ফেসবুকের গল্প-২ : গেরিলা কম্পিউটিং
২০০৩ সালের সেপেম্বর মাসে মার্ক জাকারবার্গ হার্বার্ডের কার্কল্যান্ড হাউসের বাসিন্দা হতে আসে। এইচ৩৩ রুমটি ভবনের চারতলায়। মার্ক-এর সঙ্গে ছিল একটি আট ফুট দৈর্ঘ্যের হোয়াইট বোর্ড। যে কোন চিন্তাভাবনা করার সময় এবোর্ডটি তার সহায়! তার বিক্ষিপ্ত চিন্তা এই বোর্ডকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীভূত হয়।
হাউসের স্যুটটি একটু জটিল। দরজা পেরোলে একটি কমন রুম। চারটি পড়ালেখার ডেস্ক রয়েছে সেখানে।কমনরুম পার হয়ে দুইটি বেড রুমে যাওয়া যায়। যে যাওয্রার পথে মাত্র একটি দেয়ালই খালি। সেখানে সানন্দে বসে গেল হোয়াইট বোর্ডটি।
শোবার রুম দুইটি একই রকম। একটি দোতলা খাট। দুইটি ডেস্ক আর ক্যাবিনেট। এর একটিতে মার্কের সঙ্গে থাকবে হিউজেস। সাহিত্য আর ইতিহাসে মেজর। দুজনের কেহ রাজী হলো না উপরে থাকতে। কাজে খাট খুলে রুমের মধ্যে পেতে ফেলা হল। ফলাফল হলো এ রুমে আর নড়াচড়া করার কোন জায়গাই থাকলো না।পাশের রুমে ডাসটিন মস্কোভিচ, অর্থণীতির ছাত্র আর বিলি ওলসন। চারের মধ্যে মার্কই কেবল কম্পিউটারে মেজর। সারাদিন ধরে খালি কোড করার চিন্তা। আর নানান প্রজেক্ট। আর ইন্টারনেট। মার্কের ধ্যানজ্ঞান হলো ইন্টারনেট।
বাকীদের মধ্যে কম্পিউটার নিয়ে কিছুটা আগ্রহ আছে মস্কোভিচের।
মার্কের সাইক্রিয়াটিস্ট মার মতে মার্ক প্রচন্ড অগোছালো হ্ওয়ার কারণ হলো ছোটবেলা থেকে তার ন্যানি ছিল। ফলে নিজেই কিছু করে না।কোক বা বিয়ার খাবার পর ক্যানটি কোন নির্দিষ্ট জায়গায় রাখার কথা মার্ক ভাবে না। সে সেটি যেকোন স্থানে রাখে এবং তারপর সেটির কথা ভুলে যায়। ফলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে এইচ৩৩ এর অবস্থা হলো দেখার মতো। মাঝে মধ্যে মস্কোভিচের বান্ধবী প্রচন্ড রেগে তাদের রুম পরিস্কার করে দিয়ে যায়!
মাসখানেকের মধ্যে মার্ক তার প্রথম প্রজেক্টে হাত দেয়। প্রজেক্টটি খুব সহজ। টপোলজি ক্লাশে আমার পাশে যদি কোন সুন্দরী মেয়ে বসে, তাহলে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে পরের সেমিস্টারে সে কোন কোন সাবজেক্ট নেবে। তাহলে আমিও সে কোর্স রেজিস্টার করতে পারি।
মার্কের প্রথম প্রজেক্ট, কোর্স ম্যাচ ঠিক এই কাজটা করেছে।কোন শিক্ষার্থী কোন কোর্স রেজিস্টার করেছে যেমন জানা যায় তেমনি কোন কোর্সে কে কে আছে সেটাও যায়। জানা কথা, প্রজেক্টটি দারুন ভাবে সফল হবে।
মার্ক তার পরের প্রজেস্টটির প্রেরণা পেয়েছে সম্পূর্ণ অন্য জায়গা থেকে। টি-শার্ট পড়া কিছুটা অন্তর্মূখী কিন্তু মুখের কাছে সবসময় হাসি ধরে রাখা মার্ক কিন্তু মেয়ে মহলে খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু, সবকাল তো আর এক যায় না?
কাজে তাকেও কারো না কারো কাছে হারতে হয়। এরকম একবার তার মনে হল এমন একটা সফটওয়্যার বানাতে হবে যা কী না নির্দিষ্ট কোন লোককে কোন জন্তু জানোয়ারের সঙ্গে তুলনা করে রেটিং দেবে। যে বেশি রেটিং সে পরের ধাপে যাবে আরো হট কারো সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে। বিল প্রথম থেকে বললো জন্তু জানোয়ার আমদানীর দরকার কি? বরং দুই জন মানুষের মধ্যে প্রতিযোগিতা হোক। সবাই রেংকিং করুক। কিন্তু কলেজের সবার ছবি কোথায় পাওয়া যায়?
মার্কের মনে পড়লো প্রথম দিন, অরিয়েন্টশনের সময় হাউসের ক্যামেরাম্যান সবার ছবি তোলে। সেগুলো রাখা হয় হাউসের ফেসবুকে। মার্ক শুরু করলো সেগুলোর ডিজিটাল কপি সংগ্রহ। নিজের হাউসতো হলো? বাকী গুলো।
হার্বার্ডের ১২টি হাউসের ৯টির ফেসবুকের সব ফেসের ছবি যোগাড় করা হলো ২ পদ্ধতিতে – হ্যাকিং আর অন্যদের পাসওয়ার্ড যোগাড় করে।
তো শুরু হলো ফেসমেশ, একটি ওযেবসাইট যার হোমপেজে সবা্ইকে উদ্ভুত করা হলো কে হট সেটা বের করতে। মার্কের ল্যাপটপে সিস্টেম রেডি হলো ২ নভেম্বর বিকেলে। “টেস্ট করা আর সাজেশন দেওয়ার জন্য’ মার্ক তার কয়েকজন বন্ধৃকে্ মেইল করে জানালো। এই টেস্টাররা তাদের বন্ধুদের জানিয়ে দিল আর সঙ্গে সঙ্গে সেটা হয়ে গেল “আন্ডারগ্রাউন্ড হিট”। মার্কের রুমের পাশের ঘরের একটি ছেলে প্রথম ঘন্টার মধ্যে শীর্ষ স্থানে চলে আসলো। কাজে সে তাড়াতাড়ি তার বন্ধুদের জনালো। রাত দশটায় মার্ক যখন তার রুমে ফিরে আসলো তখন তো ল্যাপটপের ভাস্থা কাহিল। কারণ ব্যাপক হিট হচ্ছে।
সবকিছু ভাল হয় না।মেয়েদের মহলে ব্যাপারটি জানাজানি হতে বেশি দেরী হলো না। দুটি সংগঠন দ্রুত এই সাইটের বিরুদ্ধে বর্ণ বিদ্বেষের অভিযোগ উত্থাপন করলো। টনক নড়লো কর্তৃপক্ষের। রাত ১০.৩০ মিনিটে মার্কের ল্যাপটপের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হল নেটওয়ার্ক থেকে।
ততোক্ষনে ৪৫০ শিক্ষার্থী ২২ হাজার জোড়া ছবির তুলনা করে ফেলেছে!
ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে যেতে হল মার্ককে। তবে, সে অন্য প্রসঙ্গ।
কিন্তু কোর্সম্যাচ আর ফেসমেশ দিয়ে ততক্ষণে তৈরি হয়ে গেছে ভবিষ্যতের দুনিয়া কাপানোর ভিত।