নেই কাজ তো খই ভাঁজ-১: অ্যামাজনের ইন্টারভিউ প্রশ্ন
দুই দশক আগে আমি গোটা ক’তক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগবোর্ডে ছিলাম। অন্যান্য মেম্বাররা সব কঠিন কঠিন প্রশ্ন করতো দেখে আমি খুব সহজ সহজ প্রশ্ন করতাম। এর মধ্যে একটা শিখেছি কায়কেবাদ স্যারের কাছ থেকে।
“ইন্টারভিউ বোর্ডে আসার সময় আপনার তাড়া ছিল। তাই আপনি ঘন্টায় ৮ কিলোমিটার বেগে এসেছেন। যাবার সময় সেই তাড়া থাকবে না। যাবেন, ধরেন, ঘন্টায় ৬ কিলোমিটার বেগে। আসা যাওয়ায়, তাহলে, আপনার গড় গতিবেগ কতো?”
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেক কঠিন কঠিন প্রশ্নের পর এমন একটা সহজ প্রশ্ন পেয়ে তারা বেশ খুশী হতো।
আর একটা প্রশ্নও আমি করতাম যার দুইটা ভার্সন ছিল। কারো বাড়ি খুলনার দিকে হলে তার কাছে জানতে চাইতাম – যশোর থেকে খুলনা যাওয়ার মহাসড়কে মোট কয়টা স্পীড ব্রেকার আছে?
আর প্রার্থী ঢাকা ইউনিভার্সিটির হলে জানতে চাইতাম – নীলক্ষেত মোড় থেকে টিএসসি পর্যন্ত মোট কয়টা স্পীডব্রেকার আছে?
এমনেই করতাম আর কি। পরে দেখলাম এরকম হিজিবিজি প্রশ্ন আরও অনেকে করে। বিশেষ করে গুগল, ফেসবুক কিংবা অ্যামাজনের ইন্টারভিউ বোর্ডে নাকি এমন অনেক কিম্ভুত প্রশ্ন করে। কারণ কী আল্লাহ মালুম।
কালকে রাতে একটু আবেগতাড়িত হয়েছি, কারণ আমার আত্মজীবনীর প্রথম খন্ড তথা আত্মানুসন্ধানের প্রথম পর্ব – পড়ো পড়ো পড়ো এর পিডিএফ সবার জন্য উন্মুক্ত করেছে আমার প্রকাশক আদর্শ। পড়ো পড়ো পড়ো আসলে আমার বুয়েট জীবনের একটা অংশের স্মৃতিচারণ। তো, রাতে বিভিন্ন স্যারের কথা মনে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি মনে পড়েছে ফজলে রহমান (এস এফ রহমান) স্যারের কথা। স্যার আমরা যায় করতাম তাতেই ব্যপক খুশি হতেন। বলতেন – আপনাদের তো এমএসসি ডিগ্রীই দিয়ে দেওয়া যায়।
ফোর্থ ইয়ারে উনি আমাদের ট্রান্সমিশনএন্ড ডিস্ট্রিবিউশন (টিডি) পড়াতেন। আমি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের করোনাকালে পাওয়ার স্টেশনে থাকতে হয়, সাব-স্টেশনে ডিউটি করতে হয়। তো, আমাদের একটা কাজ হলো শহরের বাইরের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ মোটা মোটা তার দিয়ে শহরে নিয়ে আসা। আর এই আনার জন্য খুটি পুতে পুতে তার ঝুলাইতে হয়। তো, দুইটা খুটির মধ্যে আপনি যদি একটা তার ঝুলাই দেন তাহলে সেটা নিজের ভারে মাঝখানে ঝুইলা পড়ে। ইঞ্জিনিয়ারদের হিসাব করতে হয় এই ঝুলানি যেন একেবারে নিচে পইড়া না যায়, হাই ভোল্টেজ হলে যেন আকাশেই থাকে ইত্যাদি ইত্যাদি।
তো, স্যার আমাদের পড়াতেন এই হিসাব নিকাশগুলো। স্যারের কথা মনে পড়ার পর সকালে টের পেলাম গুগল ব্যাটা আমাদের চিন্তার জগতেও হানা দিচ্ছে। কারণ সকাল থেকে দেখি যে সব ইনফো আমাকে দেখাচ্ছে তার মধ্যে আছে অ্যামাজনের ইন্টারভইু বোর্ডের একটি প্রশ্ন সমানে সামনে আসে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের কেন এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে সেটা শুরুতে মাথায় আসে নি। যাহোক প্রশ্নটা আগে দেখে নেই –
দুইটা খুঁটি, প্রত্যেকটাই ভূমি থেকে ৫০ মিটার উঁচুতে। ৮০ মিটার দীর্ঘ একটা ক্যাবল দুই খুঁটির শীর্ষে বান্ধা হলো। স্বভাবতই সেটা একটু ঝুলে পড়বে। প্রশ্ন দুটো। দুটোতেই খুঁটি দুইটির মধ্যবর্তী দূরত্ব বের করতে হবে, যদি
ক. তারটির মধ্যবিন্দু ভূমি থকে ২০ মিটার উপরে থাকে,
খ. তারটির মধ্যবিন্দু ভূমি থকে ১০ মিটার উপরে থাকে।
নানাভাবে এটির সমাধান করা যায়। সমাধান দেখে ফেলার আগে বরং নিজেরা চেষ্টা করে নিন। তারপর সমাধান অংশটা দেখতে পারেন।
আমরা জানি কার বই থেকে এটা করতাম, ভুলে গেছি। একটা পেপার আছে দেখলাম খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা করেছে এই ধরণের সমস্যা সমাধানের পথ।
আর ইউটিউবের ম্যাথ চ্যানেল মাইন্ড ইয়োর ডিসিশনেও এর একটি সমাধান পাওয়া যাবে।
এই ভিডিওটা শেষ পর্যন্ত দেখার পরই কেবল বোঝা যাবে এই প্রশ্ন কেন অ্যামাজনের লোকেরা ইন্টারভিউবোর্ডে করে। এর আগে যে প্রশ্নে বেকুব আইনস্টাইনেও এমন একটা বিষয় আমরা খেয়াল করেছি।
হ্যাপি প্রবলেম সলভিং