আগামী দিনের প্রোগ্রামিং

Spread the love

বিদুষী যখন হঠাৎ হঠাৎ আমার কাছে জানতে চায় আমাদের সময়ে আমরা কীভাবে মাইক্রোবিট নিয়ে কাজ করতাম তখন আমি হা করে তাকিয়ে থাকি। কারণ মাইক্রোবিট, আরডুইনো বা লাইন ফলোয়ার রোবটের কথা আমি সেভাবে শুনিনি, এমনকী আমার বুয়েট লাইফেও না। মাঝে মধ্যে রুবাই জানতে চাইলে বলতাম বুয়েটে ফার্স্ট ইয়ারে আমাদের তিনশ’ নম্বরের  প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নামে বিষয় ছিল। সেখানে আমরা শিখতাম ফোরট্রান (FORTran) নামে একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। এখন অনেকেই হয়তো বিশ্বাস করবে না, সিএসই বিভাগের কামরুল ইসলাম স্যার আমাদের প্রোগ্রামিং শেখাতেন খাতা-কলমে। তিনি সিনট্যাক্স শেখাতেন, এপ্লিকেশন বলতেন, তারপর প্রোগ্রাম লিখতে দিতেন। আবার হয়তো একটা সেগমেন্ট অব কোড দিয়ে দিতেন, আমাদের বলতে হতো এটি কম্পাইল করে, রান করলে আউটপুট কী হবে।
ক্লাশগুলো খুব ইন্টারেস্টিং হতো। আমরা খুব মজা পেতাম কারণ আমরা টের পেয়ে গেছি এটাতে নম্বর ওঠানো হবে খুবই  সহজ। তো, ঈদের পরের দিন স্যার ক্লাশে এসে হুমহাম বোর্ডে একটা কিছু লিখে শেষ করে তারপর আমাদের দিকে তাকালেন। আমরা বোর্ডে তাকিয়ে তেমন কিছু না বুঝলেও, মনে মনে কম্পাইল করে রান করে টের পেলাম স্যার বোর্ডে লিখেছেন “EID MOBARAK TO YOU ALL!”

পরে আমি আরও ১/২টা ল্যাঙ্গুয়েজ শিখেছি। এর মধ্যে স্ক্রিপটিং ভাষাগুলো নিয়ে অনেক কাজ করতে হয়েছে আমার সিস্টেম এডমিনিষ্ট্রেটরকালে। পরে অবশ্য জেনেছি প্রোগ্রামিং-এর সূচনা না হলেও প্রায় ১৪০ বছর আগে, ১৮৪৩ সালে। সে সময় লেডি বায়রনের কন্যা এডা লাভলেস প্রথম একটা প্রোগ্রামিং এলগরিদম লিখেছিলেন। এটি বার্নলি সংখ্যার একটা সিকোয়েন্স আউটপুট দেবে বলে তিনি ধারণা করেন, চার্লস ব্যাবেজের এনালিটিক্যাল ইঞ্জিনে।

এখন আর খাতা-কলমে প্রোগ্রামিং শিখতে হয় না। এখন নানা রকমভাবে কোডিং শেখা যায় এবং সবচেয়ে সহজ হলো স্ক্র্যাচের মাধ্যমে ব্লক দিয়ে শেখা। এটিকে বাংলাভাষাতে রুপান্তরের কাজ করছি আমরা এখন। এখনকার বেশিরভাগ প্রোগ্রামিং ভাষা ইংরেজির মতোই দেখতে এবং এরকম ভাষা রয়েছে অসংখ্য। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রোগ্রামিং ভাষাও বের হচ্ছে। জাভাস্ক্রিপ্ট ও এইচটিএমএল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ওয়েবসাইট, আর আর এসএএস দিয়ে হয় পরিসংখ্যানের বিশ্লেশন, অটোক্যাড দিয়ে ডিজাইন ড্রয়িং করে ফেলা করা যায়। আর জাভা, পাইথন কিংবা সি/সি++ তো যুগ যুগ ধরে প্রোগ্রামারদের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েই গেছে।

প্রোগ্রামিং ভাষা কোনটা দিয়ে শুরু করতে হবে সেটি নিয়ে আগে লিখেছি। আর কেনই বা প্রোগ্রামিং-এর গুরুত্ব প্রতিনিয়ত বাড়ছে সেটাও আগে একাধিকবার লিখেছি। গুগল, ফেসবুক তো বটেই এমনকি হাদী পার্বতী নামে এক লোক কোড ডট অর্গ নামে একটি বিশাল সাইটও তৈরি করে ফেলেছে যেটি দিয়ে প্রোগ্রামিং-এর হাতে খড়ি দেওয়া যায়।

আমাদের দেশেও অনেকেই প্রোগ্রামিং-কে সামনে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেই ১৯৯৭-৯৮ সাল থেকে কায়কোবাদ স্যার দেশে এসিএম আইসিপিসিকে জনপ্রিয় করেছেন। চালু করেছেন বাংলাদেশ ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াড। জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগতিা (NHSPC) নামে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের একটি উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক। এটি ২০১৫ থেকে ২০১৭ তিন বছর হওয়ার পর নামে পাল্টে ফেলে জাতিয় শিশু কিশোর প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে স্টান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক- প্রথম আলো আন্তস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। এটি একটি দলীয় প্রতিযোগিতা।

