেই সন্তোষ হতো তাহলে আজকে এই উদাহরণ পড়া লাগতো না।
কয়েকদিন পরে এটাকে রিপজিশন করা হলো যে হোটেল জায়গা না পেলে এই জায়গাকে নেটওয়ার্কিং সেশনের জন্য ব্যবহার করা যাবে। তবে, সেটাতেও স্থির থাকা গেল না। কারণ ব্রায়ানের মনে হলো হোটেলের গেস্টদের টার্গেট করার চেয়ে যে সব পর্যটক হোটেলে থাকতে চায় না আবার হোস্টেলের সোফায় ঘুমাতে চায় না তাদেরকে টার্গেট করা যায়। কিছুদিন যাবার পর ফীডব্যাক নিয়ে Airbedandbreakfast.com কে ছোটকরে Airbnb.com করা হলো (ফেসবুকের প্রথম ইউআরএল মনে আছে?)। আর বাদ দেওয়া হল ব্রেকফাস্ট আর নেটওয়ার্কিং অপশন। এতে দেখা গেল বিরাট সংখ্যক লোক, যাদের একস্ট্রা রুম পড়ে আছে, তারা আগ্রহী হয়েছে সেবা দেওয়ার জন্য। বাড়তি সার্ভিস না ধাকাতে,(সকালের নাস্তা বা নেটওয়ার্কিং-এর হ্যাসল বাদ দেওয়াতে, সার্ভিস অফার করার লোক বেড়ে গেল। কাজে শেষ পর্যন্ত ব্রায়ানদের সাইট হয়ে গেল বিশ্বের যে কোন জায়গায় যে কোন ধরণের থাকার জায়গা শেয়ারের সাইট। এখন তো রুম, এপার্টমেন্ট, তাবু, নৌকা, বজরা, দুর্গ কিংবা প্রাসাদ সবই আছে এয়ারবিএনবিতে। একসময় গ্রেগরি পেকের কাম সেপ্টেম্বরের মতো প্রাসাদও পাওয়া যাবে।
ম্যাট্রেসে থাকার আইডিয়াটা ২০০৭ সালে খুবই ভাল আইডিয়া ছিল। সেখানেই জোরদিয়ে ব্রায়ান এটাকে অনেক বড় করতে পারতেন, হয়তো। কিন্তু তিনি রিজিড ছিলেন না। তারা বরং ফীডব্যাকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে প্রোডাক্টটাকে পরিবর্তন করেছেন এবং এরপর কয়েকধাপে আজকের প্রোডাক্টে পৌছেছেন।
তবে, সে সময় এয়ারবিএনবিই একমাত্র লোকেশন বেজড স্যোসাল মিডিয়া ছিল না। Burbn নামে সে সময়ে আর একটা সামাজিক মাধ্যম ছিল। তবে, সেটিতে সামাজিক যোগাযোগের বাইরে ছবি শেয়ারের একটা অপশনাল সার্ভিস ছিল। সে সময় তারা ভাল লোকজনের সাড়া আর পাঁচ লক্ষ ডলারের বিনিয়োগ যোগাড় করে। কিন্তু উদ্যোক্তারা লক্ষ করলেন এর ব্যবহারকারীরা মূলত ছবির কারবারেই বেশি ব্যস্ত। কাজে তারা একটা মিটিং-এ বসলেন – “We sat down and said, ‘What are we going to work on next? How are we going to evolve this product into something millions of people will want to use? What is the one thing that makes this product unique and interesting?’”
ভেবেচিন্তে তারা ভাবলেন কেবল ছবি শেয়ারের ব্যাপারটাই থাক। নতুন নাম দিয়ে কেবল ছবি শেয়ারিং-এর এপ হিসাবে বাজারে আসার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের এক লক্ষ ব্যবহারকারী হয়ে যায়। আর ফেসবুক ইনস্টাগ্রামকে কিনে নিয়েছে মাত্র একশ কোটি ডলারে!
দুইটি কোম্পানিই কিন্তু তাদের “কাজের জিনিষ” খোঁজার জন্য ব্যাপক সময় নিয়েছে এবং একাধিকবার প্রোডাক্টের দর্শন পরিবর্তন করেছে। এভাবে তারা খুঁজে পেয়েছে, গ্রোথ হ্যাকাররা যাকে বলে পিএমএফ (প্রোডাক্ট মার্কেট ফিট বাজারের জন্য দরকারি প্রোডাক্ট) । এরিক রাইজ তার লিন স্টার্টআপ বই-এ ঠিক একথাটা বলেছেন। একটা মিনিমাম ভায়াবল প্রোডাক্ট দিয়ে শুরু করে দ্রুত এটাকে আইটেরেশানের মধ্যে নিয়ে যাওয়া।
তারমানে প্রোডাক্ট তৈরির জন্য অপেক্ষা না করে মার্কেটিয়ারের উচিৎ হবে শুরু থেকে প্রোডাক্টকে বাজারে নিয়ে ফিডব্যাক নিয়ে আসা, ইনপুট দেওয়া।
প্রশ্ন হচ্ছে এই ফীডব্যাক আর পরিবর্তন উদ্যোক্তা কেমন করে পাবেন? আর পরিবর্তনটাই বা কেমন করে করবেন।
ইনস্টাগ্রাম ও এয়ারবিএনবির ব্যাপারটা ভাল মতো বুঝলে সেটার অনেকখানিই বোঝা হয় যায়। তবে আগামী পর্বে এ সংক্রান্ত রায়ানের অভিজ্ঞতার আলোকে আমার পড়ো পড়ো পড়ো মার্কেটিং-এর ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করবো।
পরের পর্ব – কাজের জিনিষ কেমনে বানাই?