
ডেলিভারিং হ্যাপিনেস – দ্বিতীয় খন্ড- পর্ব ৩: মজুত নিয়ে খেলাধুলা
ডেলিভারিং হ্যাপিনেস – দ্বিতীয় খন্ড- পর্ব ২: বিশ্বাসে মিলায়…

ব্র্যান্ডগুলোকে ফ্রেড ফোন করতে শুরু করলো। আমরা আমাদের রিসেপশনকে একটা মিনি স্টোরে পরিণত করলাম। ভাবা যায়! একটা বড় মুভি থিয়েটারে ঢোকার সময় লোকে দেখে ঢোকার মুখেই একটা জুতার দোকান হচ্ছে। সবাই আমাদের পাগল ভেবেছে!
কিন্তু সেটা বড় কথা নয়। যখনই আমরা আমাদের প্রথম চালান হাতে পেলাম, সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বিক্রি আকাশছুঁতে শুরু করলো। ফ্রেড নতুন নতুন ব্র্যান্ড ম্যানেজ করতে শুরু করলো আর আমাদেরও জায়গা কমতে শুরু করলো। কয়েকমাসের মধ্যে আমাদের স্টোরে প্রায় পাঁচ হাজার জোড়া জুতার মজুত হয়ে গেল।
আমাদের অফিস থেকে আড়াই ঘন্টার দূরত্বে উইলো নামে একটি ছোট শহর আছে। ফ্রেড সেখানে একটা ছোট জুতার দোকানের খোঁজ পেল যার মালিক সেটি ছেড়ে দিতে চায়। আমরা সামান্য টাকা দিয়ে সেটা কিনে নিলাম।ধুম করে আমাদের ব্র্যান্ড একসেস অনেক বেড়ে গেল। আমাদের ওয়েবসাইটে হিটও অনেক বেড়ে গেল।
ভাগ্য সহায় হলে নানাদিকেই হয়। দেখা গেল, ঐ দোকানের উল্টোদিকেই একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর পাততাড়ি গুটিয়েছে। আমরা দেখলাম ওখানে ৫০ হাজার জোড়া জুতা রাখা যাবে। কাজে আমরা ঐটা ভাড়া নিয়ে নিলাম। আমাদের মজুতদারদের সেখানে পাঠালাম এবং নতুন লোক হায়ার করতে শুরু করলাম মজুত ব্যবস্থাপনার জন্য।

ফ্রেডের ধারণাই ঠিক। আমাদের বিক্রি তিন গুণের চেয়ে বেশি বেড়েছে। ২০০০ সালে আমাদের বিক্রি ছিল ১.৬ মিলিয়ন ডলার। ২০০১ এ সেটা হল মাত্র ৮.১ মিলিয়ন ডলার। এসবই আমাদের সবার ধারণাকে ছাড়িয়ে গেছে। আমরা সবাই নতুন ও পুরাতনের মিশ্রনের এই বিজনেস মডেলের সুফল পেতে শুরু করলাম।

আমাদের বিক্রি বাড়লেও ক্যাশ-ফ্লো কিন্তু ঋণাত্মকই রয়ে গেল। কারণ আমাদের বাড়তি মজুতের জন্য আমাদের ম্যালা টাকা বের হয় যাচ্ছে।
২০০২ সালে ই-লজিস্টিকস নামে একটি লজিস্টিক কোম্পানি আমাদের এপ্রোচ করে। সেলম্যানটা আমাদের বোঝালো কেন্টাকিতে ওদের একটা বড়ো গুদাম আছে। এটি ইউপিএসের একটি পিকআপ সেন্টারের সঙ্গে লাগোয়া। সেলসম্যান ব্যাটা আমাদের বোঝালো তারাই আমাদের মজুত হ্যান্ডেল করতে পারবে। আমাদের তখন ইনভেন্টরি নিজেদের ম্যানেজ করতে হবে না।
তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এর ফলে আমরা একটু সুবিধাজনক জায়গাতে চলে যেতে পারবো। কারণ এখন আমরা ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সব শিপিং করি। এমনকি মাত-আট দিনও লেগে যায় কোথাও কোথাও জুতা পৌঁছাতে। কেন্টাকির মতো মাঝামাঝি জায়গাতে যদি যাই, তাহলে হয়তো আমাদের ৭০% গ্রাহককে আমরা ইউপিএসের মাধ্যমে ২ দিনের মধ্যে ডেলিভারি দিতে পারবো। একটা উইন উইন সিচুয়েশন বলা যায়। কাস্টোমারের জন্য এবং আমাদের জন্য। কারণ ফাস্টার ডেলিভারি কাস্টোমারকে খুশি করবে।
আমরা ইসজিস্টিকের সঙ্গে চুক্তি করে ফেললাম। অনেক সতর্কতার সঙ্গে সবকিছু প্ল্যান করতে হলো। আমরা প্ল্যান করলাম আমাদের সব মজুত শুক্রবার বিকালের মধ্যে ট্রাকে তুলে রওনা করিয়ে দিবো। কিন্তু ওয়েবসাইট বন্ধ করবো না। ট্রাকগুলির কেন্টাকিতে পৌঁছাতে তিনদিন লাগবে। তারমানে রোববারে পৌঁছাবে। সোমবার সারাদিনে যদি আনলোড করা যায় তাহলে মঙ্গলবার থেকে আমরা আবার শিপিং করতে পারবো।
আমরা খুবই চমৎকার কাজ করলাম। শুক্রবার বিকেল ৫টার সময় শেষ ট্রাকটা রওনা করানো গেল। আমি আর ফ্রেড খুশি হলাম কারণ আমাদের কয়েকজনের একটা শর্ট ভ্যাকেশনে যাওয়ার কথা। আমরা গেলাম নিউ অর্লিন্সে। ছুটিতে থাকতেই আমি ফোনকলটা পেলাম। ই-লজিস্টিক থেকে ফোন- “টনি, আমাদের কাছে একটা দু:সংবাদ আছে। একটা ট্রাক রাস্তায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। ড্রাইভার বেঁচে গেছে এবং এখন হাসপাতালে। কিন্তু জুতাগুলো সব এমনভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে আর নষ্ট হয়েছ যে আমাদের মনে হচ্ছে ওখান থেকে এক জোড়াও উদ্ধার করা সম্ভব হবে না”।
খুবই খারাপ হলো ব্যাপারটা। আমারা আমাদের মজুতের ২০% হারালাম। খুচরা বাজারে কমবেশি পাচ লক্ষ ডলারের মামলা। শুধু তাই নয়। আমাদের ওয়েব অর্ডার চালু। কাজে যারা এই জুতাগুলো কিনেছে তাদেরকেও আমাদের এই দু:খের কথা বলে বলতে হবে। এই মুহুর্তে জুতা সরবরাহের অপারগতার কথাও জানাতে হবে।
এরপর আমি আর ফ্রেড লম্বা লম্বা সময় ফোনে থেকে সব সামলানোর চেষ্টা করলাম। অনেক কাস্টোমারই আমাদের কথা বিশ্বস করেনি। অনেকেই আমাদের বেটার বিজনেস ব্যুরোতে নালিশ করার ভয়ও দেখিয়েছে। যাহোক, শেষ পর্যন্ত আমরা সামাল দিতে সক্ষম হলাম।

