গ্রোথ হ্যাকিং এবং “ডায়াপার এন্ড দ্যা বিয়ার”
বিগডেটা কিংবা ডেটা এনালিটিক্সের ক্লাশে বা বই-এ এই গল্প হয়তো অনেকে শুনেছেন। আমি নিজেও এটি হরহামেশা বলি। ডেটার শক্তি বোঝানোর জন্য এই গল্পটা বলা হয়। এটির সংক্ষিপ্ত শিরোনাম “ডায়াপার এন্ড বিয়ার”।
যারা জানেন না তাদের মনে হতে পারে এটা কীভাবে হতে পারে। ডায়াপার হলো বাচ্চাদের আর বিয়ার পান করে বড়োরা। তার মানে কী ডায়াপার পরা বাচ্চার বিয়ার খাওয়ার কথা বলা হচ্ছে? কেউ কেউ বলতে পারেন আরে এডাল্ট ডায়াপারের কথা বলা হচ্ছে। জোক এপার্ট। এই গল্পটি ওয়ালমার্টের সঙ্গে সম্পর্কিত।
কোন এক সময় ওয়ালমার্টের কোন এক স্টোরে একজন কম্পিউটার সায়েন্সের গ্রাজুয়েটকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সে বেচারা বিকিকিনিতে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না। কাজে সে প্রতিদিনকার সেলস ডেটা নিয়ে বড় প্রজেকশন স্ত্রিনে তাকিয়ে থাকে। এ করতে গিয়ে সে একটি মজার জিনিষ আবিস্কার করলো।
দেখা গেল প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে বিয়ার যেমন বেশি বিক্রি হয় তেমনি বেশি বিক্রি হয় ডায়াপার। যেহেতু দুইটি পরস্পর অসম্পর্কযুক্ত, কাজে সে কোন কিনারা করতে পারলো না। ভাবলো নিজেই তাহলে একটু প্রাইমারি ডেটা যোগাড় করা যাক।
যে ভাবা সে কাজ। প্রথমে সে সপ্তাহ জুড়ে লক্ষ করলো কারা বাচ্চাদের জিনিষপত্র কেনে। দেখা গেল মায়েরা সবকিছু কিনলেও ডায়াপার কেনে কম। ডায়াপারের প্যাকেট হাতে নিয়ে দেখলো এটির ওজন অন্যান্য সামগ্রীর তুলনায় একটু বেশিই বটে। তারপর শুক্রবারে যে সকল ক্রেতা বিয়ার আর ডায়াপার কিনে তাদের সঙ্গে আলাপ করে তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেল।
জানা গেল, শুক্রবার অনেক বাবা তার উইকএন্ডের রসদ বিয়ার কেনার জন্য ওয়ালমার্টে আসার সময় বাড়ি থেকে বউ-এর ফোন পায় ”হানি, বাবুর জন্য ডায়াপার নিয়ে এসো”। এবং তারা সেটি করতে চায়। কিন্তু, স্টোরে বিয়ার যে দিকে থাকে তার আশে পাশে কিন্তু বাচ্চাদের সামগ্রী থাকে না। প্রায়শ এটি থাকে একই ফ্লোরের অন্যদিকে বা অন্য ফ্লোরে!
সিএস ব্যাটা এবার একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইলো কারণ তার প্রত্যয় হলো যদি শুক্রবার বিকেলের পর থেকে ডায়াপারের রেক গুলো বিয়ারের আশেপাশে রাখা যায় তাহলে ডায়াপার এবং বিয়ার দুটোরই বিক্রি বাড়বে। স্টোর ম্যানেজারকে রাজি করিয়ে সে পরের শুক্রবার ডায়াপারের রেকগুলোকে বিয়ারের আশেপাশে সেট করে দিল।
রেজাল্ট?
