৭০০ কোটি টাকার ডোমেইন নাম!!!
বাংলাদেশে যখন ডট বিডি ডোমেইন চালু হয়, এটির দায়িত্ব দেওয়া হয় বিটিটিবিকে (এখনকার বিটিসিএল)। নিয়মটা হয় এরকম- আপনি মগবাজারে গিয়ে একটা দরখাস্ত করবেন। ওনারা আপনাকে একটা ডিমান্ড নোট ইস্যু করবেন। আপনি টাকা জমা দিলে ওনারা আপনাকে ডোমেইন দেবে। সেই সময় অনেকেই ইন্টারনেট ডোমেইন কেন কাগজে কলমে কিনতে হবে এটা নিয়ে অনেক আলোচনা করেছেন। আমি নিজেও এরকম আলোচনায় নিজেকে যুক্ত করেছি। শুধু matholympiad.org.bd এই ডোমেইনটা কিনেছিলাম। মাথায়ও আসেনি যে এটা নিয়ে একটা বাণিজ্য হতে পারে। কিন্তু আমরা যখন এসব নিয়ে ভাবছি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান (এখন ইইই) বিভাগের একজন ছাত্র অন্যকিছু ভেবেছে। একদিন সকালে মুগদা থেকে মগবাজার গিয়ে সে কিনে নিয়েছে google.com.bd। অনেকেই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে। কিন্তু গুগল (google.com) যখন বাংলাদেশে ডোমেইন কিনতে আসলো তখন দেখা গেল তাদের কাঙ্খিত ডোমেইন আর বিটিটিবির হাতে নেই। বাধ্য হয়ে তারা ঢাবির ঐ ছাত্রের কাছ থেকে ঐ ডোমেইনটা কিনে নয়। সেই সময় তারা বাংলাদেশী মুদ্রায় লক্ষাধিক টাকা দিয়েছে!
বাংলাদেশে ডোমেইন নেম বেচা কেনার এটাই সম্ভবত সবচেয়ে পুরানো ঘটনা। এর পরে আরও বেশ কিছু ডোমেইন বেচা কেনা হয়েছে। এর মধ্যে আমার জানামতে chakri.com কেনা হয়েছে ১৪ লক্ষ টাকায়। সেটাই মনে হয় সবচেয়ে বেশি। এখন আমি শুনেছি বিটিসিএণ কিছু ডোমেইন যে কাউকে কিনতে দেয় না যদিও বিশ্বব্যাপী ডোমেইন সংরক্ষনের কনো নিয়ম নেই। নিয়ম নেই বলেই ব্যাপকমাত্রায় ডোমেইনের বেচাকেনা হয়েছে।
এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দামে ডোমেইন বেচা কেনার কয়েকটা উদাহরণ দিলাম এখানে।
১. LASVEGAS.COM – ৯০ মিলিয়ন ডলার (৭৫০ কোটি টাকা প্রায়)। vegas.com নামে একটা ট্রাভেল এজেন্ট কোম্পানি এই কাজটা করেছে।
২.CARINSURANCE.COM – ৪৯.৭ মিলিয়ন ডলার। – এটি একটি বীমা সংক্রান্ত ডোমেইন। ক্রেতা বীমা কোম্পানি নাম কুইন স্ট্রিট ।
৩. INSURANCE.COM – ৩৫.৬ মিলিয়ন ডলার। এটাও কুইন স্ট্রিট কিনেছে।
৪. PRIVATEJET.COM – ৩০.১৮ মিলিয়ন ডলার। এটা ট্রাভেল কোম্পানি এটা কিনে।
৫. VOICE.COM – ৩০ মিলিয়ন ডলার। ব্লকচেইন ভিত্তিক একটা নতুন স্যোসাল সাইটের জন্য ২০১৯ সালে এই ডোমেইন নেমটা কেনা হয়েছে।
উইকিপিডিয়াতে এরকম আরও বেচাকেনার হিসেব দেখতে পারবেন।
যে কোন নতুন প্রযুক্তি, প্ল্যাটফর্ম কিংবা ধারণা প্রকৃত পক্ষে বুদ্ধিমান ও চৌকসদের জন্য নানারকম সুযোগ তৈরি করে। ডোমেইন নেমের ব্যবসাটাও সেরকম। যারা এই বিষয়গুলোতে নিজেদের বুদ্ধি ও মেধাকে কাজে লাগাতে পারে তারা ঠিকই নিজেদের ব্যবসার আইডিয়া বের করে ফেলে।
আমি যখন বুয়েটে পড়তাম তখন আমাদের এক বন্ধু নিয়মিত টেলিফোনের জন্য দরখাস্ত করতো। পাস করার পর দেখা গেল তার বেশ কয়েকটা টেলিফোনের ডিমান্ড নোট ম্যাচিউর হয়েছে। সে সময় একটি টিএন্ডটি ফোন পাওয়া ছিল ব্যবসায়ীদের জন্য বিশাল ব্যাপার। তারা ঠিকই তার কাছ থেকে ভাল দামে কয়েকটা ফোন কিনে নেয়।
ওয়েবসাইট চালু হওয়ার পর এরকম একটা ওয়েবসাইট বানানো হয় যার নাম ছিল মিলিয়নডলার ডট কম। ইংলন্ডের এক ছাত্র বুদ্ধি খাটিয়ে সেই সাইট বিক্রি করে মিলিয়নডলারের বেশি আয় করে! মিলিয়ন ডলার ডট কমের গল্পটা আমার বিলিয়ন ডলার স্টার্টআপ বইতে পাদটিকা হিসেবে দিয়েছি। বোঝানোর জন্য যে, যারা বুদ্ধিমান এাং যারা সামনের দিন দেখতে পারে তারা “ঢেউ গুনেও” টাকা কামাতে পারে।
বিলিয়ন ডলার স্টার্টআপে যে ১৩টি গল্প আছে (এটি সহ) সবগুলোতে এরকম ধারণা পাওয়া যায়। অনেকগুলো ধারণা এতো সহজ যে, মনে হয় না এটা একটা বিলিয়ন ডলারের আইডিয়া। কিন্তু বাস্তবায়নের পর বোঝা যায় যে, এটা কত মূল্যবান ছিল।
বিলিয়ন ডলার স্টার্টআপ কিনতে চাইলে –