ডেলিভারিং হ্যাপিনেস – দ্বিতীয় খন্ড- পর্ব ১: যোগ্যরাই টিকে থাকে…
ডেলিভারিং হ্যাপিনেস-২৩ : আয়েস করে আলসেমিতে
পরের দুই বছর ছিল জাপ্পোসের জন্য খুবই যন্ত্রণাময়। বেঁচ থাকাতেই আমরা আমাদের সবকিছুকে কেন্দ্রীভূত করি। আমরা জানতাম এছাড়া আমাদের আর কোন উপায়ও নাই। অর্থনৈতিক মন্দা, ডট-কম শেয়ার মার্কেট ক্র্যাশ আর নয়-এগারো – এই তিন আমাদের অবস্থা করে ফেলে কেরোসিন। পদে পদে মনে হয়েছে পুরো দুনিয়া মনে হয় আমাদের অঙ্গীকারের পরীক্ষায় নেমেছে।
আমরা টের পেলাম আমাদের পক্ষে কোন এক্সটার্নাল ফান্ডিং যোগাড় করা সম্ভব হবে না। ভেঞ্চার ফ্রগে আমাদের নীতির বিরদ্ধে গিয়ে আমরা জাপ্পোসে আরও বিনিয়োগ করলাম। নীতি বিরুদ্ধ কারণ ততোদিনে আমি নিজে জাপ্পোসে পূর্ণকালিন কাজ করছি। আলপ্রেড আর আমি ফ্রগ ভেঞ্চার থেকে আরও কিছু টাকা এখানে ঢাললাম। কিন্তু সেটাও শেষ হয়ে গেল। সব ফান্ড যখন শেষ হয়ে যাচ্ছে, তখন আমি আমার একাউন্টের দিকে তাকানো শুরু করলাম।আমার একাউন্ট থেকে জাপ্পোসে টাকা এনে পতন ঠেকানো শুরু করলাম।
এর মধ্যে আমি এবং আলফ্রেড যথারীতি সিকুইয়ার পেছন পেছন ঘুরলাম। কিন্তু কোন লাভ হলো না। বাধ্য হয়ে ২০০০ সালের অক্টোবরে আমি সব জাপ্পসো কর্মীকে একটা ই-মেইল লিখলাম।
সেখানে আমি অবস্থার বর্ণণা দিয়ে জানালাম পরবর্তী ৯ মাস হবে আমাদের জন্য সবচেয়ে জরুরী, জীবন-মৃত্যুর ব্যাপার। যেহেতু আমাদের হাতে বেশি টেকা-টুকা নাই কাজে আমাদের খরচ কমাতে হবে। সকল বাহুল্য বাদ দিতে হবে এবং সবাইকে কম বেতনে কিংবা বিনা বেতনে কাজ করতে হবে যদি আমরা মনে করি আমরা জাপ্পোসকে টিকিয়ে রাখতে পারবো। পাশাপাশি বরলাম ভেঞ্জার ফান্ডরা এখন বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত। এর একটা ভাল দিক হলো হঠাৎ করে (ই-ভ্যালির মতো) কেউ এসে আমাদের বাজারে বিশাল মার্কেটিং বাজেট নিয়ে খেলতে পারে না। আবার আমরা অনেক কিছু করতে পারবো না।
ই-মেইলের প্রতিক্রিয়া ভাল-মন্দ দুই তরফে হলো। অনেক কর্মীর কোন সঞ্চয় ছিল না, কাজে তারা আমাদের ছেড়ে যেতে শুরু করলো। আবার কেউ কেউ নিজে থেকে ২০% বেতন কমানোর কথাও বললো। আমার নিজের বেতন ঠিক করা হলো বছরে ২৪ ডলার! নিক বললো তার ঘর ভাড়া আর খাওয়ার বন্দোবস্ত হলেই ওর চলবে। আমরা বুঝলাম থাকার বন্দোবস্ত করতে পারলে কাউকে কাউকে ধরে রাখা যাবে।
পার্টি করার জন্য আমি যে এক রুমের বিশাল এপার্টমেন্টা কিনেছি, সেটাতে তেমন কিছু হচ্ছিল না। কাজে এখানে ৫টা বিছানা পেতে সেখানে কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করলাম। এরকম আরও তিনটা লফট আমার ছিল। সেখানে আমি ইনকিউবেটরের অন্যান্য কোম্পানি ও জাপ্পোসের লোকজন, নিক সহ, থাকার ব্যবস্থা করলাম। বিনা ভাড়ায়। এই লে-অফের মাধ্যমে আমরা অনেক বাহুল্য ছেটে ফেলতে পেরেছি। বিশেষ করে, তারাই চরে গেছে যাদের জাপ্পোসের ওপর বিশ্বাস নেই।