মিনি ভ্যাকেশন শেষে আমি আমার পরবর্তী ছুটির কথা ভেবেছি। হবে কি হবে না। ২০০১ সালের শুরুতে আমি আর আমার বন্ধু জেন মিলে ৩ সপ্তাহের ছুটিতে আফ্রিকা যাওয়ার এবং সেখানকার সবচেয়ে উঁচু পাহাগ কিলিমানজারোতে হাইকিং-এর প্ল্যান করেছি। কথা ছিল আমরা ২০০১ সালের অক্টোবরে যাবো। কিন্তু ৯/১১ এর ঘটনায় আমরা সেটিকে পরের বছর জুলাইতে শিফট করি। জেনের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় আমার জন্মদিনের পার্টিতে, আমার সেই ভাড়া করা লফটে। এই ভ্যাকেশনে যাবো কি যাবো না এটা ভেবে আমি যাবারই পক্ষে থাকলাম।
এর মধ্যে জাপ্পোসের দিনগুলো কঠিন হয়ে গেল। কারণ ই-লজিস্টিকওয়ালারা ঠিকমতো সব সামাল দিতে পারছে না। তারা একদিকে যেমন জুতা পাঠাতে পারছে না তেমনি নতুন জুতাও আমাদের ইনভন্টটরিতেও যোগ করতে অসমর্থ হচ্ছে। ফলে, সেই আইটেমগুলো আমরা বিক্রি করতে পারছি না। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কীথ নামে আমাদের এক ট্রাবল শ্যুটারকে আমরা এক বস্ত্রে কেন্টাকি পাঠিয়ে দিলাম।
এর মধ্যে আমার পারটি লফট বিক্রির তেমন কিছু আগালো না। কেনটাকিতে জাপ্পোসের ঝামেলার জন্য আমি নিজেকে দায়ী করতে শুরু করলাম কারণ কেন্টাকিতে মুভ করার সিদ্ধান্তটা আমিই চাপিয়েছি। এদিকে আমার পার্টি লফট বিক্রিরও তেমন কিছু হয়নি। একবার ভাবলাম আমি না হয় আমার আফ্রিকা ট্রিপ বাদ দেই। কিন্তু পরক্ষণে মনে হল আমার শারিরীক উপস্থিতি পরিস্থিতির তেমন কিছু উন্নতি করবে না। আমি বাবাকে পার্টি লফট বিক্রির সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে বললাম মিনিমাম একটা টাকা পাইলেই সেটা বিক্রি করে দিতে। আর ফ্রেডকে বললাম আমাকে যেন ই-মেইলে জানায়।
পাহাড় থেকে নেমে আমি হয়তো ই-মেইল পড়তে পারবো। এসব নিয়ে যখন আমি ই-মেইল চালাচালি করছি তখন আমার হঠাৎ খেয়াল হলো কয়েক ঘন্টা পরেই আমার আফ্রিকার ফ্লাইট।
পরের পর্ব – কিলিমানজারোর তুষার
[জাপ্পোসের সিইও টনি সেই-এর বিখ্যাত বই ও দর্শন সুখ বিতরণের কিছু অংশ আমি অনুবাদ করছি আমার মত করে, আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্য। এটি আক্ষরিক অনুবাদ নয়]
One Reply to “ডেলিভারিং হ্যাপিনেস – দ্বিতীয় খন্ড- পর্ব ৩: মজুত নিয়ে খেলাধুলা”