কোডিং দক্ষতা এখন অনেকক্ষেত্রে আবশ্যক যোগ্যতা হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ কম্পিউটার ছাড়া বলতে গেলে জীবনযাত্রা কঠিন। বছর পাঁচেক আগে দেখা গেছে আমেরিকায় প্রায় ১ কোটি কাজে কোডিং লাগে। এবং সেখানে এর গ্রোত ১২%-এর বেশি। এখন বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০ লক্ষ প্রোগ্রামারের সংকট আছে। তবে, গত এক দশকে প্রোগ্রামিং কেবল টেকনোরজি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নেই। আমাদের দেশে আইটি স্নাতকদের সবচেয়ে বেশি চাকরি দেয ব্যাংকগুলো। কারণ এখন ব্যাংক মানেই আইটি। প্রথম আলো’র মতো দৈনিক পত্রিকাগুলো এখন আইটি ছাড়া চলতে পারে না। কাজে আমার সহকর্মীদের একটা অংষ এই আইটি অবকাঠামো রক্সণাবেক্ষণ করেন এবং কোন না কোন কোডিং স্কুল থেকে এসেছেন। কাজে উৎপাদন, হিসাব, ব্যবস্থাপনা, শেয়ার বাজার সব কিছুতেই এখন কোডিং-এর আবশ্যকতা রয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং-এর প্রয়োগ ও তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার ফলে একটি নতুন গোষ্টীরও উদয় হয়ছে। তারা ভাবছেন আগামীতে প্রোগ্রামিং করে ফেলবে রোবট! এ জন্য তারা অনেক উদাহরণও দেন। যেমন বাবল নামে একটি প্র্যাটফর্ম দিয়ে ওয়েবসাইট বানিয়ে ফেলা যায়, কোডিং ছাড়া। জিরোকোডের প্ল্যাটফর্ম থেকেও সফটওয়্যার বানানো যায়।  বলা বাহুল্য, এগুলো ব্যবহার করতে হলে আপনাকে অবশ্যই কোডিং=-এর বেসিক বিময়গুলো জানতেই হবে। এরকম প্ল্যাটফর্মগুলো অনেক আনন্দের এবং জটিল প্রোগ্রামিং জ্ঞান ছাড়াই সকলকে কোডিং করার সুযোগ দেবে।

কিন্তু এসব কিছুর কোনটাই প্রোগ্রামারদের জয়যাত্রা থামাতে পারবে ন।। আমেরিকার কর্মবাজার নিয়ে গবেষণা করে এমন একটা প্রতিষ্ঠান বার্নিং গ্লাস জানাচ্ছে নিযোগদাতারা ভাল কোডিং জানা কর্মীকে বছরে গড়ে ২২ হাজার ডলার বেশি বেতন দিতেও পিছপা হচ্ছে না! আর এ কারণে বিশ্বজুড়ে এখন কোডিং-কে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছে সরকারগুলো। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাইক্রোসফট, এপর, অ্যামাজন, ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো।

আমাদের সম্ভাবনার একটি বড় দিগন্ত কম্পিউটার প্রোগ্রামিং। যেনো-তেনো প্রোগ্রামিং নয়। দরকারি প্রোগ্রামিং দক্ষতা।
আগামী দিনের প্রোগ্রামিং-এর দিগন্ত কেমন করে পাল্টে যাচ্ছে, কীভাবে কাজ করলে, নিজেকে প্রস্তুত করলে আগামী দিনে তুমি হারিয়ে যাবে না, সেসব ব্যাপারে পরিস্কার ধারণা থাকাটা দরকার। আর এসব নিয়েই আমাদের বাংলা ভাষায় প্রোগ্রামিং সংক্রান্ত সহজ কয়েকটি বই-এর প্রণেতা ঝংকার মাহবুবের লার্ন প্রোগ্রামিং ফর ফিউচার প্রোগ্রামে যোগ দিতে পারো।

ঝংকার মাহবুব বেশ কিছু প্রোগ্রামিং-এর বই লিখেছেন বাংলায়। এর মধ্যে হাবলুদের জন্য প্রোগ্রামিং, বলদ টু বস দুইটিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ বই, নতুনদের জন্য।

আগামী শনিবার, অর্থাৎ ছুটির শেষ দিনে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের কাটবন মোড়ের সন্নিকটে দীপনপুরে এই আযোজন অনুষ্ঠিত হবে। আদর্শ প্রকাশনী এই আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এ কারণে এই আয়োজনে যোগ দিতে কোন ফী ও লাগছে না। তবে, আয়োজক, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে নিবন্ধনের অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া আদর্শের সৌজন্যে সেখানে ঝংকার মাহবুবের বই কেনার সুযোগও থাকবে।

যারা ঝংকার মাহবুব সম্পর্কে জানে না, তারা তাঁর সম্পর্কে আমার এই লেখাটা পড়ে নিতে পারে।

আগ্রহীদের সঙ্গে আশা করি দেখা হবে সেখানে।

হ্যাপি কোডিং

 

 

 

One Reply to “আগামী দিনের প্রোগ্রামিং”

Leave a Reply