
“When you educate a girl, you educate a nation”
আজ ছিল ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর গার্ল। তেমন কিছু আমি দেখলাম না। নিজেও অনেক ব্যস্ত ছিলাম পারিবারিক কাজে।
রাতে পিসিতে বসে দেখলাম জর্ডানের রানি রানিয়া আবদুল্লাহর টুইট। আমার এই ব্লগের শিরোনাম।
জর্ডানের রানিয়া আবদুল্লাহকে আমি জানি অনকেদিন ধরেই। যদিও কখনো সামনে থেকে দেখিনি। তাঁর কথা প্রথম শুনি সিসকোর একটা প্রোগ্রাম বাংলাদেশে কোঅর্ডিনেট করতে গিয়ে। মেয়েদের জন্য সিসকো নেটওয়ার্ক একাডেমি একটা বৃত্তি দিয়েছিল। তখন জানলাম জর্ডানে ঐ প্রোগ্রামের সমন্বয় করছেন রানি নিজে! রানি তার প্রসাদকে এমনভাবে নেটওয়ার্ক করেছেন যেন লোকে আশে পাশে গেলেই ফ্রি ওয়াই ফাই কানেকশন পায়। (আহারে। আজ কয়েক বছর ধরে গলা ফাটাচ্ছি কিছু ফ্রি ওয়াই ফাই জোনের জন্য। টিএসসির করার পর আর বড় কোনটাই করা গেল না!)
তো, রানিয়া মেয়েদের শিক্ষার জন্য লড়বেন এটাই স্বাভাবিক। তবে, তার টুইট দেখে মনে হল নেপোলিয়নের পর এই প্রথম কেও কত সহজে একটা চমৎকার কথা বললেন। নেপোলিয়ন বলেছিলেন – আমাকে একজন সুমাতা দাও, আমি তোমাদের সুজাতি দেবো। রানিয়া বলেছেন – মেয়েদের শিক্ষিত কর, জাতি শিক্ষিত হবে।

বিশ্বব্যাপী যত অক্ষরজ্ঞানহীন শিশু তার তিনভাগের দুইভাগ কিন্তু মেয়ে। সম্ভবত আমাদেরও একই চিত্র হবে। আজকের দিনে জাতিসংঘ মেয়েদের শিক্ষার জন্য সবাইকে অনুরোধ করে।
আমাদের দেশে আমরা ৩০ সেপ্টেম্বর বিশআ কন্যা শিশু দিবস পালন করি। আজকের দিনটা মনে হয় খেয়াল করি না। করলে ভাল হতো।
আমাদের গণিত অলিম্পিয়াডের কোচ মাহবুব মাইক হাতে নিলে প্রথমেই ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলে – তুমি নিজের জন্য যা চাইবা, বোনের জন্যও তা চাইবা। নাহলে তুমি কিন্ত আর সর্বোত্তম প্রাণী থাকলে না।
আমরা হয়তো অবচেতনভাবে মেয়েদের কথা ভাবি না। যদিও আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী সহ অনেক পদই মেয়েদের দখলে। কিন্তু এখনো আমরা কাজি নজরুলে কথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছি।
এই উপলক্ষে দুইটা ভিডিও রিলিজ হয়েছে। আগ্রহীরা দেখে নিতে পারে।
এটি একটি আহবান
আজ এমন একজনের কথা মনে পড়ছে যিনি রাতের বেলায় সবাই ঘুমিয়ে পড়লে হারিকেনের আলোতে পড়ালেখা করতেন। হারিকেনের আলো যাতে ঘুমন্ত ভাই-এর চোখে আলো না পড়ে সে জন্য একটা কাগজ দিয়ে রাখতো। তৎকালীন মুসলিম সমাজব্যবস্থা অনুসারে রোকেয়া ও তাঁর বোনদের বাইরে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয়নি, তাদেরকে ঘরে আরবী ও উর্দু শেখানো হয়। তবে রোকেয়ার বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের আধুনিকমনস্ক ছিলেন। তিনি রোকেয়া ও করিমুননেসাকে ঘরেই গোপনে বাংলা ও ইংরেজি শেখান।
যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সম্পর্কে বঙ্গের মহিলা কবি গ্রন্থে লিখেছেন, বঙ্গের মহিলা কবিদের মধ্যে মিসেস আর,এস, হোসায়েনের নাম স্মরণীয়। বাঙ্গালাদেশের মুসলমান-নারী-প্রগতির ইতিহাস-লেখক এই নামটিকে কখনো ভুলিতে পারিবেন না। রোকেয়ার জ্ঞানপিপাসা ছিল অসীম। গভীর রাত্রিতে সকলে ঘুমাইলে চুপি চুপি বিছানা ছাড়িয়া বালিকা মোমবাতির আলোকে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার কাছে ইংরাজী ও বাংলায় পাঠ গ্রহণ করিতেন। পদে পদে গঞ্জনা সহিয়াও এভাবে দিনের পর দিন তাঁহার শিক্ষার দ্রুত উন্নতি হইতে লাগিল। কতখানি আগ্রহ ও একাগ্রতা থাকিলে মানুষ শিক্ষার জন্য এরূপ কঠোর সাধনা করিতে পারে তাহা ভাবিবার বিষয়।
কষ্ট করে পড়েছিলেন বলে আজ তিনি আমাদের নারী জাগরনেল অগ্রদূত হয়েছেন। যদিও তাঁর সব স্বপ্ন আমরা এখনো পুরন করতে পারিনি।
রংপুরের বেগম রোকেয়ার কথা বললে আরো একজন মহিয়সী নারীর কথা বলতে হয়। তিনি রংপুরে থাকার সময় সাইকেল চালাতেন শহর জুড়ে, সেও প্রায় অনেক বছর আগে। সাইকেল চালিযে যে শক্তি অর্জন করেছিলেন সেই শক্তি নিয়ে এক কঠিন সময়ে তিনি বাঙ্গালি জাতিকে জাগিয়ে তোলার কাজ করেছিলেন। তিনি দেখে যান নি। কিন্ত যুদ্ধপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে। শেষও হবে একদিন। তিনি জাহানারা ইমাম।
আমাদের বোনদের, মেয়েদের জীবন শিক্ষায় আলোকিত হোক।