ওঁরা চাকরি খোঁজে না
প্রায় একমাস দেশে ছিলাম না। এমনকী ইন্টারনেট থেকেও দূরে ছিলাম। হয়তো অনেক খবরই পাইনি। তবে, অনেক কিছু মিস করেছি এমনটা ভাবছি না। যে কাজে গিয়েছিলাম সেটাই মন দিয়ে করার চেষ্টা করেছি তবে হয়েছে কি না জানি না।
যাহোক আস্তে আস্তে পুরানো জীবনে ফেরৎ যাওয়ার চেষ্টা শুরু করেছি। ফিরে এসে একটা বিষয় দেখলাম যা আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্য হয়তো ভাল খবর। প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার – প্রধান দুইটি দৈনিকই উদ্যোক্তাদের বিষয়ে আগ্রহী হয়েছে মনে হচ্ছে। ২৪ অক্টোবর, শুক্রবার প্রথম আলোর নতুন সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র চাকরি বাকরিতে বিপ্লব ঘোষ ও তার ই-কুরিয়ার নিয়ে লেখা ছাপা হয়েছে।
তবে, ডেইলি স্টার মনে হয় তাদের ভূমিকা আরো প্রসারিত করেছে। কারণ ২৫ তারিখ প্রথম পৃষ্ঠায় এম এ হাশেমের বেতের প্রতিষ্ঠান নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, অনেকটা লিড স্টোরির মতন। প্রথম পাতার বড় ছবিটাও তাঁর প্রতিষ্ঠানের।
এম এ হাশেম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করার পর অর্থনীতিতে মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে, ভর্তি না হয়ে চলে এসেছিলেন ঢাকায়, বেতের একটা কিছু করবেন এই ভেবে। তাঁর বাকী তিনভাই সরকারি চাকরি করেন। কাজে কেও তাঁকে উৎসাহ দেয় নাই। এক বন্ধুকে (এখন তাঁর ভগ্নিপতি এবং আলাদাভাবে ব্যবসা করেন) সঙ্গে নিয়ে মহাখালীতে একটি শো-রুম দিয়ে শুরু করেন বেতের আসবাব পত্র বানানো ও বিপননের কাজ। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তাঁর বনানীতে দুইটি শো’রুম এবং টার্নওভার ৪০-৫০ লক্ষ টাকা। চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে ফিনিশড বেতের অভাব। এটা আনতে হয় বিদেশ থেকে। তাতে দাম পড়ে বেশি। দেশীয় বেতের কোয়ালিটির সমস্যা আছে। মনে হয় এখানে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে।
ঠিক একই রকম অবস্থা কিন্তু চিপসের বেলায়। কয়েক বছর আগে আমাদের প্রায় ১৬০০ কোটি টাকার আলু নস্ট হয়েছে। কিন্তু একই বছরে প্রায় শতকোটি টাকার আলু আমদানী করতে হয়েছে চিপস আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই-এর জন্য। চিপসের আলুর জন্য যা লাগে সেটা আমাদের আলুর মধ্যে নাকি নাই। এটা নিয়ে কি কাজ করা যায় না?
আজকে ডেইলি স্টারের বিজনেজ পাতায় ছাপা হয়েছে ব্রেন স্টেশন২৩ এর কথা। এটি একটি সফটওয়্যার কোম্পানি। চাকরি দিয়েছে ১০০ জনের আর কোম্পানির ভ্যালুয়েশন ২০ কোটি টাকা। গেল বছররে রাজস্ব ছিল আট কোটি টাকা। ২০১৩ সালে এইচএসবিসি পুরস্কারও পেয়েছে। এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও কবীর প্রকৌশলী তবে কখনো চাকরি করার আগ্রহ ছিল না। ইচ্ছে ছিল দেশের জন্য অবদান রাখবে লোককে চাকরি দিয়ে। সেই কাজটাই সে করেছে।২০০৬ সালে খুবই কম মূলধন নিয়ে শুরুর কবীরের। কিন্তু প্রমাণ করেছেন একাগ্রতা ও নিষ্ঠা থাকলে দক্ষতা অনেকদূর এগিয়ে নিতে পারে। ৯৫২ বিলিয়ন ডলারের আউটসোর্সিং ব্যবসার ১ বিলিয়নও আমরা এখনো ঘরে আনতে পারি নাই। অন্যদিকে আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুল বিদেশী সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। কবীরের ইচ্ছে এই দেশের জন্যই ভাল মানের সফটওয়্যার বানানো যাতে কেবল বৈদেশিক মুদ্রা আনার কথা না ভেবে আমারা এর সাশ্রয়ও করতে পারি।
কবীরের অনেক বড় স্বপ্ন আছে। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য লড়ে যাচ্ছে।
প্রথম আলোর চাকরিবাকরি পাতায় ছাপা হয়েছে আমাদের বিপ্লব ও তাঁর ই-কুরিয়ারের কথা। বিপ্লব এরই মধ্যে ২২ জনের চাকরি দিয়েছে। কাজ করছে কুরিয়ার সার্ভিস নিয়ে। কুরিয়ার ব্যবসায় এনেছে নতুনত্ব। ই-কুরিয়ার সার্ভিসটি মুলত সাইকেলের সাহায্যে পরিচালনা করা হয়। ঢাকা শহরে সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট। আর সাইকেলে কোনো জ্বালানি খরচ লাগে না। সাইকেলের সুবিধা নানামুখী। এই জন্য ই-কুরিয়ারের বাহন হিসেবে সাইকেলকে বেছে নিয়েছে। বর্তমানে ৫০-৬০টি ই-কর্মাস সাইটের ই-কুরিয়ার সেবা দিচ্ছে। বর্তমানে শুধু ঢাকা শহরেই কাজ করছেন। ২০১৫ সালের মধ্যে সারা দেশে ই-কুরিয়ার সেবা পৌঁছে দিতে দেওয়াই বিপ্লবের লক্ষ্য।
বিপ্লব, কবীর আর হাশেমের মত উদ্যোক্তারাই দেশের ৯৮% কর্মসংস্থান তৈরি করে যদিও বেশিরভাগ মিডিয়াতে তারা অনুপস্থিত থাকে। হয়তোবা তাদের কর্পোরেট চাকচিক্য নাই। আশাকরা যায়, ডেইলি স্টার আর প্রথম আলোর নবীন উদ্যোক্তাদের পাশে দাড়ানোটা অব্যাহত থাকবে।