যে অঙ্কে ‘বেকুব’ আইনস্টাইন! – সমাধান
আইনস্টাইনের বেকুবি সমস্যার সমাধানের শুরুতে আমরা বরং ভন নিউম্যানের সমস্যার সমাধান করি। সমস্যাটা ছিল এরকম –
বাংলাদেশের মতো একটি দেশে একবার একই ট্রেনলাইনে দুইটি ট্রেন মুখোমুখি ঘন্টায় ৫০ মাইল গতিতে পরস্পরের দিকে এগোতে শুরু করলো, ১০০ মাইল দূর থেকে। ওদের যাত্রার সঙ্গে সঙ্গে একটি মৌমাছি প্রথম ট্রেন ছুঁয়ে দ্বিতীয় ট্রেনের দিকে উড়তে শুরু করলো ঘন্টায় ৪০০ মাইল গতিতে। এরপর এটি দ্বিতীয় ট্রেনকে ছুঁয়ে আবার প্রথম ট্রেনের দিকে উড়ে গেল। এভাবে একবার প্রথম ট্রেন আর একবার দ্বিতীয় ট্রেন- এভাবে অসংখ্যবার উড়াউড়ি করলো মৌমাছি। শেষ পর্যন্ত ট্রেন দুইটির যখন মুখোমুখি সংঘর্ষ হলো তখন তাদের চাপে পিষ্ট হয়ে মৌমাছিটির ভবলীলা সাঙ্গ হলো। প্রশ্ন হচ্ছে, মরার আগে মৌমাছিটি মোট কতদূরত্ব অতিক্রম করেছে?
এখানে যদি আমরা মৌমাছির ওড়ার পথটি বের করি তাহলে আমরা একটা গাণিতিক ধারা দেখতে পাবো যেখানে শেষ পদটি হবে ০। এই ধারার প্রতিটি পদের মান কিন্তু কমতে থাকবে। এখন ধারার সমাধান করার জন্য আমরা অসীম ধারার পদের যোগফল বের করতে পারি। যোগফলই হবে আমাদের উত্তর।
আর একটি পথ হলো মৌমাছিটি কতোক্ষণ উড়েছে সেটি বের করা।
মৌমাছিটি কতোক্ষণ উড়েছে? যতক্ষণ ট্রেন দুইটির সংঘর্ষ হয়নি। ট্রেণ দুইটির সংঘর্ষ কতোক্ষণ পরে হয়েছে – ১ ঘন্টা পরে, কারণ ১০০ মাইল দূর থেকে ঘন্টায় ৫০ মাইল গতিতে তারা পরস্পরের দিকে এগিয়েছে। তাহলে মৌমাছি যতোই উড়াউড়ি করুক, সেটি কিন্তু ১ ঘন্টাই উড়েছে। ১ ঘন্টায় মৌমাছি কতো পথ উড়তে পারে? জানেন। সেটিই উত্তর।
সোজা না!!!
এবার আমরা আইনস্টাইনের সমস্যায় আছি। মনে করায় দেই-
একটি পাহাড়ে গাড়ি চালিয়ে ওঠা যায়। চট্টগ্রামের বাটালি হিলের মতো, আপনি গাড়ি চালিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে উঠতে পারেন। তবে, এই পাহাড়টি বাটালি হিলের মতোন নয়। কারণ এটিতে সরাসরি উপরে উঠা যায়। মোট দূরত্ব হলো ১ মাইল। নামতেও এক মাইল। একটি পুরান দিনের গাড়ি নিয়ে এই পাহাড়ে চড়তে আর নামতে হবে। গাড়িটি পুরাতন কাজে উপরে উঠার সময় সেটির সর্বোচ্চ গতিবেগ হয় ঘন্টায় ১৫ মাইল। কিন্তু নামার সময় এটি অনেক গতিতে নামতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, নামার সময় সেটির গতি কতো হলে, চড়াই-উৎরাই মিলে গাড়িটির গড় গতিবেগ হবে ঘন্টায় ৩০ মাইল।
এই সমস্যার জটিল সমাধান না করে আমরা এটি করতে পারি ব্যাকগিয়ারে। প্রথমে আমরা বের করি, উপরে ওঠা আর নিচে নামতে মোট দূরত্ব হবে ২ মাইল। প্রশ্নে বলা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত গাড়িটির গড় গতিবেগ হবে ঘন্টায় ৩০ মাইল। তো, ঘন্টায় ৩০ মাইল গতিতে চলা গাড়ির ২ মাইল যেতে কতো সময় লাগবে?
ছোটবেলার ঐকিক নিয়মে করেন-
৩০ মাইল যায় ১ ঘন্টা বা ৬০ মিনিটে
১ মাইল যায় ৬০/৩০ মিনিটে
২ মাইল যায় (৬০/৩০)*২ = ৪ মিনিটে।
তো, প্রথম অংশ হলো।
এখন আমরা বের করবো পাহাড়ের চূড়াতে উঠতে গাড়িটির কতো সময় লাগবে। এ পুরো সময় যদি গাড়িটি তার সর্বোচ্চ গতিতে চলে, তাহলে
১৫ মাইল যাবে ১ ঘন্টা বা ৬০ মিনিটে
১ মাইল যাবে ৬০/১৫= ৪ মিনিটে!!!
আরে, ৪ মিনিটেই তো আমাকে চড়াই উৎরাই দুটোই শেষ করতে হবে। এখন যদি চূড়ায় উঠতেই ৪ মিনিট লাগে, তাহলে নামবে কখন!!!
তো, হয়ে গেল। আমাদের গাড়িটি এমন কোন গতিবেগে নামতেই পারবে না, যে গতিতে নামলে গাড়ির উঠা-নামার গড় গতিবেগ ঘন্টায় ৩০ মাইল হবে! সোজা বাংলায় বললে বলতে হবে এই সমস্যার কোন সমাধান নাই।
আইনস্টাইন অবশ্য এই লাইনে যান নাই। তিনি আলাদা করে অনেক হিসাব নিকাশ করে তবেই সমাধানে পৌঁছেছেন।
অবাক হচ্ছেন?
অবাক হওয়ার কিছু নেই। শোনা গেছে, নিউটন তার পোষা কুকুর ও বিড়ালের জন্য একটি কাঠের ঘরে দুইটি দরজা দিয়েছেন। বড় দরজা দিয়ে কুকুরটা ঢুকবে, আর ছোটটা দিয়ে বিড়ালটা!!!
হ্যাপি প্রবলেম সলভিং
One Reply to “যে অঙ্কে ‘বেকুব’ আইনস্টাইন! – সমাধান”