ফেসবুকের এআই ‘পড়ছে’ তো পড়ছেই
দিন দুই আগে ফেসবুকে একটা ঝামেলা হলো। ছবি দেখা যাচ্ছিল না। দুর্ভাগ্য বশত সে সময় আমি ফেসবুক থেকে দূরে থাকায় এক কঠিন বাস্তবতা সরাসরি দেখা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এরকম হলে আর কি করা, পছন্দের মিডিয়াগুলো কে কী বলেছে, লিখেছে সেগুলো পড়তে হয় আর কি।
তো, সে সময়কার টুইটগুলো দেখে, ভার্জের লেখকের মতো আমারও দ্যা ম্যাট্রিক্স সিনেমার কথা মনে হল। মনে আছে নিও যখন ডিজিটাল মেসিয়া হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলো তখন সে প্রথমবারের মতো ‘বাস্তবতা” জানতে পারলো। আর বাস্তবতা হলো “ lines of trailing green code”
টেকক্রান্চের নিরাপত্তা সম্পাদক জাক হুইটেনারের টুইটটা দেখলেই সেটা বোঝা যায়। জাক লিখছেন – আমি ভুলেই গিয়েছিলাম ফেসবুক কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা দিয়ে আমাদের ছবিগুলো ট্যাগ করে। এগুলো যা দেখেই ট্যাগ করে। জাকের প্রোফাইল ছবির ট্যাগ হলো “One Person, Beard” দাড়িওয়ালা একটা লোক!! টুইটারে জাকের ছবিটা দেখলে বোঝা যায় কথাটা কতো সত্যি!!!
যারা সেদিন ছবি না দেখে ছবির জায়গায় কতোগুলো লেখা দেখতে পেয়েছেন তাদের অনেকই হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন। ২০১৬ সাল থেকে ফেসবুক তাদের কম্পিউটার ভিশন ব্যবহার করে ছবি ট্যাগ করছে। সেদিন যারা ছবি আপ করেছেন তারা ছবি না দেখে দেখেছেন এরকম কিছু – “image may contain: people smiling, people dancing, wedding and indoor” or just “image may contain: cat.”
হুম। এভাবেই ফেসবুক এআই আপনাকে চিহ্নিত করে, বিচার করে। লজ্জা পেলেন?
ফেসবুক আমাদের ছবি “পড়ছে” ২১০৬ সাল থেকে। আমরা যে বলি একটি ছবি হাজার শব্দের চেয়েও বেশি কথা বলে সেটি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে। এক ছবি থেকে হাজার হাজার তথ্য বের করে ফেলতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ফেসবুক হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্য সংগ্রাহক এবং সেখানেই এর ভাল একটা অনুশীলন হয়ে যাচ্ছে।
৩ তারিখের ঘটনার পরপরই টুইটারে যেসব প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে তাতে মনে হতে পারে ফেসবুক এই তথ্যগুলো হয়তো বিজ্ঞাপন টার্গেট করার জন্য ব্যবহার করতে শুরু করেছে। আমি যে কয়টা মিডিয়া দেখেছি তাতে অবশ্য কেউ এটা কনফার্ম করতে পারে নাই।
আপনার প্রোফাইলে আপনি হয়তো তেমন কিছু লাইক দেন নি, পেজ-টেজও তেমন একটা যান না। কেবল নিজের কিছু ছবি নিয়মিত আপলোড করেন। এই ছবি থেকেই আপনার পছন্দের, আপনার পরিবারের এমনকী আপনার পোষা কুকুরের তথ্যও হয়তো বের করে ফেলা যায়। ২০১৭ সালে একজন প্রোগ্রামের একটা গিটহাব রিপোজিটরি খুঁজে পেলাম। দেখা যাচ্ছে, “বেশিরভাগ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী জানেনই না যে এখন নিয়মিতভাবে তাদের ছবি থেকে কতো তথ্য প্রতিনিয়ত বের করে নেওয়া হচ্ছে।
তবে এই সব তথ্য যেমন ভাবে ব্যবহার করা হোক না কেন, একটা বিষয় কিন্তু পরিস্কার যে ডীপ লার্নিং-এর উন্নতি সামনে একটা নতুন বিপ্লবের সূচনা করবে অথবা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নতুন মাত্রা যোগ করবে। ফেসবুকের এই ঘটনা থেকে মোটামুটি আমরা বুঝতে পারছি ‘মেশিন’ আমাদের কেমন করে ‘চিনে’ ফেলছে।
যারা এতদূর পড়ে ভয় পাচ্ছেন তাদের স্বান্তনা দেওয়ার জন্য ভার্জের রুবেন সালভাদুরির টুইটটা যোগ করলাম।
দেখা যাচ্ছে ছবির একজনকে ফেবু এ আই চিনতে পারেনি! রুবেনের প্রশ্ন সেটা কি রুবেন নিজে না জুডাস?
অফটপিক – বাংলাদেশেও মেশিন লার্নিং, ডীপ লার্নিং নিয়ে কাজ হচ্ছে বলে আমি শুনেছি। সেজন্য ড. বদরুল মুনির আমাদের জন্য একটা দুইদিনের কর্মশালা পরিচালনা করছেন। এখনও কয়েকটা আসন খালি আছে। কাজে ইচ্ছে করলে নিবন্ধন করা যাবে।