
ব্যর্থতার সম্মেলন
আমরা ছোটবেলা থেকে প্রথম হওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগি। এমন যে, অনেকেই তাদের যে কোন কোন কাজকে বাংলাদেশে আমিই প্রথম বলে চালাতে চায়। এটা প্রায় জাতীয় ব্যধিও বলা চলে। এর কারণ হলো আমাদের সমাজটা এখনো সামন্ততান্ত্রিক ধ্যান-ধারণাকে আকড়ে ধরে আছে। এদেশে ে্খনো অনেক স্বনামধন্য শিক্ষক আছেন যিনি মনে করেন আগে যে বোর্ড স্ট্যান্ডের ব্যাপার ছিল সেটাই ভাল ছিল। কারণ তখন কেউ না কেউ প্রথম হতো!
যাকগে। আজকের লেখা সাফল্য নিয়ে নয়। ব্যর্থতা নিয়। ব্যর্থতা? – এটা আবার কী? আমাদের দেশে ব্যর্থতার কোন জায়গা নেই। সবাই সফল হতে চায়, প্রথম হতে চায়। যদিও ছোটবেলা থেকে ফেইলিওর ইজ দ্যা পিলার অব সাকসেস জাতীয় কথা আমরা শুনতেই থাকি। তাহলে আমরা কেন ব্যর্থ হতে চায় না? স্বাভাবিক। আমাদের ধারণা সফল হতে হলে ব্যর্থ হওয়া যায় না। যদিও পৃথিবীর সব সফল লোকের কথা যদি আপনি খোঁজ নেন তাহলে দেখবেন তাদের জীবনের পরতে পরতে পরতে ব্যর্থতার ব্যাপার আছে।
টমাস আলভা এডিসন সম্পর্কে সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন গল্পটা প্রচলিত। বলা হয় তিনি ৯৯৯ বার বিজলি বাতি বানাতে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু তাঁর কাছে জানতে চান তিনি বলবেন, “আরে কে বলছে আমি ব্যর্থ হয়েছি। আমি জেনেছি কোন ৯৯৯ রকমে বিজলি বাতি বানানো যায় না।” এডিসনকে নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে বিশেষ করে টেসলা সংক্রান্ত কিন্তু এ গল্পটা মনে হয় সত্যি।
এখন আমাদের দেশে কথায় কথায় গুগল, ফেসবুকের কথা বলা হয়। মনে হয় সিলিকন ভ্যালিতে বোধহয় সহজেই অনেক কিছু পাওযা যায়। কিন্তু সিলিকন ভ্যালিতে ওরা বলে হাজারটা ব্যর্থতার পরে একটা গুগল পাওয়া যায়। তারা তাদের এই ব্যর্থতাকে কাজ লাগায়। তখন সেটা কেবল ব্যর্থতা থাকে না। হয় সাফল্যের সঙ্গে ফেল করা।
অনেক দেশেই ব্যর্থতার সম্মেলন হয়। সেখানে ব্যর্থতার গল্প শোনানো হয়। উদ্দেশ্য একটাই। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া। যে সমাজ ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে উৎসাহ দেয়ে তারাই হয়তো সবচেয়ে বেশি আগাতে পারে।
আমি ভাবছি আমরাও এখন থেকে ব্যর্থতার সম্মেলন করলে কেমন হয়? সেখানে সব ব্যর্থ লোকেরা আসবেন, তাদের ব্যর্থতার গল্প করবেন। আমরা শুনবো কেন তিনি সেই কাজটি করতে পারেন নি। তারপর সবাই চা-বিস্কিট খেয়ে চলে যাবো।
তাহলে হয়তো মনে করাই দেওয়া যেত,
পড়ে যাওয়া টা পতন নয়,
পতন হলো উঠতে না চাওয়া।