প্রত্যকেই এগিয়ে আসলো, কঠিন পরিশ্রম করতে শুরু করলো। কিন্তু আমরা বুঝলাম এতেও আমরা লাভের মুখ দেখবো না। কয়েকমাস পরপর আমি আমার নিজের একাউন্ট থেকে টাকা নিয়ে আসি জাপ্পোসে। আর টের পাই, স্রোতের মতো টাকা বের হয়ে যাচ্ছে। টাকার যোগান দেওয়ার জন্য আমি আমার বিভিন্ন রিয়্যাল স্টে বেচা শুরু করলাম এবং অচিরে নিজের এপার্টমেন্ট আর পার্টি লফট ছাড়া সবই বেচে ফেললাম। আমি পার্ট লফটটাও বেচতে চাই, কিন্তু মন্দার কারনে খদ্দের পেলাম না।
মড়ার উপর খাড়ার ঘাহয়ে আসলো আমার রেস্তোরা ব্যবসা যা আমার বাবা-মা চালাতেন। সেটিও ঠিকমতো চলছে না। মন্দার সঙ্গে সেখানে যুক্ত হয়েছে রোস্তরা ব্যবসা সম্পর্ক আমাদের অনভিজ্ঞতা। তারমানে আমি, জাপ্পসো, ফ্রগ ভেঞ্জার, রেস্তোরা সর্বত্রই আমার খারাপ দিন যাচ্ছে। আমি মনে মনে কেবল একটা ব্যাকআপের চিন্তা করেছি সেটা হলো দিনকাল ভাল হলে আমি পার্ট লফটটা বেচে টাকাটা জাপ্পোসে লাগাতে পারবো। তবে, সেটা কখন হবে তা আল্লাহ মালুম।
আমি, নিক আর ফ্রেড মিলে খুঁজতে শুরু করলাম কোথায় কোথায় খরচ কমানো যায়। যদিও ব্যবসার ক্ষতি হবে, তারপরও আমরা আমাদের মার্কেটিং একটিভিটি বন্ধ করে দিয়ে কেবল পুরাতন কাস্টোমারদের প্রতি নজর দিতে শুরু করলাম। পরে যখন এই ঘটনার দিকে তাকাই তখন আমি টের পাই এটি আসলে আমাদের জন্য একটি আশির্বাদই। ২০০৩ সালে আমরা কোম্পানিতে কাস্টোমার সার্ভিসকে মূখ্য হিসাবে গ্রহণ করি।
তবে, সেই যাই হোক। তখন কিন্তু আমাদের এসব ভাবার সময় ছিল না। কারণ বেঁচে থাকাটাই ছিল আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। আর এই বেঁচে থাকার সংগ্রাম আর বিভিন্ন জিনিষ ঠিক করা আমাদের সবাইকে খুবই কাছাকাছি নিয়ে আসে। আমরা সবাই ক্রমশ একাত্ম হতে থাকি কারণ আমরা সবাই চাই জাপ্পোস টিকে যাক। ফলে, সেই সময় আমরা যা কিছু করেছি, ভয়-হীন চিত্তে সবাই মিরে করেছি, একাট্টা হয়েই করেছি। আমরা সবাই আমাদের ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে জ্বলাঞ্জলি দিয়েছি।
এর মধ্যে আমি টেরই পাইনি কখন জাপ্পোস আমার নতুন সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছে।
পরের পর্ব – বিশ্বাসে মিলায়…
[জাপ্পোসের সিইও টনি সেই-এর বিখ্যাত বই ও দর্শন সুখ বিতরণের কিছু অংশ আমি অনুবাদ করছি আমার মত করে, আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্য। এটি আক্ষরিক অনুবাদ নয়]
One Reply to “ডেলিভারিং হ্যাপিনেস – দ্বিতীয় খন্ড- পর্ব ১: যোগ্যরাই টিকে থাকে…”