ই-উদ্যোক্তা হাটের উদ্যোক্তা-২ : ইশরাত জাহানের ‘তুলিকা’
উত্তরা ১২ নম্বরে ঢোকার মুখের যে মোড় সেটার নাম ময়লার মোড়!!! প্রথম শুনে আমি অবশ্য অবাক হইনি। কারণ আমাদের বড় গ্রামে একটি জায়গার নাম ময়লার ডিপো (এখন অবশ্য সুগন্ধা নামে ডাকা হয়)। খুলনার বিখ্যাত ময়লা পোতার কথাও জানি। তবে উত্তরাতে ময়লার মোড় থাকতে পারে এটা একটু কেমন জানি।
ঐ মোড়ে আমার জন্য দাড়িয়ে ছিল ইশরাত জাহান। তুলিকা নামে পাটপণ্যের একটি প্রতিস্ঠান চালায় সে। গাড়িতে করে ওর কারখানায় যেতে যেতে ওর গল্পের অনেকখানি শোনা হয়ে গেল।
ইংরেজি অনার্সের ভর্তি হয়ে কিছুদিন পরই টের পায় – না আছে আগ্রহ না উৎসাহ। সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগেনি। কুমিল্লাতে ডিগ্রীতে ভর্তি হয়ে ঢাকায় এসে একটি ফ্যাশন ডিজাইনের এক বছরের কোর্সে ভর্তি হয়ে গেল। কোর্স শেষ করে নানান কাজের ধান্ধা। চাকরিও পেয়ে গেল একটা প্রতিস্ঠানে ডিজাইনারের কাজ। এর মধ্যে পলিটিক্যাল সায়েন্সে এম এ হলো। বিয়ে হলো। শাশুড়ির ইচ্ছেই একটা বেসরকারি ব্যাংকে ঢুকে যাওয়া। বাচ্চা হলো। পৌনে তিন বছর ব্যাংকে চাকরি করে ছাড়তে হলো সেটিG কারণ সন্তানকে সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সন্তান একটু বড় হওয়ার পর এবার নিজেই কিছু করার তাড়ণা থেকে শুরু পাট পণ্য নিয়ে কাজ। ইশরাতের ধারণা পাটের বিশ্ববাজার ভাল। কাজে শুরু থেকেই তার প্ল্যান হলো কীভাবে পাটপন্য রপ্তানী করা যায়। শুরু করে তুলিকা।
“আমাদের দেশে উদ্যোক্তারা ঠিক সময়ে ঠিক তথ্যটা পায় না। কাজে ঘুরে ঘুরে ঠেক ঠেকে আমাকে সব কাজ করতে হয়েছে।” কারখানার ছোট্ট অফিস ঘরে বসে আমাকে বলছিল ইশরাত। তবে সব কাজ একা একা নিজে করাতে লাভ হলো অনেক। সবই বোঝা হয়ে গেল। এখন তুলিকার পাটপণ্য যায় – ইতালি, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, বেলজিয়াম ও সুইডেনে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজেই ডিজাইন করে। দৈনিক প্রথম আলো’তে তার উদ্যম ও উদ্যোগের কথা ছাপা হয়েছে।
করোনা এসে বিপাকে ফেলেছে ইশরাতকেও। কারণ নতুন কন্ট্রাক্ট পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মনে কারখানা চালাতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন ক্ষমতা কমে গেছে। খরচ কমানোর জন্য কারখানা আরও ভিতরের দিকে নেওয়ার কথা ভাবছে। সেই সঙ্গে দেশীয় বাজারেও কিছু পণ্য দিতে চায়।
“রপ্তানীর সময় ছাড়া আমার কারখানা প্রায়শ বসে থাকে। বছরের শুরুতে ভেবেছি দেশেও বিপনন করবো। এখন তো করোনা এসে সব ওলটপালট করে দিচ্ছে।”
আমি যেদিন কারখানায় যাই সেদিন দেখলাম সেখানে তৈরি হচ্ছে পাটের ব্যাগ একটি সরকারি প্রতিস্ঠানের। ১০ হাজার ব্যাগের চালানের ৫ হাজার ব্যাগ সরবরাহ হয়েছে। আজ কালের মধ্যে বাকী কাজগুলো হয়ে যাবে বলে ওর ধারণা।
স্থানীয় বাজারের চাহিদা এবং স্থানীয় বাজার সম্পর্কে জানার জন্য ইশরাত যোগ দিয়েছে ই-উদ্যোক্তা হাটে। অনেকেই খোঁজ খবর নিচ্ছে, যোগাযোগ হচ্ছে।
দেশে বিদেশে ইশরাতের তুলিকা ছড়িয়ে পড়ুক আমাদের গর্বের পাট নিয়ে।
তুলিকার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে তুলিকার ওয়েবসাইটে কিংবা ফেসবুক পেজে।
ইশরাত ও তুলিকার জন্য শুভ কামনা
One Reply to “ই-উদ্যোক্তা হাটের উদ্যোক্তা-২ : ইশরাত জাহানের ‘তুলিকা’”