ফের ইমোশনাল মার্কেটিং : ইমোশনের শক্তি

Spread the love

Marketing is no longer about the stuff that you make but about the stories you tell. Seth Godin

২০০৯ সালে রব ওয়াকার ও জসুয়া গ্লেন নিউ ইয়র্ক শহরে ভাঙ্গারীর দোকানগুলোতে ঢু মারতে শুরু করেন। তাদের উদ্দেশ্য মহৎ – কিছু বাতিল, লক্কর-ঝক্কর মালামাল যোগাড় করা যা তারা  ইন্টারনেটের নিলামের সাইট ইবে-তে বিক্রি করতে পারবেন।

১২৯ ডলার খরচ করে ওয়াকার ও গ্লেন মোট ১০০ আইটেম যোগাড় করেন। এসব বাতিলের বাতিল মালের মধ্যে ছিল প্লাস্টিকের কলা, রুশ ছোট পুতুল, গ্লোব পেপার ওয়েট, ছোট গ্লাস, বিড়ালের ছবি ওয়ালা ছোট সসপ্যান ইত্যাদি। মানে সব ছোট-খাটো বাতিল ফেলে দেওয়া গৃহস্থালী জিনিষ। গড়ে ১.২৯ ডলার দিয়ে কিনলেও তাদের ধারণা ছিল এগুলো আরও বেশি দামে ইবে-তে বিক্রি করা সম্ভব।

না, ওয়াকার বা গ্লেনের কেউ কিন্তু উদ্যোক্তা নন। তারা দুজন আসলে লেখক ও সাংবাদিক। তাদের লক্ষ্য হলো বেচাবিক্রিতে স্টোরিটেলিং বা গল্পের ইমপ্যাক্ট দেখা।

বাতিল লক্কর-ঝক্কর বাতিল মালামালের একটি নেপথ্য কাহিনী যোগ করলে সেটির দাম কী বাড়ে? আর যদি বাড়ে তাহলে কতো বেশিই বা তারা এরকম ইমোশনাল গল্পের জন্য খরচ করবেন?

এরপর তারা ঠিক করলেন তাদের ব্যাগ ভর্তি প্রত্যেকটা আইটেমর জন্য তারা একটি করে গল্প বানাবেন। অন্যান্য লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। অনেকেই তাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন। এবং এভাবে তারা ১০০টি আইটেমের জন্য ১০০টি ছোট গল্প লিখে ফেলেন। বেশিরভাগ গল্পেই সম্ভাব্য ক্রেতাদের আবেগের ব্যাপারটাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

এরপর তারা ঐ ১০০টি আইটেম লিস্ট করেন ইবে-তে। আর প্রত্যেকটি আইটেমের বর্ণনাতে ছোট গল্পটি জুড়ে দেন।

আচ্ছা মাত্র ১ ডলারে কেনা একটা বাতিল মালের দাম ইবে-তে কতো পর্যন্ত হতে পারে?

গ্লেন আর ওয়াকারের বেলায় এটি হলো মাত্র ৭৬০০%!

দিনশেষে তারা ১২৯ ডলারের বাতিল, পরিত্যক্ত মালামাল মাত্র ৩৬১২.৫১ ডলারে বিক্রি করেন!! আবার পড়েন মাত্র তিন হাজার ৬১২.৫১ ডলার!!!

