চাকরি চাই-২ : লিখিত পরীক্ষার আগে
– আপনার সম্পর্কে বলুন সংক্ষেপে।
– আমার নাম সলিমুদ্দিন। আমি অমুক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তমুক বিষয়ে এতো সিজিপিএ নিয়ে পাশ করেছি। আমরা দুই ভাই। আমি সবার বড়।
ইন্টারভিউ বোর্ডে কেবল এটুকু শুনে একজন ইন্টারভিউয়ার কি খুশী হোন? আমার মনে হয় না।
চাকরির সোনার হরিণ খুব সহজে ধরা দেয় না। এজন্য প্রচুর কাঠ-খড় পোড়াতে হয়। এবং কষ্টও করতে হয়। আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা নিয়ে এর আগে আবেদনের আগে শিরোনামে একটা লেখা লিখেছিরাম। আজকের লেখায় লিকিত পরীক্ষা আর ইন্টারভিউ-এর একটা অংশ কভার করার চেষ্টা করবো। আমার আলোচনার মূল সুর কিন্তু বেসরকারি চাকরি। কাজে সরকারি চাকরির সঙ্গে এটিকে মেলানোর দরকার নাই।
বেসরকারি চাকরিতে লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাক পাওয়াটাই একটা বড় ব্যাপার। ২/৩টা পদের জন্য হাজারের বেশি আবেদন সেখানে পড়ে। একটি আবেদনপত্রকে গড়ে ২/৩ মিনিটের বেশি সেখানে দেখা হয় না। কাজে এ থেকে যারা লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হয় তাদেরকে অভিনন্দনতো জানাতেই হয়।
প্রশ্ন হচ্ছে যারা লিখতি পরীক্ষা নেয় তাদের প্রত্যাশা কী থাকে?
১. কিছু সাধারণ ব্যাপার
২. যে পদের জন্য নেওয়া হবে সে বিষয়ক কিছু সাধারণ বিষয় এবং কিছু স্পেসিপিক বিষয়
৩. যে প্রতিষ্ঠানে নিযোগ করা হবে সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছু জানে কী না।
সাধারণত এই তিনটা বিষয়কে মাথায় রেখে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করা হয়। উদ্দেশ্য কিন্তু মহান – আরো কিছুকে বাদ দেওয়া।
তো, লিখিত পরীক্ষায় ভাল করার উপায় কী-
১. বিজ্ঞাপনটা দেখা – যে বিজ্ঞাপন দেখে দরখাস্ত করা হয়, শতকরা ৮০ জনই সেটি আর সংরক্ষণ করে না। ফলে, পদের নাম (যা কীনা আমন্ত্রণপত্র/এডমিট কার্ডে লেখা থাকে) ছাড়া আর কিছুই মনে থাকে না। যদিও অনেকেই বিজ্ঞাপন দেখেই আবেদন করে। কিন্তু গড়ে ২-৩ মাস পরে যেহেতু লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয় তাই সে সময় পর্যন্ত ঐ বিজ্ঞাপনের কথা মনে থাকে না। এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় হল সেই আবেদনের প্রিন্ট কপি একটা ফাইলে রেখে দেওয়া। সচরাচর বিজ্ঞাপনে যোগ্যতা, কাজের বর্ণণা থাকে। কাজের বর্ণণাটা দেখলেই কিন্তু ঐ কাজ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। যারা আগে কখনো চাকরি করেনি, তাদের জন্য এটা দরকার। আবেদন করার পর, তাই, সম্ভব হলে ঐ পদ বা সিমিলার পদের কাজ সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া দরকার। ধরাযাক, তুমি একটা ব্যাংকের মার্কেটিং বিভাগের কোন পদের জন্য দরখাস্ত করেছো। তুমাকে তাহলে জানতে হবে ব্যাংকের মার্কেটিং-এর ব্যাপার মানে কী? ঐ বিভাগের লোকেরা কী কী করতে পারে। কিছু বর্ণণাতো পাওয়া যাবেই। শুনতে খারাপ লাগলেও ওটা ঠিক যে, লিখিত পরীক্ষায় তখন মার্কেটিং-এর বেসিক একটা/দুইটা প্রশ্ন থাকতে পারে। কাজে নিজের পড়ালেখাকেও ঝালিয়ে নিতে হবে।
২. নিযোগকারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে : এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।তুমি বাংলাদেশ ব্যাংকের সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিয়ার পদে আবেদন করেছো। প্রশ্নকর্তা যদি আশা করেন যে, তুমি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট, ফেজবুক পেজের লিংক বা টুইটারের হ্যান্ডেল জানবে তাহলে কী তাকে দোষ দেওয়া যাবে। কারণ ওনার দরকার সিরিয়াস ক্যান্ডিডেট। যে কীনা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে কখনো ঢু মারেনি এমনকী ব্যাংকের ফেসবুক পেজের ঠিকানা জানে না তাকে দিয়ে ওনার কী লাভ? এই জন্য নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আগেভাগে জেনে নেওয়া দরকার। লিখিত পরীক্ষায় এই সংক্রান্ত প্রশ্ন থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কাজে লিখতি পরীক্ষার আগে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট, স্যোসাল মিডিয়া পেজ সমবটাতে ঘুরে বেড়ানো দরকার। সম্ভব হলে আবেদনের পরপরই ঐ প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেগে লাইক দিয়ে রাখা যায়। সেক্ষেত্রে নিয়মিত আপডেট পাওয়া যাবে যা, বলা যায় না, লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষায় কাজে আসবে। আমার সাম্প্তিক অভিজ্ঞতা বলে, মাত্র ৯-১০ শতাংশ আবেদনকারী এই কাজটা করে।এবং লিখিত পরীক্ষাতে এরা এগিয়ে থাকে।
৩. হবে দরে বিষয় : পদ অনুসারে কিছু সাধারণ জ্ঞান টাইপের প্রশ্ন, একটা বাংলা/ইংরেজি রচনা ইত্যাদি লিখিত পরীক্ষাতে থাকে। এগুলোর জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়া কঠিন। এই বিষয়গুলোকে নিজের কাজের একটা অংশ করে ফেলতে হবে। যেমন নিয়মিত খবরের কাগজ পড়া, মাঝে মধ্যে কোন বিষয়ে নিজে নিজে একটা ইংরেজি নিবন্ধ লেখা বা রচনা লেখা। এতে চর্চ্চাটা বাড়ে এবং পরীক্ষাতে সেটা কাজে লাগে।
লিখিত পরীক্ষাতে আরো কিছু ছোট-খাটো বিষয় থাকে সেগুলো নিয়ে অন্যত্র আলাপ করা যাবে।
আর ইন্টারভিউ কিন্তু শুরু হয় এই লেখার শুরুতে দেওয়া প্রশ্ন দিয়ে। সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আেগ নিচের বিষয়গুলো মাথায় রখলে ভাল-
ক. তোমার রিজিউমের একটা কপি কিন্তু ওনাদের সামনে আছে। তবে সম্ভাবনা হচ্ছে এইচআরের লোকটা ছাড়া বাকীরা কেও তোমার জীবন বৃত্তান্ত পুরোটা মনে রাখে নি।
খ. তোমার লিখতি পরীক্ষার ফলাফলও ওনাদের সামনে আছে
কাজে নিজেকে উপস্থাপনের সময় এমন কিছু বলতে হবে যাতে তারা তোমার ব্যাপারে আগ্রহী হয়। এটি অনেকটা তোমার হিস্ট্রি আর ইন্টারেস্টের সমন্বয়। প্রশ্নকর্তা দেখতে চান তোমার অনেকগুলো কাজের মধ্যে নিজে তুমি কোনটাকে প্রেফার কর। কারণ বলার সময়ে সেইটাই সামনে চলে আসে। আমাকে কেও এই প্রশ্ন করলে যেমন আমি গণিত অলিম্পিয়াডের কথা আগে বলি। তারপর অন্যগুলো। কাজে এই প্রশ্নের জবাবটা তোমাকে সেইভাবে সাজাতে হবে। তুমি নিশ্চয়ই তোমার পুরো ইতিহাস বলতে পারবে না। এখানে তোমাকে সেই কথাগুলো বলতে হবে যা কী না নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এলাইন হয়। যেমন তমু যদি সাংবাদিকতার চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দাও আর যদি তুমি ক্যাম্পাসে প্রতিনিধির কাজ করে থাকো তাহলে সেটাকে হাইলাইট করো। মোদ্দাকথা এমন একটা বাক্য তোমাকে বলতে হবে যা তোমার প্রতি প্রশ্নকর্তার আকর্ষন ধরে রাখবে।
এই প্রশ্নটা আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ এই প্রশ্নের উত্তরের ওপরই নির্ভর করে আসলে তোমাকে ওনারা কনো দিকে নেবেন। তোমার উত্তরের একটা অংশ নিয়েই সাধারণত প্রশ্নকর্তারা আগাতে ভালবাসেন।