চাকরি চাই-৩ : নিজের সিভি নিজে বানাও, কাট-পেস্টে সর্বনাশ!
কিছুদিন আগে আমাদের অফিসে লোক নেওয়ার জন্য দরখাস্ত আহবান করে আর সেগুলো যাচাই করার কাজ করতে হয়েছে আমাকে। সেখানে আমি কয়েকটা মজার জিনিষ দেখেছি যেগুলোকে সংক্ষেপে এভাবে লিপিবদ্ধ করা যায় –
১. শতকরা ৯০ ভাগের ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ নামে যে অংশটা ছিল সেটা মোটামুটি ৪/৫টার সমন্বয়। মানে ৪/৫টা বাক্যই সবগুলোতে ছিল। আমি পরে জেনেছি এগুলো ইন্টারনেট থেকে নেওয়া বিভিন্ন টেমপ্লেটে আগে থেকে থাকে। যেমন –
• To work with a well-reputed organization in the field of [Name of the field] and to establish myself as a specialist through practical and professional experiences.
• To work in a competitive and diversified environment where opportunities are available to explore my creativity as an individual as well as a member of a team. I believe creative implementation of learning can make differences and I am positive that through my competencies I would be able to make an upbeat difference wherever I belong.
• To build up my career in a challenging working atmosphere for utilizing my full potentialities, creative ideas, efforts and honesty I will perform the best and appropriate action where will get the opportunity.
আমাকে প্রায় হাজার খানেক সিভি পড়তে হয়েছে। কাজে কিছুক্ষণ পরই এগুলো আমার মুখস্ত হয়ে গেছে এবং প্রথম ২/৩ টা শব্দ পড়লেই আমি বাকীটা বুঝে ফেলতাম!
২. বেশিরভাগই তার শিক্ষা জীবনের কোন একটি বিশেষ কাজের তেমন কোন বর্ণণা দেয়নি। আমি তো জানি গ্র্যাজুয়েশন বা মাস্টার্স করতে হলে একটা কোন প্রজেক্ট, থিসিস কিংবা নিদেন পক্ষে একটা বড় এসাইমেন্টতো করতে হয়। সেটার যদি কোন বর্নণা না থাকে তাহলে কেমনে হাজার জন থেকে তোমার সিভিটা আলাদা হবে? আমি যেমন খুঁজেছি শিক্ষা সংক্রান্ত কোন কাজ সে করেছে কী না। কিন্তু সিভি পড়ে সেটা বের করা আমার জন্য কঠিন হয়েছে। ব্যপক বিরক্তও হয়েছি। কিন্তু সিভি পড়া তো বন্ধ করতে পারি নাই।
৩. সবচেয়ে মজার দুইটা সিভি পেয়েছে যেখানে দুইজনের নাম কেবল ভিন্ন, বাকী সকল তথ্যই এক। এমন কী যোগাযোগের টেলিফোন নম্বরও। মানে আর একজনের সিভি থেকে কাট-পেস্ট করতে গিয়ে তাড়াহুড়ায় নিজের নামটা ছাড়া আর কিছু পরিবর্তন করার সময় পায় নি।
৪. অধিকাংশ সিভির সঙ্গে কোন কভার লেটার ছিল না। কভার লেটার যদি চাওয়া হয় তাহলে কভার লেটার দিতে হবে। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম যারা কভার লেটার দেয় নাই তাদেরকে পরীক্ষায় ডাকবোই না। পরে অবশ্য সেটা করি নাই কারণ আমি সিজনড এইচআরের লোক নই। সিজনড এইচ আরের লোকেরা কিন্তু এগুলোও বিবেচনা করে। কারণ সিভি পড়ার প্রথম উদ্দেশ্য হচ্ছে বাদ দেওয়া যাতে সংখ্যা কমানো যায়। কেন কভার লেটার দেয়নি এটা জানতে গিয়ে জানলাম আজকাল অনেক জায়গায় অনলাইনে দরখাস্ত করতে হয়। সেখানে কভার লেটারের বালাই থাকে না কারণ একটা ফরম পূরণ করতে হয়। কাজে কভার লেটারের দরকার আর নাই।
এই চারটা অবজারভেশন থেকে আমার মনে হয়েছে আমাদের চাকরি প্রত্যাশীদের মধ্যে এক ধরণের হতাশা মনে হয় চলে এসেছে। অনেকে মনে করে, লোক মনে হয় ঠিক করে রেখেছে, আমি একটা দিলাম আর কি। আমি জানি অনেক জায়গাতেই এই কাজটা হয়। কিন্তু সবজায়গাতে তো আর হয় না। এই চিন্তাটা যদি বোধের মধ্যে ঢুকে যায় যে, আমি সিভি দেওয়ার জন্য দিচ্ছি, তাহলে সে চাকরি কখনোই হবে না।
দেশে এখন কর্মসংস্থানের ম্যালা সংকট। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বাজার। কাজে তোমাকে হতে হবে চৌকস, টু-দি-পয়েন্ট। অথচ দেখা যাচ্ছে, ১৬ বছরের শিক্ষাজীবনের নির্যাসটুকু তোমার যেখানে সলিডলি দেখানো দরকার সেখানে তুমি দেখাতে পারছো না। তাহলে কি আর চাকরি হবে?
প্রশ্ন হচ্ছে, এই থেকে উত্তরণের উপায় কী?
আমি এইচআর বিশেষজ্ঞ নই। তবুও আমি আমার মতো করে এই সিরিজে এই চারটি পর্যবেক্ষণ থেকে উত্তরণের কিছু সাজেশন দেবো আগামীতে। আর ইচ্ছা আছে এই বিষয়গুলো নিয়ে কয়েকজন এইচআর বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলার। দেখা যাক। আলসেমির জন্য কতটুকু পারা যায়।
আগ্রহীরা এই সংক্রান্ত আগের দুইটা লেখা পড়তে পারে।
সাধারণভাবে আজ কেবল এটুকু বলি যে, সিভি আসলে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করতে হয়, তৈরি করতে হয়। সিভি আসলে লেখার নয়।
সবার জন্য শুভ কামনা।