যদিও ওয়াকার ও গ্লেনের ধারণা ছিল তারা গল্পের কারণে ভাল দামেই বেচতে পারবেন। কিন্তু এতোটা তারা নিজেরাই ভাবেননি।

  • ৩ ডলারে কেনা একটি রুশ পুতুল বিক্রি হয়েছে ১৯৩.৫০ ডলারে (৬৩৩৩% বৃদ্ধি)
  • ১ ডলারের একটি খাটো গ্লাস বিক্রি করে পাওযা গেছে ৭৬ ডলার (৭৬০০% বৃদ্ধি)
  • ২ ডলারের গরুমুখো দানীর দাম উঠেছে ৬২ ডলার (৩০০০% বৃদ্ধি)

এই এক্সপেরিমেন্টটি মার্কেটিং ইতিহাসে ইনসিগনিফিকেন্ট অবজেক্ট এক্সপেরিমেন্ট নামে পরিচিত। প্রায় সকল মহলের দৃষ্টি কাড়ে। ব্যাপার যে মোটেই কাকতালীয় নয় এটি প্রমাণ করার জন্য ওয়াকার ও গ্লেন ভিন্ন ধরনের ১৯৯টি আইটেম নিয়ে একাধিকবার একই এক্সপেরিমেন্ট করেন। প্রতিবারই একই রকম ফলাফল পাওয়া গেছে। এ থেকে বেচা-বিক্রিতে গল্প ও আবেগের সম্পর্কটা দারুণভাবে প্রমাণিত হয়।

লেখকদ্বয় উপসংহারে বলেছেন – Stories are such a powerful driver of emotional value that their effect on any given objects subjective value can actually be measured objectively.

আবেগীয় গল্পের সঙ্গে বিপণন ও বেচাবিক্রির সসম্পর্ক এতোই প্রবল যে যারা ইমোশনাল মার্কেটিং ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেন তারা নিজেদের কাস্টোমারদের আজীবন ধরে রাখতে পারেন।কারণ ক্রেতারা কিন্তু সব সময় ইমোশনালি সিদ্ধান্ত নেন। ইমোশন প্রায়শ যুক্ত-তর্কের ওপরে উঠে কেনার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। এই জন্যই তো সেথ গোডিন বলছেন, Marketing is no longer about the stuff that you make but about the stories you tell.

এই এক্সপেরিমেন্ট থেকে আমাদের টেক-অ্যা ওয়ে কী?

  • গল্পের ভ্যালু এডিশন নেহায়েৎ কম নয়
  • মানুষ কেনা-কাটার সময় নিজের ইমোশনকে সবচেয়ে বেশি দাম দেয়। কাজে বিক্রি করতে চাইলে শুধু তথ্য-পরিসংখ্যানে জোর দেওয়ার পাশাপাশি আবেগীয় গল্প বলুন
  • আপনার নিজের বা ব্রান্ডের একটা গল্প আছে। ঠিকঠাক মতো লিখতে পারলে সেটাই একটা বড়ো মার্কেটিং টুল হবে আপনার জন্য।
  • গল্প বলার জন্য আপনাকে হুমায়ূণ আহমেদ হতে হবে না। গল্প বলাটা আমাদের ডিএনএ-তে আছে। প্রত্যেকে চাইলেই সেটা করতে পারে।

বছর কয়েক আগে গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং বইটি লেখার পর কয়েকজন উদ্যোক্তার অনুপ্রেরণায় কাস্টোমারকে আজীবন ধরে রাখার উপায়ের কৌশল হিসেবে ইমোশনাল মার্কেটিং বইটি লিখি। এই বইতে ইমোশনকে কীভাবে মার্কেটিং-এ কাজে লাগবতে হয় সেটার বৈজ্ঞানিক ভিত্তিটা প্রথমে আলাপ করেছি। তারপর অজস্র উদাহরণ যোগ করেছি যেন সফল মার্কেটাররা কীভাবে সেটি প্রয়োগ করেছেন সেটা বোঝাতে। যোগ করেছি ছবি বা ভিডিও-র মতো ইমোজিও কীভাবে মানুষকে আবেগ তাড়িত করে। যোগ করেছি কয়েকটি কেস স্টাডি।

যারা ভাবছেন কেমন করে ইমোশনাল মার্কেটিং করবেন তারা এই বইটি দেখতে পারেন। কাজে লাগলেও লাগতে পারে!

হ্যাপি মার্কেটিং
 

 

Leave a Reply