সবার জন্য শিক্ষা – সাইফুর-রাজিব-নূরের অদম্য প্রয়াস

Spread the love

10502238_846802335348634_3687923572163591077_nঅদম্য মেধাবীদের গল্প আমরা কমবেশি জানি। প্রতিবছরই এসএসসি পরীক্ষার পর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এদের সাফল্যের খবর ছাপা হয়। শুরু হয়েছিল বেশ আগে থেকে। এখন প্রতিবছরই অনেক খবর জানা নাই। তবে, সবার খবরই যে, পত্রিকায় ছাপা হয় তা নয়। অনেকের সাফল্যের খবর অন্যরা জানতে পারে না। আবার জাদের কথা জানা যায়, তাদের সবাই যে পরবর্তী সময়ে এগিয়ে যেতে পারে তাও সবসময় হয় না। হয় না ঐ আর্থিক কারণে। পত্রিকায় যাদের নাম ছাপা হয় তাদেরনিয়ে কাজ করছে এখন অনেক সংগঠন। এইচএসসির পড়ার খরচ এবং পরবর্তী ভর্তি পরীক্ষার খরচ দিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। ডাচবাংলা ও ব্র্যাব ব্যাংকসহ আরো কিছু ব্যাংক, প্রথম আলো ট্রাস্টসহ বেশ কিছু ট্রাস্ট এই সকল অদম্য মেধাবীদের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করেন। আর অনেকেই আছেন যারা নিরবে নিভৃতে চেষ্টা করেন, একা একা বা কয়েকজন মিলে। আমি একজন সাংবাদিককে জানি যিনি প্রতিবছর এসএসসি পাশ গরীব কিন্তু মেধাবী কয়েকজনকে নার্সিং পড়ার জন্য সহায়তা করেন। নার্সিং পড়লে সহজে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। অনেকেই নিজের দাদা-বাবার নামে বৃত্তি দেন।

অনেকটা সেরকম একটা ইচ্ছে থেকে সাইফুর আর রাজিব ২০১০ সালে চিন্তা করে দেখলো তারাও কিছু করতে পারে কিনা। তাদের চিন্তার সঙ্গে যুক্ত হল নূর খান। তারপরের গল্পটা ছোট, কিন্তু একটা উদ্যমের গল্প। তিনজনে মিলে শুরু করে সবার জন্য শিক্ষা নামের একটি প্রকল্প। হাটি হাটি করে চার বছরে পা দিয়েছে এবার সেটি।

২০১১ সালে ওরা ৯ জনের এইচএসসি+এরপর ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্ব নিল। এই ৯ জনই ছিল চ্যালেঞ্জিং অবস্থার শিক্ষার্থী। ওদের দেওয়া হল মাসের খরচ, কলেজে ভর্তির আর বই-এর খরচ। খোঁজ রাখা হল নিয়মিত। সবাই আবার খুব ভালভাবেই এইচএসসি পাস করলো। এইচএসসি পাসের আগেই ওদের আনা হল ঢাকায়। ছয়মাসধরে ঢাকায় রেখে দেওয়া হল কোচিং/মেন্টরিং সাপোর্ট। ফলাফল – ৯ জনের মধ্যে ৫ জন ভর্তি হয়েছে বুয়েট, কুয়েট, যশোর, শাবিপ্রবি ও মাওলানা ভাসানি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

10441406_846803725348495_7983266333187962183_n
২০১১ ব্যাচের রকিব ভর্তি হয়েছে বুয়েটে। তার জন্য ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ উপহার