কথিত আছে যে ঐদিন ডায়াপারের বিক্রি অন্য শুক্রবারের চেয়ে ৩০০% বেশি এবং বিয়ারের বিক্রিও অনেক বেশি ছিল।
মোরাল অব দ্যা স্টোরি কী?
যদি তুমি তোমার ডেটার দিকে তাকাও তাহলে তুমি অনেক আনটোল্ড স্টোরি দেখতে পারবে। তারপর যদি একটা হাইপোথিসিস দাড় করাতে পারো তাহলে তুমি সেটা এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে পারো। আর এক্সপেরিমেন্ট থেকে তুমি তোমার কার্যক্রম (মার্কেটিং/সেলস)-এ প্রয়োজনীয় স্টেপ নিতে পারবে।
সব এক্সপেরিমেন্ট কিন্তু একবারেই সফল হয় না। কিন্তু গ্রোথ হ্যাকার মার্কেটারটা হলো আমার মতো কাছিম যারা দিনের পর দিন এক্সপেরিমেন্ট করতে থাকে, একটা দুইটা ভ্যারিয়েবল চেঞ্জ করে। অন্যান্য মার্কেটারদের সঙ্গে গ্রোথ হ্যাকারদের পার্থক্য এখানেই। তারা নিরলসভাবে ডেটা খুঁজে বেড়ায় এাং সে ডেটার ভিত্তিতে সিদ্ভন্ত নেয়।
এবার নিজেদের একটা উদাহরণ দেই। রকমারিতে একজন লেখকের ২০২১ সালের পাঁচমাসের বই বিক্রির একটা হিসাবের চার্ট এখানে দিলাম।
চার্টের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যাক
- জানুয়ারি মাসে বলতে গেলে তেমন কোন বিক্রি হয়নি,
- ফেব্রুয়ারি মাসে বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে
- মার্চ ও এপ্রিলে এটি বেড়ে এপ্রিলে সর্বোচ্চ হয়ে মে মাসে আবার কমে গেছে
যারা দেশের বই বিপনন সম্পর্কে ধারণা রাখেন তাদের পক্ষে এটি ব্যাখ্যা করা সহজ। কারণ্ :-
- এ বছর ফো্রুয়ারি মাস জুড়ে রকমারি বই মেলা হয়েছে
- মার্চ মাসের ১৮ তারিখ থেকে এপ্রিলের ১২ তারিখ পর্যন্ত একুশের বই মেলা হয়েছে
- মার্চ মাসের ১৮ তারিখে লেখকের একটা নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে
- ৫ মাসে বিক্রিত বই-এর মধ্যে নতুন বই-এর বিক্রি ৩২%।
- মে মাসেও বিক্রির ট্রেন্ড খারাপ নয়।
এই চার্ট থেকে মার্কেটাররা অনেক তথ্যই দেখতে পাবেন। আমি আর সেগুলোতে যাচ্ছি না। আশাকরি নিজেরাই বের করে নিতে পারবেন। তবে, আমি শুধু জানিয়ে রাখছি এই বিক্রি কিন্তু কেবল অর্গানিক্যালি হয়নি। এখানে গ্রোথ হ্যাকিং-এরও একটি সংশ্রব আছে যার কারণে অন্যান্য লেখকের তুলনায় এই লেখকের মে মাসের বিক্রি মোটেই কম নয়।
অনেককেই আমি বলতে শুনি, “ডেটা তো নাই, কী করবো।” তাদেরকে আমি বলি নিজের ডেটা সেট নিজেই তৈরি করেন। এটি একদিনে হয় না। ওপরে বই বিক্রির চার্টটা দেখুন। এটা প্রতিদিনের ডেটার হিসেব রেখে তবেই পাওয়া গেছে। যারা কোন কিছু বিক্রি করেন তাদের জন্য ডেটা যোগাড় তো দুধভাত। চাইলেই সোনার খনির সন্ধান পেয়ে যাবেন।
হ্যাপি গ্রোথ হ্যাকিং