২০১২ সারের ২৮ জনের মধ্যে ২১ জন এখন ঢাকায় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। গেল বছরের ৬৮ জনের তিনজন পলিটেকনিকে পড়ছে, বাকীরা এইচএসসি। আর গত শনিবার নির্বাচন করা হয়েছে এবারের ৯৫ জনকে।
নির্বাচনের কাজটা একটু কঠিনই। এসএসসি পরীক্ষার পর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্মী, এখনকার সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীরা মেধারী কিন্ত সুবিধার অভাবে আর পড়তে পারবে না এমন শিক্ষার্থীদের সুপারিশ করে। তারপর প্রাথমিক বাছাই শেসে সবাইকে ঢাকা এসে একটি লিখিত ও একটি ইন্টারভিউ দিতে হয়। আর এজন্য আবেদনকারী একজন অভিভাবকসহ ঢাকায় আসার সব খরচ প্রকল্প থেকে বহন করা হয়। আড়াই বছরে প্রতিটি শিক্ষার্থীর পেছনে খরচ হয় ৮৫ হাজার টাকা। সবটাই পাওয়া যায় ব্যক্তিগত অনুদান থেকে। পরিচিত ব্যক্তিরাই এই অদম্য মেধাবীদের স্পন্সর করেন। বর্তমানে প্রায় ১২৫ জন স্পন্সর এই প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত। সবাই ব্যক্তিগত পরিচয়ে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হোন।
এখন এই কার্যক্রমকে একটি ফাউন্ডেশনে রূপ দেওয়া হয়েছে। ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন। কেবল আর্তিক সুবিধার অভাবে যে স্বপ্নগুলো আকাশে ডানামেলতে পারে না, তাদের পাশেই থাকতে চায় সাইফুর, রাজিব, নূর, সোহেলসহ একঝাঁক তরুন।
শনিবার লালমাটিয়া স্কুলে ঘন্টাখানেক আমি ছিলাম। কিছুক্ষণ ইন্টারভিউ বোর্ডে আর পরে অভিভাবাক/শিক্ষার্থীদের সমাবেশে। দেখেছি একঝাঁক উদ্যমী, অদম্যদের। আর দেখেছি একদল স্প্নবাজ তরুন-তরুনীকে যারা ঘুড্ডির সুতা যেন আগেভাগে কেটে না যায তার কেয়াল রাখতে চায়।
সমাবেশে আমি সেই কথাগুলোই বরে এসেছি এখন যা আমি প্রতিনিয়ত বলেছি। বলেছি প্লেটোর প্রশ্নের উত্তরে সক্রেটিসের কথা – আলাদা করে দেশের কথা ভাবার দরকার নাই। উত্তমরূপে নিজের দায়িত্ব এাং কাজ করাইটাই সর্বোত্ম দেশপ্রেম। আর বলেছি
আমার কাছে দেশ মানে হল এক লোকের পাশে অন্য লোক। লোকদের মিলাতে পারলেই দেমের সমীকরণটা মিলে যায়।

eduaসাইফুর, রাজিব, নূর, সোহেলরা আমাদের দেশের লোকদের জোড়া লাগানোর নতুন প্রজন্ম। গার্ডিয়ান পত্রিকা যাদের কারণে ভবিষ্যৎবাণী করে যে বাংলাদেশ ২০৫০ সাল নাগাদ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশকে অতিক্রম করে যাবে।
রাজিব-নূর-সোহেল-সাইফুরদের মত আরো অনেকেই নিরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে। নিজেদের জন্য তাদের কোন চাওয়া পাওয়া নাই।
ইত্তেফাককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাইফুর বলেছে, ‘এসব মেধাবী সুযোগ পেলে অনেক উপরে উঠতে পারবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। তাই তাদের জন্য যতটুকু করা প্রয়োজন, ততটুকু করার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে সারাদিন অফিস করার পরেও এই প্রকল্পে সারারাত কাজ করতে হয়। আবার পরের দিন অফিস করতে হয়। কিন্তু এই প্রচেষ্টার ফলে মেধাবীদের মুখে সামান্য হলেও যে হাসি ফোঁটাতে পারি, সেটার জন্য সব পরিশ্রমই সার্থক মনে হয়।’

সাইফুর-রাজিব-নূর-সোহেলসহ তোমরা সবাই। তোমাদের জন্য আমার অকুণ্ঠ সালাম, অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা।

আল্লাহ তোমাদের মতো আরো অনেককে এই ব্রতে ব্রতী করুন।

 

4 Replies to “সবার জন্য শিক্ষা – সাইফুর-রাজিব-নূরের অদম্য প্রয়াস”

Leave a Reply